Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লায় স্টুডিওতে ছবি তুলতে গিয়ে কলেজ ছাত্রী ধর্ষিত

ধর্ষককে ধরছে না পুলিশ

প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : পল্লী এলাকার বেশিরভাগ স্টুডিও এখন অসামাজিক কাজের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রী কিংবা প্রবাসীর স্ত্রীদের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য কুমিল্লার পল্লী এলাকায় এধরনের বেশকিছু স্টুডিও রয়েছে। ওইসব স্টুডিও মালিকরা অর্থের বিনিময়ে অসামাজিক কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে। আবার ওইসব স্টুডিওতে টিনএজ ছেলে-মেয়েদের ডেটিং করার ব্যবস্থাও থাকে। বেশকিছু স্টুডিও’র মালিক রয়েছে যাদের সাথে একশ্রেণির বখাটেদের সখ্যতা রয়েছে। কোন মেয়ে একা ছবি তুলতে এলে কখনো স্টুডিও’র মালিক বা ফটোগ্রাফার দ্বারাও শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়ে থাকেন। আবার স্টুডিও মালিক বা তাদের পরিচিত বখাটের দ্বারাও লাঞ্ছিত এমনকি ধর্ষণের শিকারও হয়ে থাকে। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ ভারেল্লা ইউনিয়নের শোভারামপুর গ্রামের এক কৃষক কন্যা কলেজ ছাত্রীর সাথে। একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী উপবৃত্তির ফরমে ব্যবহারের জন্য একটি স্টুডিওতে ছবি তুলতে গেলে স্টুডিও মালিকের সহায়তায় এক বখাটে তাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার এক মাস অতিবাহিত হলেও আসামীদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারছে না। উপরন্তু ধর্ষকের পরিবারের হুমকিতে ওই ছাত্রীর বাবা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।  
জানা গেছে, কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার পারুয়ারা গ্রামের আবদুল মতিন খসরু ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে একই গ্রামের সাবেক পুলিশ কনস্টেবল রফিজ উদ্দিনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে বোরহান উদ্দিন বছর খানেক ধরে প্রেম নিবেদন করে আসছিল। প্রেমে সাড়া না পেয়ে কুমিল্লা সিটি কলেজের দ্বাদশের ছাত্র বখাটে বোরহান উদ্দিন প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করতো। কয়েকমাস আগে ওই ছাত্রী উত্ত্যক্তের বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে এনিয়ে সামাজিক সালিশ বসে। সালিশে বোরহানকে তিরস্কারসহ সতর্ক করে দেয়া হয় ভবিষ্যতে যেনো সে তাকে উত্ত্যক্ত না করে। সালিশের ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বোরহান। এরই জের ধরে বোরহান সুযোগ খুঁজতে থাকে তাকে লাঞ্ছিত করার। আর সেই সুযোগটি পেয়ে যায় গত ২২ সেপ্টেম্বর। ওইদিন সকালে ওই ছাত্রী কলেজে যায়। উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য তার ছবির প্রয়োজন পড়ে। ক্লাস শেষে সে ছবি তোলার জন্য বেলা একটার দিকে কলেজের কাছাকাছি সিয়াম নামে একটি স্টুডিওতে যায়। আগ থেকেই স্টুডিও’র কাছাকাছি গোপনে অবস্থান করছিল বোরহান। ছবি তোলার কক্ষে প্রবেশের পর স্টুডিও মালিক জাহের আমিন মুন্না কৌশলে বখাটে বোরহানকে ওই কক্ষে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। ভেতরে ঢুকে বোরহান মেয়েটিকে জাপটে ধরে। এসময় মেয়েটি চিৎকার করলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তখন স্টুডিও মালিক মুন্না ভেতরে ঢুকে মেয়েটিকে ভয়ভীতি দেখায় এবং বাইরে থেকে দরজা আটকে রাখে। একপর্যায়ে বোরহান জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে।
ধর্ষিতার কৃষক পিতা গতকাল কুমিল্লা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের জানান, ‘ওইদিন দুপুরে মেয়ে বাড়ি ফিরে কান্নাকাটি করতে থাকে এবং আত্মহত্যা করবে বলে জানায়। ঘটনা জানতে চাইলে সে সব খুলে বলে। পরে মেয়েকে নিয়ে থানায় গিয়ে ওসিকে সব বললে তিনি মামলা করার পরামর্শ দেন। তারপর অভিযোগ লিখে বোরহান ও মুন্নাকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা করায় আসামী বোরহানের পরিবার হুমকি ধমকি দিচ্ছে। তারা বলছে মামলায় কিছুই হবে না। বোরহানকে বিদেশ পাঠানোর তৎপরতা শুরু করেছে তার বাবা।’
এদিকে মামলা দায়েরের এক মাস অতিবাহিত হলেও আসামীদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের লোকজনদের সাথে নিয়ে ধর্ষিতার বাবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে দেখা করেছেন। তিনি আসামীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম বড়–য়া জানান, ‘আসামীরা এলাকায় নেই। তারা আত্মগোপন করে আছে। স্টুডিওর মালিকও দোকান বন্ধ রেখে লাপাত্তা। আসামীদের ধরার ব্যাপারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’








 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুমিল্লায় স্টুডিওতে ছবি তুলতে গিয়ে কলেজ ছাত্রী ধর্ষিত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ