Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই হাইড্রোগ্রোফি সার্ভে ভ্যাসেলের নির্মাণ কাজের সূচনা করলেন নৌ-বাহিনী প্রধান

প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম-উল-আলম : বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর জন্য চীন থেকে সংগ্রীহিতব্য দুটি সাবমেরিনকে পোতাশয়ে অবস্থান নির্বিঘœ করার লক্ষে নির্মাণাধীন দুটি সাবমেরিন টাগ-এর প্রথমটি গতকাল খুলনা শিপউয়ার্ড-এর সøপিওয়ে থেকে রূপসা নদীতে ভাসান হয়েছে। এ উপলক্ষে এক জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদÑওএসপি, এনডিসি, পিএসসি বলেন, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিনত হতে আমরা যে কাজ করছি, সেখানে খুলনা শিপইয়ার্ড ও যথেষ্ঠ অবদান রাখছে। সাবমেরিন টাগ ও হাইড্রোগ্রাফি সার্ভে ভ্যসেল নির্মাণের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ড এক অন্যতম উচ্চতায় পৌঁছতে যাচ্ছে। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃতপ্রায় খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌ-বাহিনীর কাছে হস্তন্তরের নির্দেশ প্রদান করে যে দুরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ছিলেন, আজ গোটা জাতি তার সুফল ভোগ করছে।
খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর কে কামরুল হাসান (এল), এনজিপি, এনডিসি, পিএসসি-বিএন-এর সভাপতিত্বে গতকাল দুপুরে রূপসা নদী তীরে খুলনা শিপইয়ার্ডের সবুজ চত্তরে জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে সহকারী নৌ-বাহিনী প্রধান ও ইয়ার্ডটির পরিচালনা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যডমিরাল এস এ এম এ আবেদিনও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে নৌ-বাহিনী নারী কল্যাণ সংঘের সভানেত্রী বেগম নাজমুন নিজাম, খুলনা বেজ-এর কমোডর কান্ডিংসহ উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির ভাষণে নৌ-বাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে খুলনার রূপসা নদী তীরে একটি মধ্যম মানের নৌযান তৈরীর কারখানা গড়তে জার্মান বিশেজ্ঞদের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৭ সালে খুলনা শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধিনতার পরে প্রতিষ্ঠনটি বিসিআইসির ব্যবস্থাপনায় কিছুদিন লাভজনক ভাবে চললেও পরে তা ব্যাপক লোকশানের কবলে পড়ে। এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যাবার মুখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌ-বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পরে বিপুল লোকশানের বোঝা ও দায়দেনা কাটিয়ে খুলনা শিপইয়ার্ড এখন দেশের একটি আদর্শ শিল্প প্রতিষ্ঠান। নৌ-বাহিনী প্রধান প্রধানমন্ত্রীর এ বিচক্ষণ ও দুরদশী পদক্ষেপকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি সরকারি বধিবিধানের আলোকে ইয়ার্ডটির উন্নয়নে সবকিছু করার জন্য সর্বস্তরর কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, নৌ-বাহিনীর কাছে এখন খুলনা শিপইয়ার্ড ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ও চট্টগ্রাম ড্রাইডক রয়েছে। এক অভিন্ন নীতিমালার আওতায় পারস্পারিক সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব ডকইয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান তিনি ।
নৌ-বাহিনী প্রধান বলেন, সমর নৌযানসমুহ নিজস্ব ইয়ার্ডে মেরামত ও নির্মাণই বাঞ্চনীয়। তিনি বলেন, রূপসা নদীসহ পরিবেশগত কারণে খুলনা শিপইয়ার্ডে বড়মাপের নৌযান তৈরীর লক্ষে মংলা বন্দরের ভাটিতে এর একটি ফরোয়ার্ড ইয়ার্ড নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য জমিও হস্তান্তর হয়েছে। খুলনা শিপইয়ার্ডকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীও যথেষ্ঠ আগ্রহী বলে তিনি উল্লেখ করেন। নৌ-বাহিনী প্রধান বলেন, ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমা নির্ধারিত হবার কারণে আমাদের অর্থনীতিতে যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌ-বাহিনী কাজ করছে। আর এ কাজে খুলনা শিপইয়ার্ড ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিষ্ঠনটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নৌ-বাহিনী প্রধান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে খুলনা শিপইার্ডের এমডি কমোডর কে কামরুল হাসান বলেন, নৌ-বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে এ প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক টার্নওভার ১৬ কোটি টাকা থেকে ৪৩০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির ৬৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা মুনাফা অর্জনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা সরকারি কোষাগারে ৮৫ কোটি টাকারও বেশী বিভিন্ন ধরনের কর জমা দিয়েছি। তিনি দেশের উন্নয়নে যেকোন ধনের চ্যলেঞ্জ মোকাবেনায় খুলনা শিপইয়ার্ড প্রস্তুত বলেও জানান।
পরে নৌ-বাহিনী প্রধান হাইড্রোগ্রাফি সার্ভে ভ্যসেলের মূল হালে হাতুরি পিটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কাজের সূচনা করার পাশাপাশি নির্মাণাধীন সাবমেরিন টাগটি রূপসা নদীতে ভাসানোর কাজেরও সূচনা করেন। এসময় সাইরেন বাজিয়ে ও বেলুন উড়িয়ে নৌযানটি ভাসান হয়। পরে নৌ-বাহিনী প্রধান খুলনা শিপইয়ার্ড প্রাঙ্গণে একটি গাছের চাড়া রোপন করে দোয়া মোনাজাতে শরিক হন।
মালয়েশিয়ার নৌ-নির্মাণÑকারিগরি সহায়তা প্রতিষ্ঠান-জিওএমএস’এর তত্ত্বাবধানে প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা ব্যায়ে দুটি সাবমেরিন টাগ-এর পরিপূর্ণ নির্মাণ কাজ শেষে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নৌ-বাহিনীর কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে খুলনা শিপইয়ার্ড।
চীন থেকে সংগ্রহ করা দুটি সাবমেরিন বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সমর বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। পটুাখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাছে এসব সাবমেরিন-এর জন্য নির্মাণাধীন পোতাশ্রয়ে টাগগুলো অবস্থান করবে। গভীর সমুদ্র থেকে সাবমেরিনকে পোতাশ্রয়ে টেনে নিয়ে আসার জন্য শক্তিশালী টানা নৌযান বা টাগ-এর প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদশ নৌ-বাহিনী দুটি সাবমেরিন টাগ তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করে। সাবমেরিন টাগ দুটির নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে রয়েছে বিশ্বখ্যাত নৌ জরিপ প্রতিষ্ঠান-‘ব্যুরো অব ভেরিটাস’। প্রায় ১০৫ফুট দৈর্ঘ ও ৩৮মিটার প্রস্থ এসব সাবমেরিন টাগ পূর্ণ লোডে ঘন্টায় ১২ নটিক্যাল মাইল বেগে সামনে ও ১১ নটিক্যাল মাইল বেগে পেছনে চলতে পারবে। নৌযানগুলোতে ২ হাজার ৫শ’ অশ্ব শক্তির আমেরিকার ‘কামিন্স’ ব্রান্ডের ২টি করে মূল ইঞ্জিন ছাড়াও দুটি জেনারেটর ইঞ্জিনও সংযোজন করা হচ্ছে।
এছাড়াও খুলনা শিপইয়ার্ডে গতকাল যে দুটি হাইড্রোগ্রাফি সার্ভে ভ্যাসেলের নির্মাণ কাজের সূচনা হয়েছে, তার প্রতিটির দৈর্ঘ ৩২.৭৮মিটার। প্রস্থ ৮.৪০মিটার। অষ্ট্রেলিয়ান ডিজাইনে ক্যটামেরন হালে ৩.১৭ মিটার প্রস্থ নৌযান দুটি ঘন্টায় ১২ নটিক্যাল মাইল বেগে চলাচলক্ষম। নৌযানটিগুলোতে ৬শ’ অশ্ব শক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও ৭৪ কিলোওয়াটের ২টি ও ১৬ কিলোওয়াটের ১টি জেনারেটর থাকবে। অত্যাধুনিক এ জরিপ জাহাজগুলোতে ৩ ধরনের ইকো সাউন্ডার ছাড়াও সাইড স্ক্যানার সোনারও সংযোজন করা হবে। নৌযাগুলোতে বিশ্বমানের বেতার যন্ত্রও সংযোজন করা হবে। দেশের সমুদ্র উপকূল বন্দর ও পোতাশ্রয় সংলগ্ন এলাকায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত এসব জরিপ জাহাজের সাহায্যে একনাগােেড় দীর্ঘ সময় নিখুতভাবে হাইড্রোগ্রাফী সার্ভে কর্মকা- সম্পন্ন করতে পারবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুই হাইড্রোগ্রোফি সার্ভে ভ্যাসেলের নির্মাণ কাজের সূচনা করলেন নৌ-বাহিনী প্রধান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ