পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নেট দুনিয়ায় গতকাল সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন জাতীয় পার্টির গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তার বক্তব্যের ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে; লাইক-ভিউ-মতামত হাজার হাজার। জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনে দেয়া তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার সবখানেই আলোচনা হচ্ছে। সর্বোত্রই তার বক্তব্য আলোচনা-প্রশংসা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, একি শোনালেন তরুণ নেতা! এটাই দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের উচ্চারণ। দেশের সার্বিক চিত্র জাপার এই এমপির বক্তব্য উঠে এসেছে। নেটিজেনদের প্রায় সবাই শামীম হায়দার পাটোয়ারীর প্রশংসা করছেন। বলা যায় প্রশংসায় ভাসছেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। জাতীয় সংসদে দেয়া পাটোয়ারীর বক্তব্যের কিছু চুম্বক কথা ইনকিলাবের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর মূলত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে সম্প্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের তর্কযুদ্ধ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
তিনি বিশ্ব রাজনীতির অতীতের অনেক ঘটনা তুলে ধরে এবং কোনো দেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি হলে সে দেশের কি পরিণতি ভোগ করতে হয় সে চিত্র তুলে ধরেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল বক্তব্য লাখ লাখ মানুষ শুনে প্রশংসা করছেন। শামীম হায়দার পাটোয়ারী মূলত দেশের বর্তমান সমস্যাগুলো সমাধান এবং সঙ্কট থেকে উত্তোরণে রাজনৈতিকভাবে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শামীম পাটেয়ারী বক্তব্যে এককালে পৃথিবীর চতুর্থ অর্থনীতির দেশ ভেনিজুয়েলার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি প্রতিবেশী দেশ ভারতে জাতীয় স্বার্থে সরকারি ও বিরোধী দলের ঐকমত্যের প্রসঙ্গগুলোও তুলে ধরেন। জাতীয় স্বার্থে সরকারের পাশাপাশি তিনি বিরোধী দলের ভূমিকার ওপরও গুরুত্ব দেন। উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করলে দেশের কী পরিণতি হয় সে চিত্র তুলে ধরেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চোখ রাখলে এবং ভিডিওর নিচের মতামত দেখলে বোঝা যায় তাঁর বক্তব্যের প্রসঙ্গ ও যুক্তিগুলোকে দেশের মানুষ সানন্দে গ্রহণ করেছেন।
গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী বলেন, আমরা এখন সঙ্কটে আছি এতে কোনো সন্দেহ নেই। যতই আমরা হম্বি-তম্বি করি না কেন, যতই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের দেশের অর্থনীতির তুলনা করি না কেন, গুমের সঙ্গে তুলনা করি না কেন? তথাকথিত লবিস্ট তত্ত্ব কিংবা পিআর নিয়ে আলোচনা করি না কেন, এতে দেশের বর্তমান সমস্যার সমাধান আসবে না। সমস্যাটির সমাধান করার জন্য অবশ্যই আমাদের জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। নিধেষাজ্ঞা নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র সঙ্কট থাকতো না। যদি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকতো। এখন বাংলাদেশের র্যাবের ওপর নিধেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ’৭১ সালে তো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। ’৭৫ সালে তো কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। এখন কেন দেয়া হচ্ছে?
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বক্তৃতায় গুরুত্বারোপ করেছেন রাজনৈতিক দেশের ঐক্যমতের ওপর। তিনি বলেন, আমরা এখন সঙ্কটে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। সমস্যাটির সমাধান করার জন্য অবশ্যই আমাদের জাতীয় ঐকমত্য লাগবে। অথচ আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই। জাতীয় ঐক্য থাকলে এমন সঙ্কট হতো না। ভুলে গেলে হবে না, ভেনিজুয়েলা একটা সময় পৃথিবীর চতুর্থ বড় অর্থনীতির দেশ ছিল। তাদের মাথাপিছু আয় ছিল বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ। আজকে সেখানে ৯৭ ভাগ মানুষ দরিদ্র। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে।
শামীম হায়দার তার বক্তব্যে আরো বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে যখন জেনেভায় ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা চলছিল, তখন বিরোধী দলীয় নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীকে পাঠিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও। এজন্যই ভারত এখনো টিকে আছে। ১৯৬৫ সালে যখন (পাকিস্তানের সঙ্গে) যুদ্ধ হলো; তখন যুক্তরাষ্ট্র বলল, যুদ্ধবিরতি না করলে খাদ্যশস্য দেব না ভারতকে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী তার জনগণকে বললেন, আমরা যদি সবাই সপ্তাহে একবেলা খাদ্য কম খাই, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য সহায়তা লাগবে না। তাদের সেই ঐক্যের ডাকে সবাই সাড়া দিয়েছিল। আজকে ভুলে গেলে হবে না শ্রীলংকায় কি হয়েছে, ইরাকে কি হয়েছে, মায়ানমারে কি হয়েছে, নেপালের কি হয়েছে সবাই জানেন। শ্রীলংকা দেউলিয়া হওয়ার পথে। শ্রীলংকায় পারিবারিক একনায়কতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল। শ্রীলংকা এক সময় মেগা প্রকল্পের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। সেই শ্রীলংকা দেউলিয়া হয়ে গেছে। কারণ তারা অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রজেক্ট করেছে। হঠাৎ করে তারা অর্গানিক খাবারে চলে গেছে। মাত্র ২৬ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন করেছে। সেখানে এক নায়কতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল। সকল ক্ষমতা একজনের হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা বাংলাদেশের মতোন থাকতে চাই। আমি কয়েকটি প্রস্তাব দিচ্ছি। বৈদেশিক নীতি গ্রহণে সকলকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিণতি সবাই জানে। এখন যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে গার্মেন্টস ব্যবসার কী হবে। সউদী আরব যদি নিষেধাজ্ঞা দেয় তাহলে রেমিট্যান্সের কী হবে। যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা দিলে গোটা অর্থনীতি কোন পথে যাবে? তখন বাংলাদেশ তো উলাসবাটোরের মতো হয়ে যাবে। এখনই উচিত জাপানের সঙ্গে আলোচনা করা, ভারতে সঙ্গে আলোচনা করা, ইইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের অনেক দিনের বন্ধু। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা। এটা করতে হলে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ঐক্য প্রয়োজন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলতে গেলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সরকারি দলের এখানে মূখ্য দায়িত্ব। পাশাপাশি বিরোধী দলের দায়িত্ব রয়েছে। দেশের স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোনো বিভেদ আমরা চাচ্ছি না। আমাদের রাষ্ট্রীয় ঐক্যমত প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে ঐকমত্যের ডাকে সবাই সাড়া দেবে না, এটাই রাজনৈতিক বাস্তবতা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে ফ্যাসাদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, লবিস্ট ও পিআর নিয়োগ নিয়ে যেসব বক্তব্য আসছে তা দুঃখজনক। রাষ্ট্রীয় অহমিকা আর অর্বাচীনের মতো কথামালা চাই না। খুব দুঃখের সঙ্গে বলব এই বিশাল অত্যাসন্ন এবং অবশ্যম্ভাবী সঙ্কটে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের কেউ কেউ আমার ব্যক্তিগত মতে অর্বাচীন ও বালখিল্যসুলভ আচরণ করছেন। লবিস্ট ও পিআর নিয়ে যা বলেছেন তা সত্যিই হাস্যকর। পিআর-লবিস্ট আলোচনা নিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। অবশ্যই আমরা এই ব্যাপারে প্রফেশনালিজম চাই। রাষ্ট্রীয় নির্বুদ্ধিতা, রাষ্ট্রীয় অহমিকা চাই না। বাহাদুর শাহ’র শাসনামলে যখন ভারত আক্রমন হলো। তিনি পরাজিত হওয়ার পথে। তখন অনেকেই তাকে বলতে লাগলেন আপনি পালাচ্ছেন না কেন? তখন তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন, দেশের জনগণের কেউ এখনো আমার গলায় জুতার মালা দেয়নি; পালাই কী করে? মোহাম্মদ ঘুরি প্রথম ভারত আক্রমণ করে সুবিধা করতে পারেননি। দ্বিতীয় বার তিনি যখন ভারত আক্রামণ করেন তখন চারজন রাজপুত্র তাকে সহায়তা করেছে। তার জয়ের মাধ্যমে ভারতে মুসলিম শাসন কায়েম হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করেছি। অথচ দীর্ঘ ১৩ বছরে দেশের বড় তিন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা এক চেয়ারে বসে চা খায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।