পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানিকালে (২০০৯) আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ১১ জন। ওই সময় আপিল বিভাগে দু’টি নিয়মিত বেঞ্চ ছিল। প্রয়োজনে ৩টি বেঞ্চও গঠন করে আপিল নিষ্পত্তি হতো। এরপর আপিল বিভাগের সদস্য সংখ্যা হ্রাস পেয়ে এখন প্রধান বিচারপতিসহ ৪ জনে ঠেকেছে। এর মধ্যে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ছুটিতে রয়েছেন আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। ফলে কার্যত: ৩ জন বিচারপতির সমন্বয়ে চলছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচার কার্যক্রম। সংখ্যাগত দিক থেকে আপিল বিভাগের এত কম সংখ্যক বিচারপতি কখনোই ছিল না। আইনজ্ঞদের মতে, অবিলম্বে বিচারপতি সংখ্যা না বাড়ালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি সম্ভব নয়।
বিচারাঙ্গন সংশ্লিষ্টদের মতে, বিচারপতির দারুণ সঙ্কটে এখন আপিল বিভাগ। এর ফলে পুরোদমে বিচার কার্যক্রম শুরু হলেও আপিল বিভাগে তীব্রতর হচ্ছে মামলাজট। আদালত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ প্রেক্ষাপটে আপিল বিভাগে বিচার পরিচালনায় যেমন নিত্যনতুন সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। তেমনি বাড়ছে আপিল বিভাগে মামলাজট। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল গতকাল রোববার জানিয়েছেন, আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগে আইনমন্ত্রণালয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের যাত্রা শুরু। ওই সময় প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সদস্য ছিলেন ৩ জন। গত পাঁচ দশকে পর্যায়ক্রমে আপিল বিভাগে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। মামলা বৃদ্ধির কারণে আপিল বিভাগে বিচারপতি সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এ দীর্ঘ সময় ধরে অবসরে যাওয়ায় আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা যে হারে কমেছে সেই অনুপাতে নতুন বিচারপতি নিয়োগ হয়নি। ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে বিচারপতি ছিলেন ৪ জন। ১৯৭৫ সালে ছিলেন ৫ জন। ১৯৮০ সালেও ৫ বিচারপতির সমন্বয়ে চলতো আপিল বিভাগ। দীর্ঘ সময় ধরে বিচারপতির এ সংখ্যা কখনো ৪ জন, কখনো ৫ জন ছিলেন। ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগে বিচারপতি সংখ্যা ৬ জনে উন্নীত করা হয়। ২০০৩ সালে তা আরো বেড়ে হয় ৭ জন। পরের বছর ২০০৪ সালে বিচারপতি সংখ্যা উন্নীত হয় ৮ জনে। বিচারপতি সঙ্কটের দোহাই দিয়ে সে সময় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানি আটকে যায়।
এ প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালের সরকার নতুন বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে আপিল বিভাগে বিচারপতি সংখ্যা ১১ জনে উন্নীত করে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটি ছিল আপিল বিভাগের সর্বোচ্চ সংখ্যক বিচারপতি। এরপর আপিল বিভাগে মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। পক্ষান্তরে কমতে থাকে বিচারপতি সংখ্যা। আপিল বিভাগে এখন মামলার সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। অথচ বিচারপতি সংখ্যা এখন সর্বনিম্ন। আপিল বিভাগে বিচারপতি সংখ্যা কমে ২০২১ সালে ৫ জনে নেমে আসে। এর মধ্যে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসরে যান সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সংখ্যা নেমে আসে ৪ জনে।
তাদের মধ্য থেকে ৩০ ডিসেম্বর নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয় আপিল বিভাগের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে। ওইদিন থেকেই ছুটিতে চলে যান আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। তিনি ছুটি থেকে কবে ফেরেন-তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না। ফলে এ মুহূর্তে আপিল বিভাগে কার্যত: ৩ বিচারপতি বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তারা হলেন, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এবং বিচারপতি মো. ওবায়দুল হাসান। এদের মধ্যে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আপিল বিভাগে উন্নীত হন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি এখন আপিল বিভাগের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। আইনজ্ঞদের মতে, হাইকোর্ট বিভাগে থাকাকালে তিনি বহু মামলার রায় দিয়েছেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে অনেক আপিল হয়েছে। এসব আপিলের শুনানি গ্রহণ তারপক্ষে সম্ভব হবে না। এতে এক ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হবে।
আইনজ্ঞদের মতে, আপিল বিভাগে বিদ্যমান সংখ্যক বিচারপতি দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলা শুনানি সম্ভব নয়। এ ধরনের আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি আটকে আছে বিচারপতি সঙ্কটের কারণে।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, এটি শুধু সর্বকনিষ্ঠ বিচারপতির ক্ষেত্রেই নয়। অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। কারণ আপিল বিভাগে এখন কার্যত বিচারপতি রয়েছেন ৩ জন। তাদের মধ্য থেকে একজনকে বাদ দিয়ে ২ জনকে দিয়ে বেঞ্চ গঠন করলে হবে না। কারণ হাইকোর্টের যে ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হবে সেটি আপিল বিভাগের কমপক্ষে ৩ জনের বেঞ্চে শুনানি হতে হবে। ফলে অবিলম্বে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ না দিলে বহু মামলার শুনানি গ্রহণ সম্ভব হবে না।
এদিকে আপিল বিভাগে বিচারপতি সঙ্কট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, বিচারক নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছে। এ বিষয়ে তারা বলতে পারবেন। তবে আমি যতটুকু জানি তারা প্রক্রিয়া শুরু করছেন। শিগগিরই বিচারক নিয়োগ হবে বলে আমি আশাবাদী।
এর আগের একটি অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, শুধু প্রেসিডেন্ট নির্দেশ দিলেই আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।