Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সায়েদাবাদ শিশুপার্কে ভুতুড়ে পরিবেশ

মাদক সেবনের স্পটে পরিণত

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

পুরান ঢাকার স্বামীবাগ ও সায়েদাবাদের সংযোগস্থলে অবস্থান সায়েদাবাদ শিশুপার্কের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় একমাত্র বেসরকারি শিশুপার্ক ছিল এটি। বর্তমানে পার্কটির অবস্থা বেহাল। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার পর থেকে এ পার্কের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়। এখন পার্কের ডিজাইন করা মূল ফটকের স্থাপনা ছাড়া আর কিছুই নেই।

জানা যায়, রাজধানীর ব্যস্ততম সায়েদাবাদ রেলক্রসিংয়ের পাশে স্বামীবাগ এলাকায় ৩০০/২২০ গজের পরিধি এ পার্কটির। ছোট পরিসরে হলেও এলাকার মানুষের চলাচল, সকাল বেলা হাঁটা ও শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল এটি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকতো। পথশিশুদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ছিল। সর্বমোট ১৩টি রাইড, ট্রেন, ভয়েজার বোর্ড, প্যারাটুপার, টুইস্টার, সুপার চেয়ার, ফ্লাওয়ার ক্যাপ, মিনি ট্রেন, মিনি ক্যাব, বেবি কার, মেরি গো, ওয়ান্ডার হুইল, বাইনস চপার, থ্রি-হর্স প্রভৃতি ছিল এখানে।

দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সায়েদাবাদ পার্কে ৪টি টিকেট কাউন্টার রাখা হয়েছিল। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ধীরে ধীরে পার্কে দর্শনার্থী কমে যায়। গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার তৈরির কাজ শুরুর পর থেকে কখনো ধুলাবালি, পানিবদ্ধতা কারণে পার্কটি বন্ধই হয়ে যায়। ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর যানবাহনের অবাধ যাতায়াত, ভাঙাচোরা সড়ক আর পার্কের বাইরে আবর্জনায় ভরা পরিবেশের কারণে লোকজন এখানে আসা বন্ধ করে দেন।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সায়েদাবাদ শিশুপার্কটি একেবারেই বন্ধ। সুনশান নিরবতা বিরাজ করছে পার্কের ভিতরে। নেই কোন স্থাপনা। আগের জৌলুস হারিয়ে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে একটি ভুতুড়ে পরিবেশ। প্রধান ফটকের স্থাপনা ছাড়া অন্য আর কিছুই নেই। নেই পার্কটির পূর্ব পাশের সীমানা প্রাচীর। দক্ষিণ পাশের সীমানা প্রাচীর থাকলেও গেট খোলা থাকে সবসময়। রাস্তার লোকজন পার্কটিকে গণটয়লেট হিসেবেই ব্যবহার করছেন। নোংরা ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে পার্কের ভেতরে হাঁটা যায় না। পার্কে ব্যবহৃত রাইডগুলোর স্থানে ভাঙা ইটের দেয়াল এখনো পড়ে আছে। বিশাল আকারের কয়েকটি গর্তে জমে আছে পানি। সেই পানিতে মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়েছে। পার্কের ভেতরে মূল্যবান বৃক্ষ মেহগনি, ক্রিসমাস ট্রি, আম, বহেড়া, জামরুলসহ নানা জাতের ওষুধি ও ফলের বৃক্ষ নষ্ট হচ্ছে। পার্কটি এখন মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড কাছে থাকায় এখানে মাদকাসক্তদের ভিড় থাকে সব সময়। কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে বেশ ক’জন কিশোরকে মাদক সেবন করতে দেখা গেছে। সর্বোপরি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে পার্কটি। পার্কটিকে কেন্দ্র করে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন।

বেসরকারি চাকরিজীবী মাকসুদুল হাসান বলেন, উন্নয়ন কাজের নামে অথবা অন্য কোন করাণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে সায়েদাবাদের শিশু পার্কটি। এতে সাধারণ পথচারীসহ স্থানীয়রা বসতেন, শরীরচর্চা করতেন। শিশুরা খেলাধুলার জন্য বাবা-মাকে নিয়ে আসতো। কিন্তু পার্কটি এখন পরিত্যক্ত।

স্থানীয় বাসিন্দা অবদুর রব বলেন, শিশু পার্কটি বন্ধ থাকায় এখানে মাদক সেবনের একটি স্পটে পরিণত হয়েছে। নানা বয়সী মানুষ এসে এখানে মাদক সেবন করে। রেল লাইনের পাশে প্রাচীর না থাকায় যে কেউ এখানে আসতে পারে। রাতের বেলা এ পথ দিয়ে চলাচল করতে ভয় লাগে। রাতে মাদকসেবী ও ছিন্নমূল লোকজন আড্ডা দেয়। ঢাকা শহরে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা এমনিতেই কম। নেই তাদের পর্যাপ্ত মাঠ বা খেলাধুলার সুযোগ। আগে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে এ পার্কে আসতেন, তবে দীর্ঘদিন ধরে পার্কটি বন্ধ থাকায় শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন, সায়েদাবাদ শিশুপার্কটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। নগরবাসীর জন্য এই স্থানে ভালো কিছু করার পরিকল্পনা আছে। উন্নয়ন কজের জন্যই মূলত পার্কটি বন্ধ রাখা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সায়েদাবাদ শিশুপার্ক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ