পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : সরকারী সিদ্ধান্তের ১৪ মাস পেরিয়ে গেছে। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলছে আগের মতোই। মাঝখানে ঘটা করে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ হয়েছিল। আবার চালু হয়েছে নীরবে। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের জন্য আলটিমেটাম দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আগে মহাসড়কে শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার চলাচল করতো। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য মোটরচালিত রিকশা। এসবের কারণে মহাসড়কে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। ভুক্তভোগিদের মতে, স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততা, রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব এবং কার্যকর তদারকির অভাবে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি এমএ মালেক গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, এখানে আমাদের অফিসারদের দায়িত্বে কিছুটা অবহেলা আছে। তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্যাহ বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ থ্রি-হুইলার চলাচল। এগুলো বন্ধ করার জন্য আমরা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বলেছি, এখনও বলছি। পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের জন্য জেলা পুলিশ প্রশাসনকে এগিয়ে আসাসহ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। গত বছর ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপণ জারি করে সরকার। সে সময় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে কি না তা দেখার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। নিজে সিএনজি অটোরিকশা আটক করেছেন। মন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত অনেকটা ঘটা করেই মহাসড়কগুলোতে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রয়োজনে মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের জন্য আলাদা লেন চিহ্নিত করে দেয়া হবে। সরকারী সিদ্ধান্তের প্রথম দিকে পুলিশি তৎপরতার কারণে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল কমে যায়। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও প্রত্যাশিতভাবে অনেক কমে যায়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বাড়তে থাকে। বর্তমানে সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ ঘোষিত তিন চাকার যানগুলো। প্রথমে মহাসড়ক সংলগ্ন অলিগলি এরপর সরাসরি মহাসড়কে চলতে শুরু করে নিষিদ্ধ যানবাহনগুলো। এক বছরের মাথায় অনেকটা নীরবেই আবার চালু হয়েছে নিষিদ্ধ যানগুলো। দেখলে মনেই হবে না যে, মহাসড়কে এগুলো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আছে বা কখনও নিষিদ্ধ ছিল। সরকারী সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে সারাদেশের মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক) ও মোটরচালিত রিকশাগুলো। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ এ যানবাহনগুলো।
আলাপকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বাস চালক আব্দুল বাতেন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা-গোমতী সেতু পাড় হলেই মহাসড়কের উপর শত শত অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার, মোটরচালিত রিকশার ভিড়। এসবের ভিড়ে গাড়ি চালানোই কষ্টকর। এগুলো মহাসড়কের মাঝখান দিয়া চলে। হর্ণ দিলেও সাইড দিতে চায় না। এসব যানবাহনের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাসোহারা দিয়ে এসব যানবাহন চলাচল করছে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশও জড়িত। পুলিশের চোখের সামনে থ্রি-হুইলারগুলো মহাসড়কে চলাচল করলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করে। তবে মাসোহারা না দিলে বা দিতে গড়িমসি করলে সেই যানবাহনকে মহাসড়কে উঠলেই আটক করতে দেরি করে না পুলিশ।
আমাদের জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতাদের দেয়া তথ্যমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা অংশের ১০০ কিলোমিটার এলাকা ও কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কে কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় নির্বিঘেœ ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার ও অটোরিকশা চলাচল করছে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড ও সুয়াগাজী, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার, আদর্শ সদর উপজেলার নন্দনপুর, আলেখারচর ও ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা এবং বুড়িচং উপজেলার ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকায় মহাসড়কে নির্বিঘেœ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটর লাগানো রিকশা চলাচল করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকা থেকে সুয়াগাজী এলাকা পর্যন্ত অটোরিকশা চলছে। জানতে চাইলে কুমিল্লা অঞ্চলের এক অটোরিকশা চালক বলেন, পুলিশের অভিযানের ওপর লক্ষ্য করে গাড়ি চালাতে হয়। ধরা পড়লে জরিমানার সঙ্গে রয়েছে মারধর। তাই পুলিশকে সন্তুষ্ট করে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় চলতে হয়। ওই চালক আরও বলেন, যখন অভিযান শুরু হয় তখন ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। এজন্য ভাড়া বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না।
মহাসড়কে অটোরিকশার চলাচল প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ কাঁচপুর এলাকার হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জনবল কম। তাই সব সময় সবদিকে নজর দেয়া সম্ভব হয় না। পুলিশের চোখের সামনেই থ্রি-হুইলার কিভাবে চলাচল করে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, সব সময় চলে না। আবার পুলিশ ইচ্ছা করলেই সব সময় এগুলো আটক করতে পারে না। সরকারী দলের প্রবাবশালী নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কখনও কখনও দেখেও না দেখার ভান করতে হয়। তবে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি এম এ মালেক বলেছেন, নিষিদ্ধ যানবাহন মহাসড়কে যাতে চলতে না পারে সেজন্য সবাইকে নির্দেশ দেয়া আছে। এতে গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমি এখন (গতকাল) অফিস থেকে চলে এসেছি। আগামীকাল (আজ) বিষয়টি দেখবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।