পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আইনী জটিলতায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪০টি
হাবিবুর রহমান : দলের গঠনতন্ত্র, ইস্তেহার, জেলা-উপজেলায় অফিস এবং দলীয় সাইনবোর্ড না থাকলেও দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো রাজনীতিক দল গড়ে উঠেছে। বেশির ভাগ রাজনীতিক দল মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিবন্ধন নিলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেনি নিবার্চন কমিশন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আইনটি থাকলেও তা বর্তমান সরকারের সময়ে এ আইনটি বাতিল করা হয়।
নিবন্ধনকৃত যেসব দলের কার্যক্রম নামে মাত্র, সেসব দলের জন্য বিধিমালায় পরিবর্তন এনে তাদের নিবন্ধন বতিল করা হবে। প্রায় দেড় ডজন রাজনীতিক দলের কোন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এদিকে কার্যক্রম নেই দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল করতে নির্বচন কমিশন (ইসি) কাজ করছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, ২০০৮ সালে মোট ১০৭টি দল আবেদন করে নিবন্ধন পেয়েছিল মাত্র ৪০টি রাজনীতিক দল। দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চালু হলেও নিবন্ধিত দলগুলোর অফিস ও কমিটির সঠিক তথ্য দিচ্ছে না বলে জানিয়েছে ইসি। সূত্র আরও জানায়, নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদনকারী নতুন ২৫টি রাজনৈতিক দলই কমিশনের প্রদত্ত শর্তসমূহ পরিপূর্ণভাবে পূরণ করতে পারেনি। এর মধ্যে ১০টি দলের নেই কোন গঠনতন্ত্র। নির্বাচনী ইশতেহার নেই ৩০টি দলের। বিধিমালা জমা দিতে পারেনি ৩০টি দল। এছাড়াও শর্ত অনুযায়ী ১০টি দল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদবীসহ তালিকা জমা দেয়নি, এমনকি কেন্দ্রীয় দফতর, প্রশাসনিক জেলা ও থানা/উপজেলা অফিস ও ২শ’ ভোটারের দলের সদস্য হিসেবে স্বাক্ষর জমা দেয়নি ২০টি দল। নিবন্ধন ফি জমা দেয়নি ১১টি দল। ফলে আগামী ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দল নিবন্ধন না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নিবার্চন কমিশন সচিবালয়ের দল নিবন্ধন শাখার এক সিনিয়র সহকারী সচিব জানান, দেশের বেশির ভাগ দলের গঠনতন্ত্র, ইস্তেহার, জেলা-উপজেলায় অফিস এবং দলীয় সাইনবোর্ড নাই। আবার অনেক রাজনীতিক দল কেন্দ্রীয় অফিসের ভাড়ার টাকা দিতে পারেেছ না। তারপরও ব্যাঙের ছাতার মতো রাজনীতিক দল। এরা বেশির ভাগ মিথ্য তথ্য দিয়ে দলের নিবন্ধন নিয়েছে। আইন না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। আমরা নতুন আইনের জন্য কাজ করছি। এটি হলে যেকেউ আর রাজনৈতিক দল করতে পাবে না।
নির্বাচন কমিশনার কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ ইনকিলাবকে বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কমিশনের একটি বাছাই কমিটি আছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নতুন দলের নিবন্ধন দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, আদালতের মাধ্যমে ছাড়া কোন রাজনীতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয় না। যারা নিবার্চন কমিশনের আদেশ মানে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ নেয়া হয়।
সাবেক সাখাওয়াত হোসেন ইনকিলাবকে বলেন,দেশের অনেক রাজনীতিক দল মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিবন্ধন নিয়েছে। দল গুলোর গঠনতন্ত্র, ইস্তেহার, জেলা-উপজেলায় অফিসও খুঁজে পাওয়া যায় না। সে জন্য আমরা সেজন্য আইন করেছিলাম পরে সরকার আইনটি বাতিল করেছে। আইনটি নতুন কওে করলে আর মিথ্য তথ্য দিয়ে কেউ রাজনীতিক দল করতে পারবে না। এটি হলে দেশের জন্য ভাল হবে।
আইন অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক এমন দলগুলোকে নিবন্ধন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের (ইসি)। নিবার্চন কমিশনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নিবন্ধীকরণের উদ্দেশ্যে কোনো রাজনৈতিক দলকে আবেদনের সঙ্গে (ক) দলের নাম ও প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা; (খ) দলের গঠনতন্ত্র (গ) দলের নির্বাচনী ইস্তেহার, যদি থাকে (ঘ) দলের বিধিমালা, যদি থাকে (ঙ) দলের লোগো এবং পতাকার ছবি (চ) দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের নাম এবং পদবী (ছ) দলের নামে রক্ষিত ব্যাংকের নাম, একাউন্ট নম্বর ও সর্বশেষ স্থিতি (জ) দলের তহবিলের উেসর বিবরণ (ঝ) দলের নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র (ঞ) নিবন্ধন ফি বাবদ সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবরে জমাকৃত অফেরতযোগ্য টাকার ট্রেজারি চালানের কপি ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে ইউপিতে এ পযর্ন্ত চার ধাপে ২২টি দল প্রার্থী দেবে বলে ইসিকে চিঠি দিয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ের পর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে ১৭টি দল। সব মিলিয়ে দেড় ডজন দল ইউপি ভোটে নেই বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। গত বছরে নিবন্ধিত দলগুলোর অফিস ও কমিটির সঠিক তথ্য ইসিকে দিতে পারেনি বলে জানা গেছে।
বর্তমানে নিবন্ধিত ৪০ দল- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (প্রতীক-নৌকা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি-এরশাদ (লাঙল), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (মশাল), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি (কাস্তে), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা), গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য), জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল), কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা), এলডিপি (ছাতা), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (কুঁড়েঘর), গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি (গরুর গাড়ি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মই), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (চাকা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ), ডা. এমএ মতিন নেতৃত্বধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ (গাভী), জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি (তারা), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (আম), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (খেজুরগাছ), গণফ্রন্ট (মাছ), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (বাঘ), ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন (চাবি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি), ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (রিকশা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (হুক্কা) ও বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (কোদাল), খেলাফত মজসিল (দেওয়াল ঘড়ি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাত-পাঞ্জা), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ও বিএনএফ (টেলিভিশন)।
দলের নির্বাচনী ইশতেহার নাই, দলগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ জালালী পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিপিডিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ গণসেবা আন্দোলন (বিজিএ), বাংলাদেশ জনতা দল, বাংলাদেশ প্রবাসী দল (বিপপা), বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ, গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন (এমআরএ), বাংলাদেশ জনগণতান্ত্রিক দল (বিপিডি), মাতৃভূমি দল, বাংলাদেশ গণঅধিকার দল, বাংলাদেশ লেবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), বাংলাদেশ বামফ্রন্ট, জনতা মহাজোট বাংলাদেশ, সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পার্টি (বাংলাদেশ), বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেলিনবাদ), বাংলাদেশ রেড স্টার পার্টি (বিআরএসপি), ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টি ও ন্যাশনাল আওয়ামী।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদবীসহ তালিকা জমা দেয়নি অনেক রাজনৈতিক দল। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (বিআইপি), বাংলাদেশ জনগণতান্ত্রিক দল (বিপিডি), মাতৃভূমি দল, বাংলাদেশ গণশক্তি দল, সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পার্টি (বাংলাদেশ), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী।
যেসব রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ফি জমা দেয়নি, সেগুলোগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ জনগণতান্ত্রিক দল (বিপিডি), মাতৃভূমি দল, সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পার্টি (বাংলাদেশ), বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী), ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টি ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।
কোন নির্বাচনে কত রাজনৈতিক দল : নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে মোট ১৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। এরপর ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯টি, ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮টি, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আটটি, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ৭৫টি, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৮১টি, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৫৫টি এবং ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৮টি দল অংশ নেয়। তবে নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছ এমন দলের সংখ্যা কম। ১৯৯১ সালে ৭৫টি দল নির্বাচনে অংশ নিলেও ১২টি দল বাদে অন্য দলগুলো একটি আসনও পায়নি। ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১১১টি দল প্রতীক বরাদ্দের আবেদন জানায়। প্রতীক বরাদ্দ হয় ৯০টি দলের জন্য। এর মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয় ৮১টি দল এবং আসন পায় মাত্র সাতটি দল। ২০০১ সালে অংশ নেওয়া ৫৫টি দলের মধ্যে আসন পায় ৯টি দল। ২০০৮ সালে ৩৮টি দলের মধ্যে আসন পায় আটটি দল। এর মধ্যে তিনটি দল জোটভুক্ত হিসেবে অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জোটে বেশি দল নিবার্চনে অংশগ্রহণ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।