পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : যে বাগানে ফুল নেই; সে শুষ্ক বাগান, যে নদীর ঢেউ নেই; সে মরা গাঙ, যে বসন্তে কোকিলের গান নেই; সে বসন্ত যৌবনহীন। ফুলহীন বাগান, ঢেউহীন নদী ও কুহুকুহু ডাকহীন বসন্ত কাছে টানে না। পাখির কুহুকুহু সুর, ভ্রমরের গুনগুনানী, অবারিত জোছনা মানুষের মনকে পুলকিত করে। জীবন সংসারে সন্তানই ফুল। শিশুরা পাখি। ওদের কান্নাই নদীর ঢেউ, কোকিল-ভ্রমরের গান। শিশুর আদর সোহাগে আছে জোছনার আকুলতা ও তারার বেদনা। বাইরে দিনভর ঘামঝরা খাটুনির পর ঘরে ফিরে সন্ধ্যায় সন্তানের নরম গালে চুমুর আলপনা পৃথিবীর সব সুখ-শান্তি ও আনন্দ-বেদনা কাব্যের চিত্রকল্প। সংসার জীবনের গাঙে ভরা বর্ষার পূর্ণতা দেয় সন্তান। কিন্তু দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের পাঁচ বছরের পূজার পিতা সুবল রায় নন্দীর অবস্থা কি? খাদিজার বাবাই বা কেমন সুখ-শান্তি পাচ্ছেন?
পাঁচ বছরের শিশুর পূজার ওপর যে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তা দেখে শিউরে উঠছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। অথচ তারা নিত্যদিন এমন রোগীর চিকিৎসা করেন। পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুর শারীরিক অবস্থা কোন পর্যায়ে গেলে ডাক্তাররা শিউরে ওঠেন! কোন মানুষ একটি শিশুর ওপর এ ধরনের পাশবিকতা চালাতে পারে? বাস্তবতা হচ্ছে সমাজে এ ধরনের পশুত্বের ঘটনা ঘটছে। যতই ডিজিটাল দেশ গড়ার স্লোগান দেয়া হোক না কেন; এ ঘটনা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার এক ক্ষয়িষ্ণু দিককেই তুলে ধরছে। নির্যাতিত শিশুটির বয়স মাত্র পাঁচ বছর। শিশুটির গাল, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। শরীরে কামড়ের দাগ। ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাকার ক্ষত। যাকে জ্যাঠা বলে ডাকত সেই সাইফুল আলমের বিকৃত পাশবিকতার শিকার হয়েছে পূজা। এই সাইফুলদের বিচার হবে কি? আর ৫ বছর আগে যে সংসারে পূজার আবির্ভাব বাগানের ফুল হয়ে ঘটেছিল সে সংসারের অবস্থা কি? মেয়ের তুলতুলে গালে ¯েœহের চুমু দিয়ে বাবা-মা কি প্রশান্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন? গত সপ্তাহে ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার একটি বাসার দরজা ভেঙে সন্ত্রাসীরা ঢুকে ওই বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে ছিনিয়ে নেয় টাকা ও মুঠোফোন। এরপর ওই বাসার ১৫ বছরের কিশোরী মেয়েটিকে ধর্ষণ করে চলে যায়। গতকাল নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নে পঞ্চম শ্রেণীর ১১ বছর বয়সী এক ছাত্রী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর আগে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলায় নবম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। ছাত্রলীগ নেতার নিষ্ঠুরতায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিলেটের খাদিজার পরিণতি সবার জানা। এ কোন সমাজে আমরা বাস করছি?
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে ৩৬ জন শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশু অধিকার ফোরামের হিসাবে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর ৯ মাসে ৩২৫ শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়। এদের মধ্যে ১৫ শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। আর আইন ও সালিস কেন্দ্রের তথ্য হলো গত ৯ মাসে শিশুদের ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি, বলাৎকার, উত্ত্যক্তকরণ, শিক্ষকের মাধ্যমে যৌন নির্যাতন, পারিবারিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৭৫৪টি। এর মধ্যে মামলা হয়েছে মাত্র ১৮৪টি। ৮টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর এবং আসকের নিজস্ব পর্যালোচনার ভিত্তিতে তৈরি করা এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের ৯ মাসে পাশবিকতার ঘটনা ঘটেছে ১৯০টি। মামলা হয়েছে মাত্র ১১৭টি।
ডিজিটাল যুগের স্লোগান তোলা হয়। নারীর অধিকারের নামে এনজিওগুলো বিদেশ থেকে টাকা এনে নারীর অধিকার আদায়ের স্লোগান দিচ্ছে। নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার কৌশল শেখাচ্ছে। পাশাপাশি আধুনিক হয়ে পশ্চিমা ধাচে জীবনযাপনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এতে বেলেল্লাপনা বাড়ছে। নৈতিক শিক্ষার বদলে মেয়েরা সাজগোজে তথাকথিত আধুনিক হওয়ার চেষ্টা করছে। এনজিও নেত্রীদের নারী অধিকারের দাবিতে কি গ্রামের গরিব মেয়েরা পড়ে না? বছর দেড়েক আগে মাদারীপুর, শরীয়তপুর জেলার পদ্মার চরের গ্রামগুলো ঘুরে দেখেছি গ্রামে শত শত মেয়ে যাদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর আইবুড়ো হয়ে পিতা-মাতার ঘরে রয়েছে। যৌতুকের কারণে বিয়ে হচ্ছে না। গত বছর সিরাজগঞ্জ, বগুড়ার যমুনার চরের গ্রামগুলোতে একই চিত্র দেখেছি। গত মাসে রংপুরের তিস্তা ও কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল ঘুরে দেখেছি শত শত মেয়ে পিতা-মাতার ঘাড়ে বোঝা হয়ে রয়েছে। যৌতুকের কারণে তাদের বিয়ে হচ্ছে না। যাদের বিয়ে হচ্ছে যথাসময়ে চাহিদামতো যৌতুক দিতে না পারায় অধিকাংশের সংসার ভেঙে গেছে। যাদের বিয়ে ভাঙেনি তাদের অনেকেই স্বামী-শাশুড়ির জুলুম-নির্যাতন সহ্য করছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশে এ কেমন সমাজ? একদিনে এনজিওর বিদেশী টাকায় নারী স্বাধীনতার আন্দোলন; অন্যদিকে গ্রামের গরিব মেয়েরা যৌতুকের বলী?
পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে দেশ-সমাজের থিতু হয়ে থাকার সুযোগ নেই। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে; মানুষের জীবনধারা যাচ্ছে পাল্টে। কৃষকরা সরকার থেকে তেমন সুবিধাই পাচ্ছেন না অথচ শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বাম্পার ফসল ফলাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের কর্মতৎপরতায় নানা ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রের বদৌলতে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। কমেছে শিশুমৃত্যুর হারও। প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। একদিকে উন্নয়ন অন্যদিকে নারী ও শিশুর ওপর পাশবিক নির্যাতন চলবে এটা মেনে নেয়া যায় না। এটা আদিম যুগ নয়; নয় জাহিলিয়াতের যুগও। এ যুগে একজনের ঘরে ঢুকে পাশবিক নির্যাতন করে বুক ফুলিয়ে চলে যাওয়া কিভাবে সম্ভব? দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে। ছুরি চালিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হচ্ছে। এসব ধর্ষক ও অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো উদাহরণ নেই কেন? সিলেটের খাদিজাকে রক্তাক্ত করা ছাত্রলীগ নেতার কি বিচার হবে? পাঁচ বছরের শিশু পূজার ধর্ষণকারী সাইফুলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আদৌ কি কোনো শাস্তি হবে তার? কারণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ মানুষ দেখছে কই?
বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায়। দেশকে পরিণত করতে চায় মধ্যম আয়ের দেশে। গণতন্ত্রকে শিঁকেয় তুলে রেখে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য নানামুখী পরিকল্পনা করছে সরকার। কিন্তু সমাজকে এ অবস্থায় রেখে কি সেটা সম্ভব?
এখন শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এ শিক্ষায় কি শিখছি? নৈতিক শিক্ষার পাঠ যেন উঠে যাচ্ছে। আগে শিশুদের পড়ানো হতো ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি/সারাদিন আমি যেন ভালোভাবে চলি; আদেশ করেন যাহা গুরুজনে/ সেই কাজ আমি যেন করি ভালো মনে’। এখন পড়ানো হয় ‘আগডুম বাগডুম ঘোড়ারডুম সাজে/ ঢাকঢোল বাজে/বাজতে বাজতে চলল ঢুলি’। এ শিক্ষায় শিশুরা কি শিখছে? একদিকে ডিজিটাল। সবার হাতে হাতে মোবাইল। গুগলের বদৌলতে ফেসবুক-টুইটার-ব্লগের মাধ্যমে একে অন্যের খুব কাছাকাছি। অন্যদিকে শিশুর ওপর পাশবিক নির্যাতন? আহা! কি ভয়ঙ্কর সুন্দর সমাজ? আগে তো এত ভয়ঙ্করতা-নিষ্ঠুরতার খবর খুব কমই পাওয়া যেত। ডিজিটাল যুগে ৯ মাসে ৩২৫ শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার? এ সমাজ তো আমরা চাই না। আগে মানুষ বিপদে পড়লে অন্যেরা এগিয়ে যেতেন। এখন দিনেদুপুরে পথে খাদিজাদের রক্তাক্ত করলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসে না; না জানি বিপদ হয়! তরুণদের অবস্থা আরো খারাপ। অপরাজনীতির কারণে তারুণ্যের তেজ নেই, দীপ্ততা নেই, রাগ নেই, কষ্ট নেই, প্রতিবাদী চেতনা নেই। আছে কেবল কোনো না কোনো রাজনৈতিক শক্তির পক্ষ হয়ে বহুদূর যাওয়া। আয়-রোজগার করা। নেই নিজের ভাবনায়, আপন চেতনায় জ্বলে ওঠার আকাক্সক্ষা! আছে কেবল রাজনৈতিকভাবে পক্ষ-বিপক্ষ নেয়ার শক্তি। এই তারুণ্য, এ ডিজিটাল আধুনিকতা আমরা চাই না। আগের মতোই থাকতে চাই। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ‘দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য/ লও এ নগর’-এর মতোই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।