Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টিসিবির ট্রাকে উপচেপড়া ভিড়

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বছরের শুরুতেই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা শুরু। চালের পর এবার বাড়ছে আটা-ময়দার দাম। বেড়েছে গরীবের আমিষ খ্যাত ব্রয়লার মুরগীর দাম। তেল, চিনি, ডালের মূল্য আগে থেকেই আকাশ ছোঁয়া। পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সংসার চালাতে দিশেহারা। করোনা মহামারির ফলে এমনিতে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের আয় রোজগার কমে গেছে। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো। বাজারের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা ও বস্ত্রের মতো মৌলিক চাহিদাগুলোতে ব্যয় কমিয়েছেন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে রীতিমতো অসহায় তারা।
এ অবস্থায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে কিছুটা কম দামের টিসিবি পণ্য খরার মধ্যে বৃষ্টির শীতল পরশের মতো। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে দিশেহারা মানুষ এখন লাজ-শরম দূরে ঠেলে কম দামে টিসিবির পণ্য কিনতে লাইন ধরছেন টিসিবির ট্রাকের পিছনে। তবে সেখানেও তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে মানুষ পণ্য কিনতে এসব ট্রাকে দীর্ঘ লাইন দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকেন। সকাল ১০টার মধ্যে ট্রাক আসার কথা থাকলেও তা ১২টারও পরে আসে। এছাড়া মানুষের চাহিদার চেয়ে ট্রাকে পণ্যের পরিমাণ কম থাকায় লাইনে দাড়িয়েও অনেকে পণ্য কিনতে পারেন না। দীর্ঘ সময় লাইনে দঁড়িয়ে থেকেও অনেককে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়।
রামপুরা কাঁচাবাজার এলাকায় গতকাল টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনতে আসা আমেনা বলেন, সকাল নয়টার সময় লাইনে দাঁড়াইছি। ট্রাক আইছে এগারটার পরে। অহনও সামনে অনেক মানুষ। আল্লাই জানে এই লম্বা লাইন এই পর্যন্ত শেষ অইলে মাল থাকব কিনা।
টিসিবির ট্রাকের পণ্য বিক্রেতা সুমনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানুষের চাহিদার তুলনায় মাল কম সরবরাহ করা হচ্ছে। ট্রাকে মাল ভরে জায়গায় আসতে আসতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। অনেক নারী-পুরুষ সকাল থেকেই লম্বা সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করেন। কিন্তু মাল কম থাকায় লাইনে দাঁড়ানো সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়না। বর্তমানে প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে মাত্র ২০০ জনের মাল দেয়া হচ্ছে। অথচ ক্রেতা কমপক্ষে হাজার জনের দীর্ঘ লাইন থাকে। ফলে যারা সিরিয়ালে আগে থাকেন তারা মাল কিনতে পারেন।
কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ২ জানুয়ারি থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবারও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ষষ্ঠবারের মতো এ কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি। দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলার ডিলার পয়েন্টে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন এ কার্যক্রম চলবে।
টিসিবির ট্রাক সেখানেই অসংখ্য মানুষের ভিড়। অধিকাংশ স্পটে দুপুর ১২টার আগে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক না আসলেও অসংখ্য মানুষ সকাল থেকে সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা বলা হলেও তাদের বাইরে অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম দামে পণ্য কেনার জন্য লাইনে দাঁড়ান। কোথাও কোথাও সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা টিসিবির পণ্য কিনে বাইরে বিক্রি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীর আজিমপুরে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছেন আনুমানিক ৬০-৬৫ বছরের বৃদ্ধ আবুল হোসেন। তিনি জানান, বাজারে চড়া মূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে টিসিবির তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ কেনা যায়। তাই তিনি এসব পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকায়, মসুর ডাল ৬০ টাকায়, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকায় এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারেন। একজন ক্রেতা সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি চিনি ও পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিসিবির ট্রাকে উপচেপড়া ভিড়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ