পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সোহাগ খান : সর্বশেষ চুক্তিভিত্তিক চার এমডির আমলে খেলাপী ঋণ প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেলেও সরকার আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দিয়েছেন। ২৯ আগস্ট রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকে তিনবছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক তিনজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। চুক্তিভিত্তিক সংস্কৃতির কারণে একদিকে যেমন নিয়মিত কর্মকর্তারা বঞ্চিত হয়ে বিদায় নিচ্ছেন। উল্টোদিকে সরকারী ব্যাংকগুলোর সূচক দিনকে দিন নিম্নমুখী হচ্ছে।
বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে বড় তিনটি কেলেঙ্কারী হচ্ছে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক, বেসিক ব্যাংকের সাগর চুরি ও বিডিবিএলের কেলেঙ্কারী। সোনালী ব্যাংকের এমডি হলমার্ক কেলেঙ্কারীর পর কানাডায় পালিয়ে গেলেও বিচারাধীন অবস্থায় জেল খেটে মারা গেছে ব্যাংকটির রূপসী বাংলা মাখার একজন সহকারী মহাব্যবস্থাপক। কিন্তু মূল হোতা এমডি হলেও তিনি ধরাছোঁয়ার বাহিরে। বেসিক ব্যাংকের এমডি ফখরুল ইসলাম এজিএম থেকে একসাথে তিনটি প্রমোশন নিয়ে আব্দুল হাই বাচ্চুর হাত ধরে হয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির এমডি। মাত্র ৪ বছর দায়িত্ব পালন শেষে একটি লাভজনক ব্যাংককে পথে বসিয়েছেন এই এমডি। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারীকে বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে মহাসাগর চুরি বলে অভিহিত করলেও বাচ্চু এবং এমডি ফখরুল ইসলামকে সম্মানজনক প্রস্থানের ব্যবস্থা করেছে স্বয়ং অর্থ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে বেসিক ব্যাংকের এমডি আমেরিকা অবস্থান করছে বলে ব্যাংকটিরই একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। অথচ ব্যাংকটির শত শত নিরীহ কর্মী যারা শুধু উপরের আদেশ পালন করেছেন তারাই এখন মামলার ফাঁদে।
জনতা ব্যাংকের বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারীর মূল হোতা এখন দিব্য ঐ ব্যাংকটির ডিএমডি থাকলেও এখন গ্রেফতার হয়েছেন নাম মাত্র ডিজিএম। চেয়ারম্যান এবং চুক্তিভিত্তিক এমডি দিব্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বিডিবিএল এর ভুয়া ঋণের জনক ড. জিল্লুর রহমান ব্যাংকটির সকল শেয়ার বিক্রি করে গেছেন। এমনকি শুধু কাগজের উপর শত শত কোটি টাকা ঋণ দিয়ে ব্যাংকটিকে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে গেলেও সে এখন সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নতুন লুটপাট শুরু করছে বলে জানা গেছে। ব্যাংকটি এখন খেলাপী ঋণের দায়ে বিনিয়োগ বন্ধ করেছে। ফলে ব্যাংকটির নিয়মিত গ্রাহকরাও এখন ব্যাংকটি ছাড়ছেন বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ বিদায় নেয়া দুই এমডি এবং বরখাস্ত হওয়া এক এমডির ব্যাংকের অবস্থা আরও করুণ। ৫ম মেয়াদপূর্তিতে বিদায় নিয়েছে সোনালী ব্যাংকের এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত এবং চতুর্থ মেয়াদ শেষ করছেন রূপালী ব্যাংকের এমডি এম ফরিদ উদ্দিন। তবে মেয়াদপূর্তির ২ দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশে বরখাস্ত হন অগ্রণীর ষষ্ঠবারের এমডি আব্দুল হামিদ।
এই ব্যাংকগুলোর ২০১৬ সালের জুনভিত্তিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দিন দিন ব্যাংকগুলো আরও খারাপ অবস্থায় যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ, অবলোপনের পরিমাণ, লোকসান, লোকসানি শাখা, মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। অন্যদিকে কমে আসছে বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের পরিমাণও। যার ফলে বিনিয়োগ বন্ধ বলা যায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই তিন ব্যাংকে।
চুক্তিভিত্তিক এমডি নিয়োগের পক্ষে সরকারের বক্তব্য থাকে তারা অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যাংকগুলোর উন্নতি ঘটাবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে উল্টো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে চুক্তি ভিত্তিক তিন এমডি দায়িত্ব ছাড়ার আগে ব্যাংকগুলোকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। তাদের মেয়াদ শেষ ছয় মাসের ব্যবধানে সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের লোকসানি বেড়েছে ৩৪৭টি। জুন শেষে তিন ব্যাংকের লোকসানি শাখা দাঁড়িয়েছে ৫১৫টি। ডিসেম্বরে লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ১৫৮টি। সোনালী ব্যাংকের লোকসানী শাখা ১২৪টি থেকে বেড়ে ২৯০টি, অগ্রণী ব্যাংকের ৩৪টি থেকে বেড়ে ৯৯টি এবং রূপালী ব্যাংকের ১০টি থেকে বেড়ে লোকসানি শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৬টি।
চুক্তিভিত্তিক এমডিরা অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজ করলে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসার কথা। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। জুনে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ডিসেম্বরের ৪ হাজার ২২৪টি কোটি টাকা থেকে বেড়ে জুনে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে জুনে হয়েছে ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আদায়ের হার মাত্র ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। নিয়মিত ঋণের আদায়ের হার মাত্র ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। অথচ জুনভিত্তিক হিসেবে চারটি বাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক ৩৪৬ কোটি টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংক ১৪৮ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এছাড়া রূপালী ব্যাংক ৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
কাক্সিক্ষত হারে আয় না বাড়ায় ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এছাড়া অগ্রণীর ১৯৯ কোটি টাকা, জনতার ৬৬৪ কোটি টাকা ও রূপালীর ১ হাজার ৫২ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে। এরপরে সোনালী ব্যাংকে ৩ বছরের জন্য ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদকে, রূপালী ব্যাংকে ৩ বছরের জন্য আতাউর রহমান প্রধানকে, অগ্রণী ব্যাংকে শামসুল ইসলামকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। যাতে করে ব্যাংকিং খাত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রবীণ ব্যাংকাররা।
রূপালী ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক বলেন, আমাদের ব্যাংকে একজন নিয়মিত উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন, যার নাম খলিলুর রহমান চেীধুরী। তিনি ব্যাংকিং খাতে কর্মরত সকল এফসিএ দের মাঝে সিনিয়র থাকলেও শুধুমাত্র লবিং না থাকায় স্যার কোন প্রমোশন পাননি। শেষ মূহূর্তে তিনি হতাশ হয়ে নিজের উপরের নিজেই অত্যাচার চালান। এখন নিজেকে ঘরে আবদ্ধ করেছেন শুধু না পাওয়ার হতাশায়।
অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক জমির হোসেন গাজী বলেন, চুক্তিভিত্তিক মানেই ব্যাংক ধ্বংস। কারণ তারা ব্যাংকের স্বার্থ না দেখে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় নিম্নস্তরের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দেন। একজন সহকারী-সচিব যদি সচিব হয়ে বিদায় নেন? তবে একজন সিনিয়র অফিসার কেন নিজ ব্যাংকের নিয়মিত এমডি হবেন না। ব্যাংকারদের অপরাধ কি!
এবিষয়ে বিশিষ্ট ব্যাংকার হেলাল আহম্মেদ চোধুরী বলেন, চুক্তিভিত্তিক এমডি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বারবার নিয়োগ পাওয়ার রীতিতে পরিণত হওয়ার দশা। যার ফলে নিম্নের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজের স্পৃহা কমে যাচ্ছে বলে মনে করি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, চুক্তিভিত্তিক এমডি এখন একরকম খেয়া ঘাটের ইজারার মত রীতিতে পরিণত হয়েছে। যে ইজাদার নির্দিষ্ট অংকের টাকার বিনিময়ে একটি ব্যাংকে তিন বছর লুটপাটের সুযোগ পায়। যাতে করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরছে বলে মনে করেন প্রবীণ এই ব্যাংকার।
তার মতে, চুক্তিভিত্তিক এমডি নিয়োগ বন্ধ করলেই ব্যাংকিং খাতের লাগাম টানা যাবে। কারণ নিয়মিতদের প্রমোশন দিয়ে এমডি বানালে। তাদের দায়বদ্ধতা থাকবে অনেক বেশী। তারা কোন কোন করার আগে ভাববেন সারাজীবনের অর্জনের কথা। নিয়মিতদের নিয়োগ দিলে নিম্নস্তরের কর্মকর্তাদের কাজের স্পৃহা বাড়বে বলেও মনে করেন এই প্রবীণ ব্যাংকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।