Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রাহকদের টাকা লুটপাট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

কোম্পানির কোটি কোটি টাকা লুট করছেন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তারা। প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়ে এক বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কয়েকজন কর্মকর্তা। পরিচালনা পরিষদ বাতিল হওয়ার পর দায়িত্ব পেয়েই নামে- বেনামে টাকা লুট করেছেন তারা। কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটির সাবেক দুই প্রশাসক। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় প্রতিষ্ঠানটির ডিএমডি মনজুরে মাওলা ও ইভিপি ফারহান উদ্দীনকে। আদালতের স্থগিতাদেশ দেয়ার পর ফের তাদের ফিরিয়ে আনা হয়। যারা এখনো বহাল তবিয়তে থেকে এসব অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে প্রতিষ্ঠানটির অসাধু কর্মকর্তাদের লুটপাটে বিপাকে আছেন লাখ লাখ গ্রাহক। তারা প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত নিয়ে হাতাশার মধ্যে আছেন।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদ বাতিল করে প্রশাসক বসায় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান সুলতান উল আবেদিন মোল্লা। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর নানা অনিয়মের অভিযোগে তাকে সড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর দায়িত্বে আসেন রফিকুল ইসলাম। তারপরও অনিয়ম না থামায় তাকেও সরিয়ে দেয়া হয়। তবে অনিয়ম বন্ধ হয়নি প্রতিষ্ঠানটিতে। এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এখনো চলছে এই লুটপাট। গত একবছরে প্রতিষ্ঠানটি থেকে নামে-বেনামে ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরে ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা, বিনোদন বাবদ খরচ করা হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ টাকা। এক বছরে কোর্টে মামলা চালাতে আইনজীবিদের ভাতা বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। ভবনের সৌন্দর্য বর্ধন করার নামে বিল করা হয়েছে ২৭ লাখ টাকা, মাস্ক কেনা হয়েছে এক কোটি টাকার। বিবিধ বাবদ খরচ ও কর্মকর্তাদের অ্যালাউন্স বাবদ দেখানো হয়েছে দুই কোটি বিশ লাখ টাকা। প্রায় ১১ কোটি টাকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক কমিশন দেয়া হয়েছে। তবে কোথায় এই কমিশন দেয়া হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। এসব অনিয়ম এখনো চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
সূত্র মতে, প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে আদালত বাতিল করে দেয় গত ৬ জানুয়ারি। পরে ১০ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ আগের ঘোষণা স্থগিত করেন। একই সঙ্গে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে প্রশাসক কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলে নির্দেশ প্রদান করেন। পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইডরার পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকার বেশি আর্থিক লেনদেন না করার নির্দেশ দেয় প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষকে। তবে এই নির্দেশনা না মেনে প্রতিদিনই নানা বিল ভাউচার দেখিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ ছাড় করছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি ২৫ লাখ টাকার বেশি পেমেন্ট করেছে বিভিন্ন খাতে। গত ২০ জানুয়ারি প্রায় ৩০ লাখ টাকার পেমেন্ট করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পুরোপুরি অবৈধ এই অর্থ লেনদেন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইডরার নির্দেশ অমান্য করে এসব লেনদেনের বিষয় জানতে ডেল্টা লাইফের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ফারহান উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ইডরার নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান। ওই প্রত্যাহার নির্দেশ চাইলে তিনি বলেন, সেটি অফিসে আছে। এখন দেয়া সম্ভব নয়। অবশ্য ইডরার কর্মকর্তারা নির্দেশনা প্রত্যাহারের এমন কোন আদেশ হয়নি বলে জানিয়েছে।
জানতে চাইলে ডেল্টা লাইফে নিয়োগকৃত প্রশাসক মো. কুদ্দুস খান ইনকিলাবকে বলেন, অফিসিয়াল বিষয়। আদালতে বিচারাধীন। তাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। তবে একটি প্রতিষ্ঠান এভাবে ঝুলে থাকলে অনেক ক্ষতি। একটা সমাধান হওয়া দরকার। আর আদালতই পারবে এর সমাধান দিতে।
পরিচালনা পরিষদের পরিচালক জিয়াদ রহমান বলেন, আদালত ও ইডরার নিদের্শনা উপেক্ষা করে প্রশাসকসহ একটি চক্র বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে অর্থ তুলে নেয়াসহ অবৈধভাবে যা ইচ্ছা তাই করছে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র আইনজীবিদের ভাতা বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে এক ধরণের লুটপাট চলছে। বিষয়টি আদালত ও ইডরাকে জানানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স

২২ জানুয়ারি, ২০২২
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ