পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভিডিও কনফারেন্সে খাদ্য গুদাম (সাইলো) সহ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের চিন্তাভাবনাই ছিল দেশে খাদ্য ঘাটতি রাখা। কারণ, খাদ্য ঘাটতি থাকলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যায়। আমাদের দেশের মানুষ ভিক্ষা করে খাবে, আর আমি ভিক্ষুকের সরদার হয়ে বসে থাকবো, তার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। আমরা নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে চলবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মংলায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন শস্য ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন খাদ্য গুদাম (সাইলো) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহতকরণ, দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য সংরক্ষণ ও আপদকালীন খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলার জন্য খাদ্যশস্য মজুদ সক্ষমতা বাড়াতে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা খাদ্য গুদামজাত করার জন্য সাইলো উদ্বোধন করছি। এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই অর্জন আমাদের চিন্তাভাবনার কারণেই সম্ভব হয়েছে। আমরা শুধু খাদ্য উৎপাদনই করবো না খাদ্যকে সংরক্ষণও করবো যেন আপদকালে আমার তার ব্যবহার করতে পারি এবং এজন্য অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়।
তিনি বলেন, আমাদের চিন্তাভাবনা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ অন্যের কাছে হাত পাতবে না। আমরা ভাবি, নিজেরা কীভাবে দেশের মানুষকে খাদ্যের নিরাপত্তা দেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণকালে সরকারী পর্যায়ে দেশে খাদ্যশস্যের মোট ধারণ ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন। বর্তমানে এ ধারণ ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২০ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালের মধ্যে খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতা ৩০ লক্ষ মে. টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাদের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরে বলেন, বিএনপি’র খাদ্য ঘাটতি পুষিয়ে আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ৫ বছরে দেশে খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখে যাই। খাদ্য ঘাটতি রাখার চিন্তাভাবনা যাদের, সেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই উদ্বৃত্ত অবস্থা থেকে আবারো দেশকে খাদ্য ঘাটতিতে নামিয়ে আনে। আমরা ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় এসে দেখলাম দেশে আবারও খাদ্য ঘাটতি। সেই অবস্থার বদল করেছি আবার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ক্ষমতায় আসার পর দেখলাম চট্টগ্রামে আমাদের যে খাদ্যগুদামগুলো ছিল সব নষ্ট ও বেদখল হয়ে গেছে। শুধু জাপান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পর ৫০টি খাদ্য গুদাম করে দিয়েছিল। সেখানে একটি নিষেধাজ্ঞা দেয়া ছিল ৫০ বছরে এগুলো ভাঙতে পারবে না। শুধু সেগুলোই বাকী ছিল আর অন্যসব খাদ্যগুদাম বিএনপি-জামায়াত সরকার ভেঙ্গে ফেলেছিল। শুধু ভাঙেনি, ১ টাকায় বিএনপি নেত্রীর এক আত্মীয়ের জুতা কোম্পানীকে লীজ দেয় এবং প্লট করে ইপিজেডের জন্য জায়গাগুলো বরাদ্দ দিয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকারে আসার পরে দেখলাম এটাতো আমাদের জন্য একটা সর্বনাশা সিদ্ধান্ত। আমি এসব জায়গা পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ গ্রহণ করলাম। ৬ কোটি টাকা খেসারত দিয়ে সেই জায়গা উদ্ধার করলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যিনি স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন, সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাঙালি জাতি নিজে মাথা উঁচু করে চলবে। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নেই আওয়ামী লীগ কাজ করছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের নজির আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন। নবনির্মিত সাইলোর ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
মংলা বন্দর থেকে ১৭ কি. মি. ভাটিতে জয়মনিরঘোল নামক স্থানে মোট ৪২ একর জমিতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে।এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় আরও ৭.১৫ লক্ষ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার আধুনিক খাদ্যগুদাম ও সাইলো নির্মাণ কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় পাঁচ হাজার বর্গমিটার পরিসরের একটি জেটি নির্মিত হয়েছে। জেটির মাধ্যমে সরাসরি জাহাজ থেকে সাইলোতে গম খালাস করার জন্য বেলজিয়ামের ‘ভিগান’ কোম্পানির সরবরাহকৃত দুটি নিউমেটিক আনলোডার স্থাপন করা হয়েছে। আনলোডার দুটি দ্বারা ঘণ্টায় ৪০০ মেট্রিক টন গম খালাস করা যাবে।
মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল চালু করলেন প্রধানমন্ত্রী :
প্রায় দুই বছর আগে মংলার শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর সুন্দরবন রক্ষায় বহুল আলোচিত মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল পণ্যবাহী নৌ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবনে থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই চানেল উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন আমাদের সম্পদ। সুন্দরবন আছে বলেই ঝড় জলোচ্ছ্বাস, অনেক বিপদ-আপদ থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এই মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি চালুর রাখার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো বন্দরটাকে প্রায় বন্ধ করে দিচ্ছিল। শ্যালা নদী দিয়ে আমাদের জাহাজগুলো চলাচল শুরু করে। এটা সুন্দর বনের জন্য ক্ষতিকর।
১৯৮০-এর দশকে মংলা-ঘষিয়াখালী সংযুক্ত খালগুলোর মুখ বন্ধ করে চিংড়ি চাষ ও পোল্ডার নির্মাণ করায় চ্যানেলটির ভরাট হতে শুরু করে। ৩০ বছরের মাথায় ২০১০ সালে চ্যানেলটি পুরো শুকিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় ২০১৪ সালের জুলাই থেকে এই নৌপথটির খনন শুরু হয়। ২০১৫ সালের মে মাস থেকে পরীক্ষামূলভাবে চ্যানেলটি খুলে দেয়া হয়।
সুন্দরবনের ক্ষতির শঙ্কায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধীতাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে আমরা পাওয়ার প্ল্যান্ট করছি। সেটা নিয়ে আমাদের পরিবেশবিদরা কেঁদে মরে। এই যে ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হলÑ এর সঙ্গে সংযুক্ত ২৩৪টি খালের মুখ বন্ধ করে চিংড়ি চাষ করা হলো, গাছপালা কেটে চিংড়ির ঘের করা হল; যে জায়গা বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম সে জায়গাগুলো যে নষ্ট হলোÑ এসব নিয়ে আমাদের পরিবেশবিদদের কখনো একটু টু শব্দও করতে শুনি নাই। কখনো সুন্দরবন নিয়ে তাদের কোনো দুশ্চিন্তা আমরা দেখি নাই।
সুন্দরবনের একেবারে ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যালা নদী রক্ষায় তাদের কোনো উদ্বেগ না থাকলেও বন থেকে ১৪ মাইল দূরের বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার জন্য তাদের ‘কান্নাকাটিতে’ বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। সুন্দরবনের ভেতরে যে সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছিলÑ এটা নিয়ে তাদের কোনো কান্নাকাটিও শুনিনি, কোনো আন্দোলনও শুনিনি, কেউ কোনো কথাও বলেনি।
শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচলের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্যালা নদী ডলফিনের একটা জায়গা। ওখানে ডলফিন আসে। ওই নদীর পানি আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার খায়। ওই জায়গাটা বন্যপ্রাণীর একটা অভ্যয়ারণ্য ছিল।
মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খোলার পাশাপাশি নবনির্মিত ১১টি ড্রেজারেরও উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তাদের ১৮টি ড্রেজার ও ১৫টি এক্সাভেটর দিয়ে এই খনন কাজ করে।
মংলা বন্দর সচল রাখার জন্য এই চ্যানেল চালু রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে জাহাজ আসতে পারে। অথচ এটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ৩১ কিলোমিটার মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথের মধ্যে ২৬ কিলোমিটার পথ ১৩ থেকে ১৪ ফুট গভীরতা ও ২০০ থেকে ৩০০ ফুট প্রশস্ত করে খনন করেছে বিআইডব্লিউটিএ। নৌপথটি চালু হওয়য়ায় ৮১ কিলোমিটার দূরত্ব কমেছে। মংলা-ঘষিয়াখালীর রমজানপুর এলাকায় একটি ‘লুপকাট’ করায় আরও পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব কমেছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথমপর্যায় ২৪টি নৌপথ) খনন প্রকল্পের আওতায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নৌপথটি খনন করা হয়েছে। আমদানি করা মালামাল নৌপথ দিয়ে দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে পরিবহনসহ বাংলাদশ-ভারত নৌপ্রটোকল রুটে চলাচলের জন্য মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল ভূমিকা রাখবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পশুর নদীতে প্রচুর পলি পড়ে। আজকে যেখানে সাইলো হলো বা ইপিজেড হলো সেগুলো নদী ড্রেজিং করে ভূমি উত্তোলন করে করা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিটি নদী সচল রাখতে ‘মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের’ ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সমস্যা, আমাদের ড্রেজার নাই। কাটলে পরে মাটি রাখার জায়গা নাই। অনেক সমস্যা। তারপরে একরকম জোর করে, সোজাসুজি হুকুম দিয়ে আমরা এই খাল কাটার কাজ শুরু করি।
নৌ মন্ত্রণালয় অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের খনন কাজ করেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৩৪টি সংযোগ খালে ২ হাজারের বেশি বাঁধ অপসারণ করেছে। আরো ৮৩টি খাল খনন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটা করতে হবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রী (আনিসুল ইসলাম মাহমুদ) এখানে আছেন। আশা করি, দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।
প্লাবন ভূমি (টাইডাল বেসিন) করতেও ড্রেজারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ড্রেজার তৈরি হচ্ছে। ফলে বাইরে থেকে বেশি কিনতে হবে না। চ্যানেলটা যেন সব সময় উন্মুক্ত থাকে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য পাঁচটি ড্রেজার কেনা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৬টি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন। আমরা ১১৮টি নৌপথ নির্ধারণ করেছি, যা খননে ন্যূনতম দুশো ড্রেজার প্রয়োজন। কিন্তু পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, আমাদের মন্ত্রণালয় ও ব্যক্তি মালিকানায় এখন পর্যন্ত আমাদের একশো ড্রেজার হয়নি।
শিশুদের সুরক্ষায় হেল্পলাইন ১০৯৮ :
শিশুদের ওপর নির্যাতন বন্ধে ‘হেল্পলাইন’-এর উদ্বোধন করে এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সমাজকে সচেতন করতে হবে। মানুষের মধ্যে সু-প্রবৃত্তি থাকে, কু-প্রবৃত্তিও থাকে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সচেতনতা সৃষ্টি কতে হবে, মানুষের মধ্যে যেন পশুত্ব জেগে না ওঠে।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮-এর সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালনায় সারা দেশে এই কার্যক্রম চলবে। যে কোনো শিশু ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে ঝুঁকি বা নির্যাতনের কথা জানিয়ে সহায়তা চাইতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচিকে শিশুদের সুরক্ষার একটি ‘মহৎ উদ্যোগ’ হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, সমাজের সকল স্তরের মানুষ এর সুফল পাবে। অনুষ্ঠানে নির্যাতিত কয়েকজন শিশুর সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কল সেন্টারে ফোন করে শেখ হাসিনা এই হেল্পলাইন সেবার উদ্বোধন করেন।
অপরপ্রান্ত থেকে অপারেটর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, আমি শিশু না। আমাকে অবশ্য ৭০ বছর বয়স্ক শিশু বলা যেতে পারে। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই হেল্পলাইন উদ্বোধন করলাম। যারা এখানে কাজ করবেন, তারা সচেতন থাকবেন। আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করব, এই শিশুদের কীভাবে সাহায্য করা যায়। যখনই কোনো শিশু বিপদে পড়বে, তারা এখানে ফোন করে সাহায্য পাবে। যারা অপরাধ করবে তারাও ভয় পাবে।
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হল না। তাকে লেখাপড়া শেখাতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবার সুযোগ দিতে হবে।
ভবিষ্যতে অন-লাইনে বিচার নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারের সঙ্গে একটা কোর্ট রুম থাকবে। যে সমস্ত আসামি একটু ভয়ঙ্কর প্রকৃতির, যাদের আনা নেয়া একটু সমস্যা। ওখানেই আদালত থাকবে, ওখানেই তাদের আইনজীবীরা থাকবে এবং অন-লাইনে বিচার হবে। শিশু আদালতের জন্য এটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
হেল্পলাইনে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী অপারেটরের কাছে জানতে চান, একজন ৭০ বছরের শিশু হিসাবে আমি কী সহায়তা পেতে পারি?
জবাবে ১০৯৮-এর অপারেটর জানান, তথ্য সহায়তা সেবা, আইনি সেবা, কাউন্সিলিং সেবা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে শিশুকে উদ্ধারে সহায়তা পাওয়া যাবে। এছাড়া স্কুলে কোনো সমস্যা হলেও শিশুরা বলতে পারবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে এ সুযোগের অপব্যবহার করতে চাইবে। মিথ্যা তথ্য দেয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের শান্তি নিবাসে থাকা শিশুদের সঙ্গেও কথা বলেন, যাদের নির্যাতনের হাত থেকে উদ্ধার করে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, শান্তি নিবাস ৫০ আসনের হলেও এই মুহূর্তে সেখানে ৬৫ জন রয়েছে। এর মধ্যে মেয়ে শিশু ৫৬ জন; আর নয়জন ছেলে শিশু।
প্রধানমন্ত্রী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের ১৭ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন, যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। মেয়েটি প্রধানমন্ত্রীকে জানায়, যারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ‘কঠিন শাস্তি’ চায় সে।
মেয়েটিকে স্বাবলম্বী হওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাকে তো নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। জবাবে মেয়েটি জানায়, সে শান্তি নিবাস থেকে ফিরে গিয়ে লেখাপড়া করতে চায়।
এই শান্তি নিবাসে থাকা মাগুরার সালিখার আরেক তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কোরবানির ঈদের দু’দিন পর মেয়েটিকে ‘বিক্রি করে দেয়’ তার স্বামী।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৫ বছর বয়সী আরেক কিশোরীর পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, ১৩ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল এক প্রবাসীর সঙ্গে। সেখান থেকে সমবয়সী এক ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায় মেয়েটি। পরে তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের শান্তি নিবাসে রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিদেশে চাকরি করে বলেই তার সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে, এই বিপদ যেন কেউ না করে। শান্তি নিবাসে থাকা শিশুদের শিক্ষা ও কারিগরী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেয়া এক কিশোরী ও তার বাবার সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েরা বিপদে পড়লেই যে সাহায্য পাবে, এটা আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে অপরাধ প্রবণতাটাও কমে যাবে।
সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সকলেরই মা-বোন আছে, নিজের সন্তান আছে। নিজের সন্তানের নিরাপত্তা দেয়া যেমন দায়িত্ব। অপরের ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তা দেয়াও তাদের দায়িত্ব। এটা মনে রাখতে হবেÑ অন্যের মেয়ের ক্ষতি করতে গেলে, নিজের বোন বা মেয়েরও ক্ষতি হতে পারে।
সমাজকল্যাণ সচিব মো. জিল্লার রহমান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. ইমান আলী এবং ইউনিসেফের সারা বোরদাস অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।