Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তড়িঘড়ি বিল পরিশোধ ইফা’র

১৪ কোটি টাকার নিম্নমানের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ তদন্ত কমিটির দৌড়ঝাঁপ শুরু দুর্নীতিবাজরা বহাল তবিয়তে

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের শিশুদের জন্য নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ এবং বিভিন্ন জেলায় মালামাল সরবরাহ ছাড়াই তড়িঘড়ি করে কোটি কোটি টাকার বিল পরিশোধের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও ধর্ম সচিবের নির্দেশে উল্লেখিত বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি ইফার সংশ্লিষ্ট জেলার কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণকালে এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বেশকিছু প্রমাণাদি পেয়ে বিস্মিত হয়েছে।

ইফার অভিযুক্ত কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাদের অনেকেই প্রায় অর্ধযুগ ধরে উক্ত পদে কর্মরত আছেন। ইফার সাবেক মহাপরিচালক সামীম মো. আফজালের সময় এসব কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট পদে পদায়ন করা হয়। বর্তমানে তদন্ত চলাকালীন তাদের স্বপদে বহাল রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের টেলিফোন করে হুমকি-ধামকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের শিশুদের জন্য ১৪ কোটি টাকা মূল্যের শিক্ষা উপকরণ, কম্পিউটার সামগ্রী এবং আসবাবপত্র ক্রয়ে বিভিন্ন জেলায় মালামাল গ্রহণের আগেই উক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পুরো বিল পরিশাধের অভিযোগ উঠে। আর যেসব জেলায় উল্লেখিত শিক্ষা উপকরণ, আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে তাও নিন্মমানের বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান ও ধর্ম সচিব এনামুল হাসানের নজরে এলে তা তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়।

এ দিকে বছরের শুরুতে শিশুদের হাতে শিক্ষা উপকরণ দিতে না পেরে হতাশ ইফার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা পুরো প্রকল্পটি নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রধান কার্যালয়ের নির্লিপ্ত থাকার অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ইফার প্রধান কার্যালয়ে সিন্ডিকেট চক্র একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানার ব্যবহার করে পুরো অফিসের টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। তারা মাঠ পর্যায়ে টেলিফোন করে শিক্ষা উপকরণ না পেয়েও তা গ্রহণ হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। কোথাও কোথাও ব্যবহারের অনুপোযোগী মালামাল পাঠিয়ে তা গ্রহণের জন্য টেলিফোন করে সিন্ডিকেট চক্র। নিজেদেরকে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী পরিচয় দিয়ে এ সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে ঠিকাদারের পক্ষে কাজ করেন। পুরো বিষয়টি জেনেও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে চুপ থাকেন। ইফার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অতিউৎসাহের দরুন কোনো প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়াই তড়িঘড়ি সংশ্লিষ্ট তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত ২৭ ডিসেম্বর তিনটি চেকের মাধ্যমে প্রায় ১৪ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এ নিয়ে খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এ দিকে তদন্ত কমিটি গত ১৯ জানুয়ারি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তারা ১ জন পরিচালকসহ ৫ জন উপ-পরিচালকের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। জানা গেছে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা তদন্ত কমিটির নিকট যেসব কর্মকর্তা মালামাল না পেয়েও তা গ্রহণ হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন তাদের নাম বলেন। পরে তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক ফারুক আহমদ ও তার সহযোগী ২ উপ-পরিচালকসহ সংশ্লিল্টদের বক্তব্য গ্রহণ করেন। মালামাল না পেয়ে এবং অতিনিন্মমানের মালের বিল কিভাবে পরিশোধ করা হয়েছে তদন্ত কমিটির এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক ফারুক আহমদ কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির মূল কারণ ছিল কয়েকজন অদক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ। সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবের অধীনে পদায়ন করা হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সর্বনিন্ম পর্যায়ের ২ জন কর্মকর্তাকে। অথচ এখানে ইতোপূর্বে সরকারের উপসচিবরা কাজ করেছেন। প্রকল্পের কয়েকজন কর্মকর্তার ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য তারা পেয়েছেন। তাদের অনেকেই ঢাকায় গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন। মালামাল না পাওয়া কিংবা গ্রহণযোগ্য না হওয়া সংক্রান্ত জেলা কর্মকর্তাদের পত্র এবং বিল পরিশোধের নথিপত্র তারা সংগ্রহ করেছেন। বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালক নথিতে ঊর্ধ্বতনের অনুমোদন নিয়েছেন বলে তদন্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। উল্লেখিত দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সিন্ডিকেট চক্র জোর লবিং চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার বিকেলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মুশফিকুর রহমান ও ইফার প্রকল্প পরিচালক ফারুক আহমেদের সাথে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন ধরেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ