Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জঞ্জালমুক্ত হচ্ছে বন্দরনগরী

৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম

প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : জঞ্জালমুক্ত হচ্ছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রামের আসল রূপ ফিরিয়ে আনতে চলছে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে অবৈধ বিলবোর্ড ও স্থাপনা উচ্ছেদে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। মহানগরীকে ময়লা-আবর্জনাও যানজটমুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে মাঠে নেমেছেন জনপ্রতিনিধিরাও। আগামী ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগেই নগরীকে জঞ্জালমুক্ত করার টার্গেট নিয়ে চলছে কর্মযজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি পরিচ্ছন্ন মহানগরী উপস্থাপন করতে চান এখানকার জনপ্রতিনিধিরা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী চট্টগ্রাম প্রাচ্যের রানী হিসেবে পরিচিত। পাহাড়, সমুদ্র আর খরস্রোতা কর্ণফুলীর কূল ঘেষে গড়ে উঠা এ মহানগরী প্রাকৃতিকভাবেই দৃষ্টিনন্দন। কিন্তু এ সৌন্দর্য মøান হয়ে গেছে অনেক আগে। যত্রতত্র গড়ে উঠা বিলবোর্ডে ঢাকা পড়েছে খোলা আকাশ, পাহাড় আর সবুজ বৃক্ষ।
অবারিত আকাশ আর মুক্ত বাতাস থেকে বঞ্চিত নগরবাসী। যত্রতত্র ফুটপাত, সড়ক দখল করে বসানো হয়েছে পণ্যের পসরা। মহানগরীতে নেই কেন্দ্রীয় কোন বাসটার্মিনাল। সড়কে বাস, মিনিবাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করা হচ্ছে। মহানগরীর ব্যস্ততম মোড় ও পয়েন্টে অঘোষিত বাস, মিনিবাস ও টেম্পো-অটোরিকশা স্ট্যান্ড। সড়কে নির্মাণসামগ্রী রেখে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় মানুষের চলার পথ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। যানজটে অচল হচ্ছে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ভিত্তিক কর্মচঞ্চল এ মহানগরী।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ঘোষিত ‘গ্রীন ও ক্লিন’ সিটি গড়ার লক্ষ্যে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদে শুরু হয় অভিযান। চসিক, সিএমপি ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চলছে এ অভিযান। প্রথমবারের মত রাতের বেলায় বিলবোর্ড উচ্ছেদে অভিযান চলছে। কর্মকর্তারা জানান, দিনের বেলায় বিলবোর্ড উচ্ছেদকালে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর এ কারণে রাতের বেলায় বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান চলছে। প্রথম দিনে ১০টিসহ গত তিন রাতে প্রায় ৭০টি ছোট-বড় বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা মেনে অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও নিজেদের বিলবোর্ড সরিয়ে নিচ্ছে।
চলমান অভিযান সফল করতে চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানদের সাথে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গতকাল বৈঠক করেন। বৈঠকে জনস্বার্থে রাতে পরিচালিত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে মেয়র বলেন, নগরীর সৌন্দর্য হানিকর ও অসুন্দর অবৈধ বিলবোর্ড, স্থাপনা, ব্যানার, সাইনবোর্ড, প্লে-কার্ড, ফেস্টুন, ইত্যাদি স্ব উদ্যোগে ৩ দিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে।
পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের অভিযানও অব্যাহত থাকবে। মেয়র বলেন নগরীর বিদ্যুৎ ও টিএন্ডটি খুঁটিসহ নগরজুড়ে অবৈধ ব্যানার ফেস্টুন, প্লে-কার্ড ও সাইনবোর্ড সাঁটানো আছে, যার একটিও বৈধ নয়। সৌন্দর্য হানিকর সবকিছু অপসারণ করে নগরীকে ক্লিন করা হবে। তিনি বলেন, সুযোগ দেয়ার পরও যারা অবৈধ ব্যানার, ফেস্টুন, প্লে-কার্ড, সাইবোর্ড, ইউনিপোল, বিলবোর্ড ইত্যাদি স্ব-উদ্যোগে সরাতে অপারগ হন, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে। বৈঠকে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের অলিগলি সড়কে ময়লা-আবর্জনা মুক্ত করার অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেন মেয়র।
বিলবোর্ড উচ্ছেদের পাশাপাশি ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চলছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানের মুখে ফুটপাত ও সড়ক দখলকারীরা নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছে। মহানগরীর চৌমুহনী মোড়, আগ্রাবাদ বাদামতলীসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাত দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসা হকাররা তাদের পণ্যের পসরা গুটিয়ে নিচ্ছেন। রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগানো ব্যানার, ফেস্টুনও খুলে নেওয়া হচ্ছে।
মহানগরীর ১৬টি থানা-পুলিশের উদ্যোগে চলছে বিশেষ অভিযান। থানার ওসিদের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা নগরজুড়ে মোটরসাইকেলে টহল দিচ্ছেন। এ অভিযানে অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজও চলছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিজ নিজ থানা এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। সম্প্রতি সিএমপির কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল ব্যতিক্রমধর্মী এ অভিযানের উদ্বোধন করেন।
ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বিশেষ অভিযান চলছে। অবৈধ ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে মামলা হচ্ছে। যত্রতত্র গড়ে উঠা টার্মিনাল উচ্ছেদ করা হচ্ছে। যেখানে- সেখানে বাস, মিনিবাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা বন্ধে ট্রাফিক পয়েন্টগুলোতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
সিএমপির কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল বলেন, মহানগরীকে অবৈধ বিলবোর্ড ও যানজট মুক্ত করতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানে মহানগরীকে জঞ্জালমুক্ত করার পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনামুক্ত একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন-পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরাও এ অভিযানে সামিল হয়েছেন। এর ফলে অভিযানে ব্যাপক সাড়াও মিলছে। অনেকে স্বউদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা এবং বিলবোর্ড সরিয়ে নিচ্ছেন। এটি একটি ভাল দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আশা করি এবারের অভিযান শতভাগ সফল হবে। নগরবাসী এর সুফল পাবে। মহানগরী পুরোপুরি জঞ্জালমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
মহানগরীকে জঞ্জালমুক্ত করতে বেশ কয়েক দফা উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সে উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি। পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গত বছরের শুরুর দিকে মহানগরীকে যানজট ও ময়লা-আবর্জনা মুক্ত করার উদ্যোগ নেন। শুরুর দিকে ওই উদ্যোগ কিছুটা ফলপ্রুসু হলেও তা শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সফল হয়নি। আবারও দখল হয়ে যায় ফুটপাত, সড়ক এবং খোলা জায়গা। পুলিশ কমিশনার একপর্যায়ে বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযানেও নামেন। অভিযান শুরুর কিছুদিন পর রাজনৈতিক চাপে পিছু হটেন তিনি। মহানগরীর বেশিরভাগ বিলবোর্ডের মালিক সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। এ কারণে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগরীকে গ্রীন ও ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলার কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামেন। শুরুতে তিনি দিনের বদলে রাতের বেলায় ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর নগরব্যাপী শুরু হয় গণসচেতনতামূলক প্রচারণা। এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার থেকে বিলবোর্ড উচ্ছেদে শুরু হয় সাঁড়াশি অভিযান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঞ্জালমুক্ত হচ্ছে বন্দরনগরী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ