Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুর ক্ষত প্রজনন অঙ্গের হাড় পর্যন্ত পৌঁছেছে

চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে

প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সেপটিসিমিয়ার আশঙ্কা চিকিৎসকদের
স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন দিনাজপুরে ৫ বছরের শিশুটির পাশবিক নির্যাতনের ক্ষত প্রজনন অঙ্গের হাড় পর্যন্ত পৌঁছেছে। যা সংক্রমণ হয়ে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার (সেপটিসিমিয়া) আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। তার চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বহন করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান একথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর রহমান আরো বলেন, শিশুটি আগের তুলনায় আজকে (গতকাল) অনেকটা ভাল এবং আশঙ্কামুক্ত রয়েছে। তবে শিশুটি মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার গায়ে হাত দিলে সে আঁতকে উঠছে এবং ব্যথা অনুভব করছে। শিশুটি শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলে ১-২ মাসের মধ্যে তার অস্ত্রোপচার করা হবে। এখন তার হাই-অ্যান্টোবায়োটিক ও হাই-প্রোটিন ডায়েট চলছে এবং চলতে থাকবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল জানান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সব ধরনের খরচ বহন করা হবে। তিনি আরো জানান, শিশুটির ধর্ষককে আটক করা হয়েছে। তার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে।
এদিকে  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটির জন্য গঠিত নয় সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল দলের সদস্যরা গতকাল বিভিন্ন ব্যবস্থাপত্রের সুপারিশ করে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। মেডিকেল বোর্ডের সদস্য হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান আশরাফ-উল হক বলেন, শিশুটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। বীভৎস কায়দায় ধর্ষণের পর একটি খেতের মধ্যে নোংরা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছিল। তার রক্ত সংক্রমণ বা সেপটিসিমিয়া হওয়ার ভয় আছে। তবে শিশুটি ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে।
মৃত্যু নিশ্চিত হতেই শিশুটির শরীরের সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছিল ধর্ষক। এর আগে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয় শিশুটির ওপর। শিশুটির শরীরে নির্যাতনের ধরন দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরাও হতবাক। শিশুটির প্রাণহানির শঙ্কা না থাকলেও অঙ্গহানির আশঙ্কা করছেন তারা।
পাঁচ বছরের এই শিশুটিকে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ওর মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। উরুতে রয়েছে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত।
উল্লেখ্য, ১৮ অক্টোবর দিনাজপুরের পার্বতীপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে শিশুটি নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সেদিন তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন ভোরে শিশুটিকে তার বাড়ির কাছে হলুদ খেতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল, পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেলে।
শিশুটির বাবা যার পিকআপ ভ্যান চালাতেন, ঘটনার পর থেকে তিনি সঙ্গে আছেন। তার ও একই এলাকায় বাড়ি। তিনি বলেন, শিশুটিকে খুঁজে পাওয়ার পরও কারও মনে হয়নি যে ওকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এত ছোট শিশুকে ধর্ষণ করা যায়, তা তারা ভাবতেই পারেননি। সন্দেশের প্রলোভন দেখিয়ে তার জেঠা বলে পরিচিত সাইফুল শিশুটিকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পরদিন ভোরে বাড়ির পাশে হলুদক্ষেতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর শিশুটির বাবা একই গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪২) ও আফজাল হোসেন কবিরাজকে (৪৮) আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সোমবার রাতে সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুর ক্ষত প্রজনন অঙ্গের হাড় পর্যন্ত পৌঁছেছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ