Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রয়োজন হলে সংলাপ করবো -ওবায়দুল কাদের

প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫২ পিএম, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় ইস্যু তৈরি হলে অবশ্যই সংলাপ হবে। আর সংলাপ করার উদাহরণ তো আমাদের রয়েছে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করবো, সংলাপকে বিশ্বাস করবো না এটা তো হতে পারে না। সংলাপ আমিও চাই। প্রয়োজন হলে সংলাপ করবো। তিনি আরও বলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী কী খালেদা জিয়াকে সংলাপের আহ্বান করেননি? গণভবনে ডাকেননি? কোকো (আরাফাত রহমান কোকো) মারা যাওয়ার পর সহমর্মিতা জানানোর জন্য গেলেন, কিন্তু তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন। সংলাপের দরজা তো সেখানেই বন্ধ হলো। তারপরেও বলছি, দেশের প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই সংলাপ করবেন। তবে এই মুহূর্তে সংলাপের প্রয়োজন নেই। তিনি গতকাল রোববার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে একথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শ্যামল সরকার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান।
আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দলের মধ্যে থাকা ‘আবর্জনা’ পরিষ্কারের কথা বলেছেন নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
মতবিনিময়ে সাংবাদিকরা তার কাছে দলের দুর্বলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আছে, সমস্যাতো আছেই। এতবড় দল, এতবড় পরিবার। পরিবারের মধ্যে কিছু ছোটখাটো সমস্যা থাকে। বাস্তবতা অস্বীকার করে তো লাভ নেই। আবার ক্ষমতায় আসলে; কিছু ট্রাশেস ঢুকে গেছে, কিছু আবর্জনা, কিছু প্যারাসাইট এখানে, ওখানে নানান সমস্যা সৃষ্টি করে। এগুলোকে আমরা ঠিকঠাক করব। দলে কোনো শুদ্ধি অভিযানের পরিকল্পনা আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অলরেডি বলে দেয়া হয়েছে, অপকর্ম যারা করছে, যারা দলের সম্মানকে ক্ষুণœ করছে, তারা যদি সংশোধন না হয়, পরবর্তী নির্বাচনে তাদের নমিনেশনের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সরকারি দলের উন্নয়নের সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঘর যদি ডিসিপ্লিনড না হয় তাহলে বাইরে আমরা কি করে ডিসিপ্লিনড করব। আপন ঘরকে ডিসিপ্লিনড করতে হবে।
উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে পার্টিকে তার সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। সরকার শক্তিশালী, দল দুর্বল- এ অবস্থায় আমরা উন্নয়নের ফসল ঘরে তুলতে পারব না। এ লক্ষ্যেই এবারকার জাতীয় সম্মেলন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেন,সরকার থেকে দলকে আলাদা করার একটা জোর প্রয়াস চলেছে। তাই এবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীতে মন্ত্রীদের রাখা হয়নি। মন্ত্রীদের অনেক কাজ, তাঁদের পক্ষে দলে সময় দেয়া অনেক কঠিন।
তবে নিজে দলের পদ ও মন্ত্রিত্ব দুটিই ধরে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সরকার ও দল আলাদা করার প্রশ্ন যদি আসে, তাহলে কোন পদ বেছে নেবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে, যে পারে সব পারে। আমি রাস্তা দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগকে দেখব এবং আওয়ামী লীগকে দেখতে রাস্তা দেখব। আমার সমস্যা হওয়ার কথা না। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠেন। আমি তাকে অনুসরণ করি। কেউ ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠলে সকাল ১০টার মধ্যে আর কাজ খুঁজে পাবেন না। আমি ১০টার মধ্যে কাজ শেষ করে রাস্তায় বের হয়ে যাই। আমাকে আরও কোনো কাজ দিলেও করতে পারব।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলেও আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদেরবিএনপিকে ভবিষ্যতে নির্বাচনে আনার বিষয়ে কাজ করবেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে, ভালোভাবেই আসবে। বিএনপি আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না। আগের ভুলের চোরাবালিতে অনন্তকাল তারা আটকে থাকবে না। দেশ চালাবার খায়েশ কি তাদের নেই। তাদের অনেকের তো রাতের ঘুম হারাম। একদিকে তরুণদের ধাক্কা, অন্যদিকে অন্য ধাক্কা।
আগামী নির্বাচন তাদের ছাড়াই হবে কি নাÑ জানতে চাইলে তার উত্তর, যদি কেউ না আসে তাহলে আমরা কি করব?
নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি সহায়তা করতে চাইলে নেবেন কি না? এই প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংবিধানের আলোকে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা পরিষ্কার বলা আছে। সেভাবেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সেটি তো প্রেসিডেন্টের এখতিয়ার। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। সেখানে কোনও সমস্যা হবে না। আশা করছি বিএনপিরও হবে না। তারা এতো ভয় পাচ্ছে কেন? সেটি তো আমি বুঝি না। তারা ভয়কে জয় করতে জানে না। সংবিধানে বলা আছে, করা হবে। ভবিষ্যতে এভাবেই হবে। এখানে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে জাতির প্রয়োজনে যদি কোনো সংলাপ প্রয়োজন হয়, তাহলে সংলাপ করব।
সব জঙ্গি হামলা মোকাবিলা একটা বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটা বড় চ্যালেঞ্জ, সরকারের জিরো টলারেন্স এবং তড়িৎ ব্যবস্থার কারণে তারা দমে গেছে। তবে সন্ত্রাস বিদায় নিয়েছে এমন আত্মসন্তোষের সুযোগ নেই। এটা সাময়িক ব্যাপার, হয়তো আরও বড় হামলার জন্য তলে তলে প্রস্তুতি নিচ্ছে জঙ্গিরা। বড় হামলাও আসতে পারে। কারণ, নীরবতা ঝড়ের পূর্বলক্ষণ।
বিএনপিকে দুর্বল মনে করেন না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপিকে তো আমি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করি না। দুর্বল মনে করি না। এখনো আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তি বিএনপির ব্যানারে আশ্রয় নেয়। সুতরাং ওরা খুব দুর্বল, এটা আমি মনে করি না। তাদের তাচ্ছিল্য করি না। কিন্তু বিএনপির মতো বড় একটি দলে কেন এতো সাহসের সঙ্কট? কেন তারা ভয়কে জয় করতে পারে না, এটা আমার প্রশ্ন। দেশবাসীরও প্রশ্ন। ভীতি সন্ত্রাসের মধ্যে রাসেল স্কয়ারে আমরা ২০ জন হলেও তো গেছি। আব্দুস সামাদ আজাদ আজকে নেই, মরহুম। পুলিশ এক কর্মীকে নিয়ে যাচ্ছে তিনি পুলিশের গাড়িতে উঠে পড়লেন। বললেন ওকে (কর্মী) নিয়ে গেলে আমাকেও নিতে হবে। পুলিশ তাকে বলেছে, এটা উপরের নির্দেশ নিতে দেন। সামাদ আজাদ বলেছেন আমারও উপরের নির্দেশ, ওকে ছাড়া আমি যাব না। এ রকম নেতা কী বিএনপিতে আছে? বিএনপির মতো দলে এতো সাহসের সঙ্কট। আব্দুস সামাদ আজাদের মতো একজনও কী এ রকম সাহস দেখাতে পারেন না?
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনেও পারেনি, নির্বাচনেও পারেনি। এতো বড় দল ৫শ’ লোকের মিছিল করতে পারে না। এটি কী করে সম্ভব? আমরা তো ২০ জন নিয়েও রাসেল স্কয়ারে অবস্থান করেছি, মিছিল করেছি, সমাবেশ করেছি।
আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে প্রধানমন্ত্রী নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
কাদের বলেন, সম্মেলনের পাঁচদিনের মধ্যে আমরা আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের কমিটি করেছি। কমিটি করতে গিয়ে সম্মেলনের পরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমিটিতে আমরা সব অঞ্চলের তৃণমূলকে কভার করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবিলা করতে চায়। আমাদের মূল লক্ষ্য পরবর্তী প্রজন্ম এবং পরবর্তী নির্বাচন। এক্ষেত্রে আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার পরবর্তী প্রজন্ম। চমৎকার একটি আধুনিক রাষ্ট্র পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তৈরি করতে চাই। আমাদের এবারের সম্মেলনে এটিকেই আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের প্রথম প্রেসিডিয়াম মেম্বারদের বৈঠকে যশোরের পিযুষ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, সবাই তো আমার ঠিকানা ভুলে গিয়েছিল। সেখানে আপনারা আমাকে কিভাবে টেনে আনলেন। পাঁচদিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন বাংলাদেশের অনাগত রাজনীতির মডেল।
জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলে জাপার মতো এরকম দল বিরোধী দলে থাকতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিলো বিএনপির বড় ভুল। আগামীতে আর তারা এ ভুল করবে না।
দলে কোনঠাসা নেতাদের খুঁজে এনে কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে : ওবায়দুল কাদের
বিভিন্ন কারণে কোনঠাসা হয়ে থাকা দলের নেতাকর্মীদের খুঁজে এনে এবার আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
গতকাল রোববার বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেয়া এক সংবধণায় তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায়।
কাদের বলেন, কেউ কেউ নানান কথা বলে, অনেকে আবার বলে এই কমিটিতে ফরিদপুরের নেতাকর্মী বেশি। কার বাড়ি ফরিদপুর আর কার বাড়ি ঢাকা এটা দেখে তাদের নেতা বানানো হয়নি। তিনি বলেন, ফরিদপুরের বেশি হলে, তা হয়েছে তাদের যোগ্যতায়। ফরিদপুরের নেতাকর্মীরা ত্যাগ করবে আর আপনি মুল্যায়ন করবেন না, আমি এত একমত না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, নানান কারণে পার্টির অনেক ত্যাগী নেতারা কোনঠাসা হয়েছিল। আমাদের নেত্রী তাদের টেনে নিয়ে এসেছেন। দলের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, সামনের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে, দু‘ধরণের লোক প্রয়োজন। এক যারা দলের সম্পদ আর এক হল শক্তি। এই দুয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে আমরা এগিয়ে যাব।
২০১৯ সালের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে নবনির্বাচিত এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করতে ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, নবনির্বাচিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ নবনির্বাচিত নেতারা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রয়োজন হলে সংলাপ করবো -ওবায়দুল কাদের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ