Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যশোরের গ্রামে গ্রামে মধুবৃক্ষ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি

প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

যশোর থেকে রেবা রহমান : শীত আসছে এক-দু’পায়ে। যশোরের গ্রামে গ্রামে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ। খেজুরগাছকে বলা হয় মধুবৃক্ষ। যশোরের যশ খেজুরের রস। প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে মধুবৃক্ষ পরিষ্কার করা। ডালপালা কেটে পরিষ্কার করার পরই দফায় দফায় চাচ দেয়া হবে। বসানো হবে কঞ্চির নলি, যা দিয়ে খেজুরগাছ থেকে বেয়ে আসবে সুমিষ্ট রস। মাটির ভাঁড় বসিয়ে খেজুরের গাছ থেকে সংগ্রহ হবে রস। পুরো শীতকাল চলবে মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ উৎসব। গ্রামে গ্রামে তৈরি হবে খেজুরের গুড় ও পাটালি। রস জ্বালিয়ে ভিজানো পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়বে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। দানা, ঝোলা ও নলেন গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণই আলাদা। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। খেজুরের রস, গুড় ও পাটালির কদর প্রতি বছরই বাড়ছে। রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যায় গুড় ও পাটালি নিয়ে। বিশেষত্ব হচ্ছে যত শীত তত মিষ্টি ও সুস্বাদু হয় খেজুরের রস। ঠকঠকে শীতের গুড় ও পাটালির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অসময়ে হাজারো চেষ্টা করেও শীত মৌসুমের আসল গুড় পাওয়া যাবে না। পাওয়া গেলেও তা হবে ভেজাল কিংবা চিনি  মেশানো। তাই শীত মৌসুমে সবাই খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি সংগ্রহের অপেক্ষা করে থাকে। আর ক’দিন পরই শহর থেকে গ্রামে ঢুকলেই শীতের ঝিরঝিরে বাতাসে ভেসে আসবে রস-গুড়ের মিষ্টি গন্ধ। গ্রামীণ পরিবেশকে একরকম মাতিয়ে তুলবে রস-গুড়।
বর্তমানে পুৃরোদমে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে। গাছিরা ধারালো দা হাতে ছুটছেন খেজুরগাছের কাছে। মোটা দড়ি কোমরে বেঁধে পাখির মতো ঝুলে দা দিয়ে গাছ কেটে তাতে মাটির ভাঁড় ঝুলানো হবে। মৌসুমের শুরুতে খেজুরগাছিদের চোখেমুখে খুশির চিহ্ন। তাদের খুশি ম্লান হয়ে যায় যখন উপযুক্ত মূল্য না পায় রস, গুড় ও পাটালির। তাছাড়া খেজুরগাছের সংখ্যাও কমে গেছে। আগের মতো বিরাট লাভজনক না হলেও মৌসুমি আনন্দ গাছিদের নতুন এক গতি সৃষ্টি করে থাকে। এবারও তার ব্যতয় ঘটছে না। তবে আগে প্রতিটি গ্রামে প্রায় বাড়ি বাড়ি রস ও গুড় তৈরির রমরমা অবস্থা ছিল। এবার একেবারেই কম। কোনো কোনো গ্রামে খেজুরগাছ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গাছ থাকলেও গাছি নেই। অথচ খেজুরের গুড় শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ ছিল, যা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই।
গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আঙ্গিনায় ও মাঠে জমির আইলে কিংবা বাগানে অযতœ-অবহেলায় ও সম্পূর্ণ বিনা খরচে বেড়ে ওঠা ‘মধুবৃক্ষ’ খেজুরগাছ। প্রতি বছর শীত মৌসুমে মানুষের রসনা তৃপ্তির জোগান দিয়ে আসছে। খেজুরের রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা গুড়, নলেন গুড়, মিছরিদানার গুড় ও পাটালি তৈরির দৃশ্য অনেকটাই অভিনব মনে হয়। পুরো শীতে গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক এই উৎসব চলে আসছে আবহমানকাল ধরে। এর পেছনে লুকিয়ে আছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক বিরাট সম্ভাবনা। কিন্তু সরকারিভাবে কখনোই কাজে লাগানো হচ্ছে না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগ নেয়া হলে দেশের চাহিদা পূরণ ছাড়াও প্রতি বছর বিদেশে গুড় ও পাটালি রফতানি করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আয় করা সম্ভব বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাদের কথা, এর জন্য বাড়তি খরচ কিংবা আবাদি জমি নষ্ট করার প্রয়োজন পড়বে না। দেশের সড়কপথ, রেলপথ, জমির আইল, পতিত জমি ও বাড়ির আঙ্গিনায় কোটি কোটি খেজুরগাছ লাগানো সম্ভব। তাতে উন্মোচিত হবে দেশের অর্থনীতির এক নতুন দ্বার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যশোরের গ্রামে গ্রামে মধুবৃক্ষ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ