পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন দুটি মাল্টিপারপাস কন্টেইনার জাহাজের প্রথমটি- ‘এমভি উত্তরন এক্সপ্রেস’ গতকাল এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রূপসা নদীতে ভাসানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান- বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য প্রায় ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ দুটি কন্টেইনার জাহাজের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৪-এর ২৪ অক্টোবর।
গতকাল রূপসা নদীর তীরে খুলনা শিপইয়ার্ডের সবুজ চত্বরে প্রথম কন্টেইনার জাহাজ ‘এমভি উত্তরন এক্সপ্রেস’-এর লঞ্চিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাজাহান খান। খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর কে কামরুল হাসান (এল), এনজিপি, এনডিসি, পিএসসি-বিএন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান ছাড়াও এবং বিআইডব্লিউটসি’র চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সহকরী নৌবাহিনী প্রধান ও খুলনা শিপইয়ার্ডের পরিচালনা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যডমিরাল এসএএমএ আবেদিনও উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির ভাষণে নৌপরিবহন মন্ত্রী বর্তমান সরকারের আমলে দেশের সমুদ্র বন্দরসহ নৌ পরিবহন খাতের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশের অন্য সব সেক্টরের মত নৌপরিবহন খাতেরও কোন উন্নতি হয়নি। বঙ্গবন্ধুই তার সাড়ে ৩ বছরের শাষণামলে ৭টি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন নৌপথ রক্ষায়। তার হত্যার পরে দেশে কোন ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়নি। মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেলটির সাথে সংযুক্ত বিপুলসংখ্যক খাল জিয়াউর রহমান সরকার লীজ প্রদান করে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ঐ চ্যানলেটি বন্ধ হয়ে যায়। নৌপরিবহন মন্ত্রী বলেন, আমরা বহু কষ্ট করে সব ধরনের নৌযান চলাচলের লক্ষে মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেলটি উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের সময় মোংলা বন্দর প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বন্দরটি বছরে সাড়ে ১১ কোটি লোকশান গুণছিল। সেখান থেকে গত অর্থ বছরে মোংলা বন্দর ৬৫ টাকা মুনাফা করেছে। এবন্দরের চ্যানেল রক্ষায় দুটি ড্রেজারও সংগ্রহ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ২২ ধাপ এগিয়ে গত বছর ৯৮ থেকে ৭৬তম স্থানে উঠে এসেছে বলেও জানান নৌপরিবহন মন্ত্রী। তিনি খুলনা শিপইয়ার্ডের কাজের মান ও দক্ষতার প্রশংসা করে বলেন, ভবিষ্যতে বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি’র নৌযান তৈরী ও মেরামত কাজ যাতে এখানে দেয়া হয় সে ব্যাপারে ইতোমধ্যেই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে খুলনা শিপইয়ার্ডের এমডি কমোডর কে কামরুল হাসান বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শী সিদ্ধান্তে মৃত প্রায় খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে এর বার্ষিক টার্নওভার ১৬ কোটি থেকে গত অর্থ বছর ৪৪০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। গতবছর প্রতিষ্ঠানটি এ যাতকালের সর্বোচ্চ ৬৪.৬২ কোটি টাকা মুনফা অর্জন করে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, নৌবাহিনীর এ প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ভ্যাটসহ বিভিন্ন কর বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রায় ৩০ কোটি টাকা প্রদান করেছে। কমোডর কামরুল হাসান বলেন, বিশ্বে নৌনির্মাণ শিল্পে ৪শ’ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। এর ১% যদি বাংলাদেশে আসে তবে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার বাজার আমরা ধরতে পারব। তিনি খুলনা শিপইয়ার্ডের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী পায়রা বন্দরের কাছে খুলনা শিপইয়ার্ডের জন্য একটি ফরোয়ার্ড ইয়ার্ড নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সেখানে প্রায় ২শ’ একর জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও খুব শিঘ্রই খুলনা শিপইয়ার্ড নিজস্ব ডিজাউন হাউজ গড়ে তুলতে যাচ্ছে। যা এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য এক মাইলফলক হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানের শেষে প্রধান অতিথি সুইস টিপে মাল্টিপারপাস কন্টেইনার জাহাজ ‘এমভি উত্তরন এক্সপ্রেস’ লঞ্চিং করেন। মন্ত্রী সুইস চাপার সাথে এ নৌ নির্মাণ কারখানাটিতে সাইরেন বেজে ওঠে। সাথে সাথেই বিশাল স্পীপওয়ে থেকে নৌযানটি রূপসা নদীতে ভাসানোর কার্যক্রমও শুরু হয়। আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন দুটি কন্টেইনার জাহাজই বিআইডব্লিউটিসি’র কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এসব কন্টেইনারবাহী নৌযানের প্রতিটির দৈর্ঘ প্রায় আড়াইশ’ ফুট ও প্রস্থ প্রায় ৫০ ফুট। নৌযানগুলোর প্রতিটিতে একই সাথে ২০ ফুট দৈর্ঘের ১৫৮টি করে কন্টেইনার বহন করা যাবে। প্রতিটি নৌযানে ৮২৯ অশ্ব শক্তির বিশ্বমানের দুটি করে মূল ইঞ্জিন ছাড়াও ১৯১ কিলোওয়াটের ২টি ও ৫০ কিলোওয়াটের আরো একটি করে জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। নৌযানগুলো প্রতি ঘণ্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল বেগে দেশের উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম করতে সক্ষম। পূর্ণ বোঝাই অবস্থায় নৌযানগুলোর গভীরতা দাঁড়াবে প্রায় ১৫ ফুটের মত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।