পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্লভ বৃক্ষের অভয়ারণ্য বলদা গার্ডেন। ঐশ্বর্যে ঘেরা প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রিয় জায়গা। ঢাকার ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে একটি। দেশে-বিদেশে রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে কালের সাক্ষী এ উদ্যানটি। এ উদ্যানকে বলা হয় ফুল ও উদ্ভিদের জীবন্ত জাদুঘর। রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত এটি। এ গার্ডেনকে ফুল ও উদ্ভিদের মিউজিয়াম বা জাদুঘর হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। ২০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে বাগানে ঢুকতে হয় দর্শনার্থীদের। বাংলাদেশ বন অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় এই উদ্যানটি।
জানা যায়, জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ৩.৩৮ একর জমির ওপর ১৯০৯ সালে উদ্যানটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৮ বছর। নানান ধরনের বৃক্ষের সমাহার ঘটেছে এখানে। নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে নানা রকম ফুল, উদ্ভিদ আর গাছগাছড়া এনে রোপণ করেন বলধা গার্ডেনে। ভাওয়াল জমিদার নারায়ণ রায় চৌধুরী ছিলেন একজন প্রকৃতি প্রেমিক। সৌখিন এই মানুষটি তার জমিদারীকালীন সময়ে বলধা জমিদার বাড়ির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বাগানবাড়ি নির্মান করেন। জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ওয়ারী, টিকাটুলী ও নারিন্দার ঠিক মাঝখানে দুটি ভাগে বলধা গার্ডেন তৈরি করেন।
বলধা গার্ডেনকে সাইকি ও সিবলি নামে দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। সাইকি অঞ্চলে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার নেই। এ অঞ্চলে শুধু উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা বা গবেষকরা পরিদর্শন করতে পারেন। আর সিবলি অংশ সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। দুই অংশে দেশি-বিদেশি ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮ হাজারের বেশি উদ্ভিদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা আছে। ফুল ও উদ্ভিদের জাদুঘর হিসেবে খ্যাত বলধা গার্ডেনে শতায়ু উদ্ভিদও রয়েছে। এখানে রয়েছে বিদেশি ও দুষ্প্রাপ্য অনেক উদ্ভিদ। এখানে এমন অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। এখানে শুধু ক্যাকটাসই রয়েছে ৭০ প্রজাতির। এ ছাড়াও যেসব প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে এ বাগান, সেগুলো হলো- অর্কিড, জলজ উদ্ভিদ, শিলালগ্ন প্রজাতি দেয়াল লতা, বৃক্ষশালাসহ বিবিধ গাছপালা।
১৯৪৩ সালে জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করলে বাগানের উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যায়। ব্রিটিশ শাসনের আওতায় অব্যবস্থাপনায় উদ্যানটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাকিস্তান আমলে কিছু উন্নয়ন কর্মসূচি নেয়া হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। তবে স্বাধীনতার পর বন বিভাগের অধীনে নব উদ্যোমে শুরু হয় এর উন্নয়নকাজ। বলধা ফিরে পায় তার প্রাণ। বাগানটিতে বিভিন্ন সময়ে দেশি-বিদেশি বরেণ্য ব্যক্তিরা এসেছেন। নানা ধরনের বৃক্ষ রোপণ করেছেন। এদের মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ অনেকের নাম জড়িয়ে আছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ গার্ডেন পরিদর্শনে এসে বহুজাতিক ফুলের সমাহার দেখে বিস্মিত ও বিমোহিত হন। তিনি ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার বিখ্যাত ক্যামেলিয়া কবিতাটি রচনা করেছিলেন।
বলধা গার্ডেনের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে নীল, লাল, সাদা, হলদে জাতের শাপলায় ভরা অনেকগুলো শাপলা হাউজ, বিরল প্রজাতির দেশি-বিদেশি ক্যাকটাস, অর্কিড, অ্যানথুরিয়াম, ভূর্জ, বিচিত্র বকুল, ক্যামেলিয়া, অশোক, আফ্রিকান টিউলিপস, আমাজন লিলি এবং কৃত্রিম সুড়ঙ্গসহ একটি ছায়াতরু। কর্মব্যস্ততার মাঝেও কেউ কেউ ছুটে আসেন প্রকৃতির কাছে। দেশি-বিদেশি হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে বলধা আজও মুখরিত।
তবে উদ্যানের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সূর্যঘড়ি। এই ঘড়ির বিশেষত্ব হলো এটি রৌদ্রোজ্জল দিনে সঠিক সময় দেয়। যার মাধ্যমে সূর্য নিজেই সময় বলে দেয়। লাল রঙের ঘড়িটি সূর্যের সঙ্গে মিলিয়ে সময় ওঠে। অনেকে সূর্য ঘড়ির সামনে এসে বা পাশে বসে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ছবি তোলেন। এছাড়াও দর্শনার্থীরা শঙ্খনদ, জয় হাউস এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ফুলের সঙ্গে নিভিরভাবে সময় কাটান। পুকুর পাড়ে শান বাধানো ঘাটে বসে অনেকে লেখেন কবিতা ও গল্প। স্বচ্ছ পুকুরের পানিতে নানা প্রজাতির মাছ খেলা করে। তবে তেলাপিয়ার আধিক্যই বেশি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির কচ্ছপ। গেটের কাছের ছোট দোকান থেকে দর্শনার্থীরা ২০ টাকা মূল্যের মাছের খাবারের পেকেট কিনে ঘাটে বসে মাছের মুখে তুলে দিচ্ছেন।
যাত্রাবড়ী এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার বলেন, বলধা গার্ডেনে ঘুরতে এসেছি। অনেক আগে একবার এসেছিলাম। এখানে অনেক গাছগাছাললির সমাহার রয়েছে। শান্ত একটি জায়গায় এসে ভালো লাগছে। তবে যেহেতু শিক্ষার একটা অংশ এর সঙ্গে জড়িত, তাই এ বাগান ব্যবহারে মানুষের আরও সচেতন হওয়ার কথাও বললেন তিনি।
দর্শনার্থী শরীফুল ইসলাম বলেন, এটি বৃক্ষ সমৃদ্ধ একটি উদ্যান। এখানে অনেক শিক্ষার্থী ও গবেষক নিয়মিত আসেন। তবে সাইনবোর্ডে, তাতে লেখা মাদকমুক্ত এলাকা। তবে ভেতরে অনেককেই ধূমপান করতে দেখা যায়। আরেকটি বিষয় কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা দরকার সেটি হলো এখানে কিছু লোক আসেন যাদের অশ্লীল কর্যকলাপ করতে দেখা যায়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। তা নাহলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এমন সুন্দর একটি স্থানে আসা সম্ভব না।
বলধা গার্ডেনে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করেন হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের এখানে অনেক বিরল প্রজাতি ও মূল্যবান বৃক্ষ আছে। আমরা দায়িত্বশীলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছি। গাছপালা দেখাশোনা করছি যাতে কোন গাছের ক্ষতি না হয়। তবে এখানে শিক্ষার্থী ও গবেষক ছাড়াও অনেকে সাধারণ দর্শনার্থী এখানে আসেন। সপ্তাহের প্রত্যেক দিনই দর্শনার্তি আসেন তবে শুক্র ও শনিবার লোকজন বেশি আসেন। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।