Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদে রদবদল

প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মূল্যায়ন করা হচ্ছে মন্ত্রীদের পারফরম্যান্স : গতিশীলতা আনতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে মন্ত্রিপরিষদ
স্টাফ রিপোর্টার : অত্যন্ত সফলভাবে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন শেষ হওয়ার পর শিগগিরিই বর্তমান মন্ত্রীসভা রদবদলের আভাস পাওয়া গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের নেতৃত্বে গতিশীলতা আনতে মন্ত্রীদের দলীয় পদ-পদবিতে তেমন একটা রাখা হয়নি। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নেতারা বলছেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের প্রভাব কমানো হয়েছে। নবীন আর প্রবীণের ভারসাম্য বজায় রেখে সরকারের স্বপ্ন পূরণ ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে বর্তমান মন্ত্রীপরিষদ রদবদলের বিষয়ে প্রেসিডেন্টের পরামর্শ নিতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। আর এভাবে পর্যায়ক্রমে দল ও সরকার আলাদা করতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি আর একটি শক্তিশালী মন্ত্রীপরিষদ নিয়ে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে চায় ক্ষমতাসীন সরকার।
তবে সব কিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। কারণ তিনি ভালো বোঝেন কাকে দিয়ে কোন মন্ত্রণালয় চলবে। প্রধানমন্ত্রী গুণগত পরিবর্তনের পক্ষে। কারণ তিনি মনে করেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন দরকার। এরই ধারবাহিকতায় তিনি প্রবীণ ও নবীনের সমন্বয়ে একটি ভালো মন্ত্রীপরিষদের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করছেন। এই চিন্তাভাবনা থেকেই রদবদলের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের এবারের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। নেতারা যেন সাংগঠনিক কাজে সার্বক্ষণিক সময় ও মেধা দিতে পারেন এজন্য মন্ত্রীদের দলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে যারা দলে জায়গা পাননি তাদের মন্ত্রীসভায় স্থান দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে দলটির সূত্রগুলো।
গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সভাপতিম-লীর বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, শিগগিরিই মন্ত্রীসভা রদবদল করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন সভাপতিম-লীর সদস্য মন্ত্রীপরিষদের রদবদলের বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, মন্ত্রী পরিষদের রদবদল প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তিনি যেকোনো সময় এটা করতে পারেন। এ বিষয়ে সম্পূর্ণ এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। তাছাড়া, দল ও সরকার যাই করুক আগামী নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রী পরিষদকে আরও কার্যকরী করতে প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
সূত্র মতে, মন্ত্রী পরিষদের রদবদলে কাকে রাখবেন আর কাকে বাদ দেবেন তা নির্ভর করছে একান্তই প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মূল্যায়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরির্দশন করেছেন।
সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনে প্রধানমন্ত্রী কোনো কোনো মন্ত্রণালয় একাধিকবারও পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। সে সব নির্দেশনার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে বা তার অগ্রগতি কতটুকু তা তিনি পরখ করতে চান। আর এরই ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হচ্ছে মন্ত্রীদের পারফরম্যান্স।
২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর খুব দ্রুতই দলের ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ৭৪ জন নির্বাচিত নেতার নাম ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনাসাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। এরপর সভাপতিমন্ডলীর ১৪ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৪ জন এবং কোষাধ্যক্ষের নাম ঘোষণা করে কাউন্সিলরদের ভোটে পাস করে নেয়া হয়। কাউন্সিলের পর সম্পাদকম-লী এবং কার্যনির্বাহী সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে বাদ পড়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের ৭৪ জন সদস্যের মধ্যে সরকারে দায়িত্ব পালন করছেন ১০ জন। যা আগের কমিটির তুলনায় অর্ধেকেরও কম। দলের নবগঠিত কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীসহ ১০ জন মন্ত্রী রয়েছেন। তারা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় সদস্য ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
মন্ত্রীপরিষদ থেকেও দলে পদোন্নতি পেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি এবার আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। আগের কমিটিতে তিনি ছিলেন শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। নতুন কমিটিতে বাদ পড়েছেন ৪ মন্ত্রী ও পাঁচ প্রতিমন্ত্রী। পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনি ছিলেন গত কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ছিলেন গত কমিটির সংস্কৃতি সম্পাদক। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ছিলেন গত কমিটির সদস্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ছিলেন গত কমিটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক। প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। তিনি আওয়ামী লীগের গত কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, জুনাইদ আহমেদ পলক, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদ গত কমিটিতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য থাকলেও নতুন কমিটিতে নেই।
জানা গেছে, কোনো কোনো মন্ত্রীর পারফরম্যান্সে প্রধানমন্ত্রী কিছুটা অসন্তুষ্ট। আবার কারও পারফরম্যান্সে তিনি বেশ সন্তুষ্টও। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর ব্যাপারে তিনি ভীষণ সন্তুষ্ট। এ দু’জনেই দেশের ভাবমূর্তি ও কূটনৈতিক তৎপরতায় বেশ সাফল্য দেখিয়েছেন। আবার কোনো কোনো মন্ত্রীর কার্যক্রমে দলের ভাবমূর্তি বেশ কিছুটা ক্ষুণœ করেছে। এই সব বিবেচনায় কে বাদ পড়বেন আর থাকবেন তা পুরোপুরি নির্ভর করছে একান্তই প্রধানমন্ত্রীর মর্জির ওপর।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর দফতর পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী দলের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন। এক সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জিল্লুর রহমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদককে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর মূল কারণ স্থানীয় পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা। এর আগে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, এই মুহুর্তে ওবায়দুল কাদেরকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নাও দেয়া হতে পারে। কারণ ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বেই এগিয়ে চলেছে দেশের সবচেয়ে বড় ও আলোচিত প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ। পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। আর এই পদ্মাসেতুর সঙ্গে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সম্মান জড়িয়ে আছে। তাই পদ্মাসেতুর কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ওবায়দুল কাদেরকে এই মুহূর্তে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নাও আসতে পারে। বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। যদি বর্তমান সড়কমন্ত্রীকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে তাকে (মোশাররফ হোসেন) অন্যকোনো গুরত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
বর্তমান খাদ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রীর দফতর রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। তবে তাদের রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিবেচনায় থাকায় তাদের মন্ত্রীপরিষদ থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনাও কম। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি ও ডাক টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের মতো নবীনদের মন্ত্রীপরিষদে আনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বেশ আগ্রহী ও আন্তরিক বলে আভাস পাওয়া গেছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এখন একটাই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে। ইতোমধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় বর্তমান সরকারের ৭ বছরের সাফল্য তুলে ধরতে একটি বই প্রকাশ করতে যাচ্ছে। যেখানে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সাফল্য আলাদাভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আর এই কাজের দায়িত্ব তুলে নিতে হবে মন্ত্রীসহ এমপিদের। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত নেতাদের। ত্যাগী, পরিশ্রমী ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই চলছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র আভাস দিয়েছে।
আর এই রদবদলে সামনের দিকে আসতে পারেন সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী। এমনকি, তাদের বেশ গুরত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রীসভা থেকে ছিটকে পড়তে পারেন দু-একজন।
সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী খুব শিগগিরই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে মন্ত্রী পরিষদের রদবদলের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি আলোচনা করতে পারেন। তবে কবে নাগাদ এই পরিবর্তন আসতে পারে তার সম্পূর্ণটাই নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ওপর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদে রদবদল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ