Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে আমাকে সরাসরি থ্রেট করা হয়েছিলো : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৪৯ এএম, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে নানাভাবে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি সরাসরি থ্রেটও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানাভাবে নানা চাপ, দুটো বছর আমাদের ওপর যেন আজাব সৃষ্টি হয়েছিলো। আমি মুখের ওপর বলে দিয়েছিলাম পদ্মা সেতু আমরা নিজেরা করতে পারবো। আমরা তা করেছি।
গতকাল শনিবার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় ২৭তম কাজী মাহবুবউল্লাহ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পদ্মা সেতু বন্ধ করে দেবে কোন এক বিশেষ ব্যক্তির একটা ব্যাংকের এমডির পদে থাকা না থাকার ওপর। আমাকে সরাসরি থ্রেটও করা হয়েছে। আমেরিকার অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে সরাসরি বলেছেন যে এটা না হলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ হবে।
কিন্তু ওই এমডির পদ দেয়ার তো সমর্থ আমার ছিলো না। কারণ যার এ পদ তিনি তো কোর্টে মামলা করেছেন সরকারের বিরুদ্ধে। সেই ব্যাংকের যে আইন সেই আইন ভঙ্গ করে ১০ বছর চালানোর পরও কোর্ট তার তো আর বয়স কমাতে পারে না। কোর্ট যদি বয়স কমিয়ে দিতে পারতো তাহলে হতো।
পদ্মা সেতু নির্মাণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে একটা দেশ স্বাধীন করতে পারি, তবে একটা সেতু নির্মাণ করতে পারবো না, এটা হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমাদের রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার। কাজেই আমরা নিজেরাই যে কোন বড় প্রজেক্ট করতে পারি। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু যেদিন থেকে আমরা নিজেরা নির্মাণ শুরু করেছি তখন থেকে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদারও পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশকে আর অবহেলার চোখে দেখা যাবে না, বাংলাদেশ পারে।
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এই পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর একটা দুর্নাম দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলেছে। সেখানে মূল টার্গেটে ছিলাম আমি, আমার পরিবার, আমার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, এমনকি সচিব কেউই বাদ যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনভাবে একটা ধোঁয়াটে অবস্থা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে যে আমি যেন দুর্নীতি করে সব টাকা লোপাট করে দিয়েছি। একটি পয়সাও দেয়নি তারা, তার আগেই ধুয়া তোলা হলো। কেন কার প্ররোচণায় সেটা আমি বলতে চাই না, সেটা আপনারা ভালো করেই জানেন। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম।
‘সততাই শক্তি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে অনেক কথা লিখে, অনেক কথা বলে আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করতে চেয়েছে। কিন্তু আমি সব সময় বিশ্বাস করি সততাই শক্তি। আমার সেই আত্মবিশ্বাস আছে। আত্মবিশ্বাস আছে বলেই আমরা আজ এটা করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়ে রাজনীতি করছি, রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। এখানে নিজেদের কি হবে, নিজেরা অর্থ বাড়াবো সম্পদ বাড়াবো এই চিন্তাতো কখনো করি না, করবো না, করি নাই। সেখানে এত বড় বদনাম দেবে এটা কখনো আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলো না।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কেউ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ১৬ কোটি মানুষ। এই ১৬ কোটি মানুষের শক্তিই তো বড় শক্তি। আমরা এই দেশকে নিয়ে গর্ব করি। কিছু রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধী অংশ আছে। সেটা বাদ দিয়ে বাকি যে মানুষগুলো আছেন প্রত্যেকে আমরা এক হয়ে আমাদের এ দেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি।
শিক্ষার বিস্তারে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শিক্ষার প্রসারে ধনী ও সামর্থবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সু-শিক্ষিত জাতি ছাড়া কখনও দেশ গড়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গড়ে উঠবে কু-সংস্কারমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। আমরা সেভাবে দেশকে গড়ে তুলতে চাই। এ লক্ষ্যে কাজও করে যাচ্ছি।
বিত্তবানদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের বিত্তবানদের নিজ নিজ গ্রামের দিকে তাকাতে, এলাকার দিকে তাকাতে বলবো, মানুষকে সহযোগিতা করতে বলবে। বিত্তবানরা উচ্চ শিক্ষা প্রসারে এগিয়ে আসবেন, মেধাবীদের শিক্ষায় এগিয়ে আসবেন যাতে তারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারে।
নিরক্ষরতা দূরীকরণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরতা হার ছিলো মাত্র ৪৫ ভাগ। আমরা ক্ষমতা নেয়ার পর তা দ্রুত বেড়ে যায়। প্রতিটি জেলাকে নিরক্ষরমুক্ত করার জন্য কাজ করতে থাকি। ১৯৯৮ সালে অল্প সময়ের মধ্যেই স্বাক্ষরতার হার বাড়াতে পেরেছি।
দেশের গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর অবহেলার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেখি গবেষণার জন্য কোনো বরাদ্দ ছিলো না। কিন্তু গবেষণা ছাড়া কোনো দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা তাই গবেষণায় বরাদ্দ বাড়িয়ে ছিলাম।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কেউ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না। তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমরা বাজেট ৫ গুণ বৃদ্ধি করেছি। ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা বাজেট বাংলাদেশ করবে এটা কখনো কেউ বোধ হয় ভাবতে পারেনি। আমাদের বার্ষিক কর্মসূচির ৯০ ভাগ আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করছি।
যে বাংলাদেশকে নিয়ে স্বাধীনতার পর অনেকে হেয়প্রতিপন্ন করে কথা বলেছে, আজকে বাংলাদেশ আর সেই জায়গায় নেই। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি। যে সংগঠন গোটাজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে বিজয় এনেছে আজকে সেই সংগঠন সরকারে আছে বলেই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কাজ কর শিক্ষার বিস্তারে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শিক্ষার প্রসারে ধনী ও সামর্থবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এ বছর শিক্ষা ও গবেষণায় ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ চৌধুরীকে বিশেষ পুরস্কার হিসেবে আজীবন সম্মাননা, সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় আনিসুল হক, পাটের মলিকিউলার বায়োলজি বিষয়ে বিশেষ গবেষণায় অধ্যাপক ড. হাসিনা খান এবং খেলাধুলায় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে কাজী মাহবুবউল্লাহ পুরস্কার দেয়া হয়। বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুব উল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জোবায়দা মাহবুব লতিফের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য বেগম নিলুফার জাফরউল্লাহ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে আমাকে সরাসরি থ্রেট করা হয়েছিলো : প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ