Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হোটেল বয় থেকে জাল নোট কারখানার মালিক

টার্গেট বাণিজ্যমেলা : এক লাখের জাল নোট ১৫ হাজারে বিক্রি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

বাণিজ্যমেলাকে টার্গেট করে জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি চলছিল পল্লবীর একটি বাড়িতে। ঘরে বসে কম্পিউটারে প্রিন্ট করে জাল টাকা বানাচ্ছিল ছগির হোসেন ও তার দলের সদস্যরা। গত দশ বছর ধরে এমন জাল টাকা তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছে তারা। পুরো এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরিতে খরচ হতো চার হাজার টাকা। এরমধ্যে একহাজার টাকার এক লাখের বান্ডিল ১৫ হাজার টাকা এবং পাঁচশ টাকার একলাখের বান্ডিল ১০ হাজার টাকা বিক্রি করা হতো। গত সোমবার রাতে রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা ছগির হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এসময় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা সমমানের জাল নোট, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুইটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, তিনটি প্রিন্টারসহ জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মুলহোতা ছগির হোসেন, মোছা. সেলিনা আক্তার পাখি ও রুহুল আমিন।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতো ছগির হোসেন। পরে ভ্যানে ফেরি করে পোশাক বিক্রি করতো। এরপর বড় ব্যবসায়ী বনে যায়। জাল নোট তৈরি ও বাজারজাত করাই ছিল তার কাজ।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জাল নোট তৈরি করে বিভিন্ন লোকদের কাছে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে আসছিল। চক্রটির মূলহোতা গ্রেফতার ছগির হোসেন এবং অন্যান্যরা তার সহযোগী। চক্রের সঙ্গে ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছে। হোটেল বয় থেকে জাল টাকা কারবারে জড়ানো ছগির গ্রেফতার ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় আসে। প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেয়। পরবর্তীকে ভ্যানে ফেরি করে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি শুরু করে। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রির সময়েই ছগিরের সঙ্গে ইদ্রিস নামক এক জাল টাকা কারবারির পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক ও জাল নোট তৈরির হাতেখড়ি হয়। ছগির প্রথমে জাল নোট বিক্রি ও পরবর্তীতে সেসব তৈরির বিষয় রপ্ত করেন। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। বছরখানেক জেল খেটে পুনরায় সে ২০১৮ সাল হতে জাল নোট তৈরি শুরু করে। তৈরি করা জাল নোটগুলো তার চক্রে থাকা অন্যান্য সহাযোগী রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য ৭/৮ জনের মাধ্যমে বিক্রি করে আসছিল।

তিনি বলেন, এ চক্রের মূলহোতা ছগির নিজেই পুরান ঢাকা হতে জাল নোট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি কেনে। তার ভাড়া বাসায় গোপনে বিশেষ কৌশলে এ-৪ সাইজের ২টি টিস্যু পেপার একসাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রঙিন প্রিন্টারে ডিজাইনকৃত টাকা তৈরি করা হতো। তিনি নিজেই প্রিন্টিং ও কাটিং করতো। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রিন্টিংয়ের কাজে অন্যান্যদের সম্পৃক্ত করা হতো না। জাল নোট তৈরির পর অন্যান্য সহযোগীদেরকে মোবাইলে কল করে তার কাছ থেকে জাল নোট নিয়ে যেতে বলতো। প্রতি এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরিতে ছগিরের খরচ হতো ৫/৬ হাজার টাকা। আর তিনি লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি করতেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। তার সহযোগীরা মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ ও বিক্রি করতো। টার্গেট বা চাহিদা অনুযায়ী ছগির প্রতিমাসে তার সহযোগীদেরকে বোনাসও দিতো।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ছগির জানিয়েছে, করোনাকালীন সময়ে মাঝে মাঝে ছগির নিজেও এ জাল নোট স্থানীয় বাজারে ব্যবহার করতো। কয়েকবার সে সাধারণ জনগণের হাতে ধরাও পড়েছিল। সাধারণত কোনো মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠানে তারা জাল নোট বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহার করত। সম্প্রতি পূর্বাচলে আয়োজিত বাণিজ্যমেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তারা তৈরির পরিকল্পনা করে ছগির। এলক্ষ্যে দীর্ঘ সময় ধরে সে জাল টাকা তৈরি করে আসছিল। ২০১৭ সাল থেকে ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের জাল টাকা তৈরি করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ছগির জাল নোট প্রিন্টিংয়ের সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয়ে ফেলত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে তাকে ধরতে না পারে সে জন্য গ্রেফতার ছগির ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করত।

তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার সেলিনা আক্তারের স্বামীও জাল নোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলে আছে। সেলিনা ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীর চরে একটি বিউটি পার্লারের বিউটিশিয়ান। স্বামীর মাধ্যমে এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের সাথে তার পরিচয় হয় এবং তিনি নিজেও এ চক্রে জড়িয়ে জাল নোট ব্যবসা শুরু করে। গ্রেফতার রুহুল আমিন চক্রের মূলহোতা ছগিরের অন্যতম সহযোগী। রুহুল আমীনের মাধ্যমে ছগিরের অন্যান্য সহযোগীদের পরিচয় হয়। রুহুল আমিন ও পাখি বিভিন্ন সময় ৫০০ টাকার জাল নোট বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিক্যালসহ ব্যস্ত এলাকায় নিজেরাই বিক্রি ও এক্সচেঞ্জ করে। জাল নোট তৈরি ও বিক্রয়ের মামলায় ইতোপূর্বে ২০১৭ সালে জেলে ছিল এবং বর্তমানে তার নামে মামলা চলমান রয়েছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাণিজ্যমেলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ