পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনার তেরখাদা ও বটিয়াঘাটার দু’টি অর্থনৈতিক জোনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নির্মাণকাজ শুরুর অগ্রগতি এগিয়ে চলছে। গতকাল রোববার সকালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (ইঊতঅ) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী খুলনার বটিয়াঘাটায় প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন। খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিদল সাথে ছিলেন। এ সময় বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, সারাদেশের তুলনায় খুলনার দু’টি অর্থনৈতিক জোন সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অগ্রগতি চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ১২টি অর্থনৈতিক জোন অনুমোদিত। তার মধ্যে একটি বেসরকারি পর্যায়ের বাকিগুলো সরকারি তত্ত¡াবধানে গড়ে উঠবে। শিল্প খাতের দ্রæত বিকাশ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, রফতানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণে উৎসাহ প্রদান, পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক জোন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নিয়েছে। মংলা অর্থনৈতিক জোনের ডেভেলপার নিয়োগ হয়েছে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে এসব অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থনৈতিক জোনের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছে। গত ২৩ জুন ভারতীয় প্রতিনিধিদল খুলনা-মংলা রেললাইন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোন পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন ভারতের এক্সটারনাল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অজিত ভেনায়েক গুপ্ত, উপ-সচিব প্রেম কে নীর, আন্ডার সেক্রেটারি ভিপুল কুমার মিশরী এবং ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ (কনসালট্যান্ট)। সর্বশেষ গতকাল বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল জোনস্থল পরিদর্শন করেছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা পাল্টে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি অর্থনৈতিক জোনে ২ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, দ্রæত অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশে রফতানি প্রক্রিয়া অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতেই খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ৮ জেলায় ১২টি অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হবে। অর্থনৈতিক জোন অনুমোদন পাওয়ার পর শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যাতায়াত সহজতর করতে রামপালের ফয়লায় পীর খানজাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে বিশেষ বরাদ্দের সুপারিশ রয়েছে।
অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপক মলয় চৌধুরী জানান, ১১০ একর জমির ওপর বাগেরহাট জেলার মংলা সমুদ্রবন্দরের সন্নিকটে একটি ও ইপিজেডের পাশে ২০৫ একর জমির ওপর আরো একটি, ৫৯৪ একর জমির ওপর খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নে তেঁতুলতলায় ও ৫১০ একর জমির ওপর তেরখাদা উপজেলার কোলা পাটগাতী মৌজায়, কুষ্টিয়া জেলায় ৫০৭ একর জমির ওপর ও ভেড়ামারা উপজেলায় ৩০৪ একর জমির ওপর, ভোলা জেলা সদরে ৩০০ একর জমির ওপর, বরিশাল জেলার আগৈলঝারা উপজেলায় ২০২ একর জমির ওপর গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় ২০০ একর জমির ওপর একই জেলার গোবরায় ৫২৫ একর জমির ওপর শরীয়তপুর জেলার জাজিরায় ও ৭৫০ একর জমির ওপর একই জেলার গোসাইরহাটে সরকারি উদ্যোগে এবং ৮০ একর জমির ওপর বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় ফমকম ইপিজেড বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠবে।
অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করছে, দেশীয় শিল্পপতিরা ছাড়াও জাপান, কোরিয়া, ভারত, পানামা, তুরস্ক, ইউক্রেন, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইতালি, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সংযুক্ত আরব আমিরাত নতুন অর্থনৈতিক জোনে পুঁজি বিনিয়োগ করবে। দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক জোনে সয়াবিন তেল, সুপারি, বাইসাইকেল, তাঁবু, ক্যামেরার লেন্স, কেমিক্যাল শিল্প, প্লাস্টিক দ্রব্য, এনার্জি সেভিং বাল্ব, গাড়ির যন্ত্রাংশ, বুলেটগ্রæফ জ্যাকেট, চশমা, ব্যাটারি, ধাতব শিল্প, গলফ শ্যাফট, জুতার এক্সেসরিজ ইত্যাদি উৎপাদন হবে।
বেপজার জেনারেল ম্যানেজার নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, পশুর নদীর তীরে বন্দর এলাকায় ১৯৯৮ সালে ২৫৫ একর জমির ওপর মংলা ইপিজেড গড়ে ওঠে। এটি দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম রফতানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল। এখানে ২২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে অপটিক্যাল, পলেথিন, পাটের দড়ি ও সুপারি উৎপাদন হচ্ছে। ১৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান অপেক্ষায় রয়েছে। ২ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো: নাজমুল আহসান বলেন, রোববার পরিদর্শনের পর ইমারত নির্মাণের পরিকল্পনা শুরুর প্রস্তুতি চলছে বেজার। খুলনার দু’টি অর্থনৈতিক জোন নির্মিত হলে খুলনাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে। এ অঞ্চলের বেকার সমস্যার সমাধান হবে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।