Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা ওয়াসার লেগুন বিষাক্ত মাছমুক্ত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকা ওয়াসার পয়ঃশোধনাগারের লেগুনে জাল ফেলে তেমন কোনো মাছ না পাওয়ায় লেগুনগুলো বিষাক্ত মাছমুক্ত হয়েছে বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ। ফলে ঢাকার বাজারেও লেগুনের মাছ বিক্রি হচ্ছে না। গতকাল সকালে প্রথমে একটি লেগুনে জাল ফেলা হলে সেখান থেকে উঠে আসে ছয়টি ছোট টাকি মাছ। পরে আরও তিনটি লেগুনে জাল ফেললে ১০টি মাছ পাওয়া যায়। গতকাল রোববার রাজধানীর পাগলা পয়ঃশোধনাগারের কয়েকটি লেগুনে জাল ফেলা হলে মাছ পাওয়া গেছে নামমাত্র।
হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান ইনকিলাবকে বলেন, পাগলা পয়ঃশোধনাগারে যে মাছের জন্ম হয়, সেটা পরিষ্কারের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। হাইকোর্টের নির্দেশনাটা ছিল এমন যে, বিষাক্ত মাছ যেন কোনোভাবেই জনগণের মাঝে বিতরণ করা না হয়। ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, হাইকোর্ট থেকে বলা হয়েছিল সীমানা ওয়াল করতে। সেটা আমরা করেছি। এখন আর বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। মাছ চাষ করার চেষ্টাও করতে পারে না। তারপরও একটা সুযোগ থেকেই যায়, তাই আমরা জাল ফেলে দেখলাম মাছ আছে কি না।
ঢাকা ওয়াসার এই পয়ঃশোধনাগারে আকার প্রায় ২৪৬ একর। এর মধ্যে রয়েছে ১৬টি লেগুন বা পুকুর। প্রতিটি লেগুনের আকার গড়ে ২৫ হাজার বর্গমিটার। বিশাল আয়তনের এই লেগুনে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হতো বলে প্রচার আছে। পয়োবর্জ্যের পানিতে মাছ চাষ করে তা রাতের আঁধারে বাজারজাত করা হতো। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী এই বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান বিন মোহাম্মদ আরিফের উপস্থিতিতে লেগুনে রোটেনন ও জাল ফেলা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আমরা যেটা দেখলাম, বাইরে থেকে প্রকল্পস্থলে প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। আমরা একটি লেগুন দেখেছি। সেখানে ছয়টা মাছ পাওয়া গেছে। বোঝা যাচ্ছে এখন আর মাছ চাষ হয় না। বাকি লেগুনগুলো দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর বোঝা যাবে আসলে এখানে মাছ চাষ করা হয় কি না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন। তার মতে, লেগুনের পানিতে মাছ চাষ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এই পানিতে যে অক্সিজেন লেভেল আছে, তাতে কোনো প্রাণী থাকার কথা না। ফলে এখানে খুব একটা মাছ পাওয়া যায়নি।
গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে গত ২০১৫ সালে উচ্চ আদালত লেগুনায় মাছ ছাষ, মাছ ধরা বন্ধ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছিল ওয়াসাকে। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আজ জাল ফেলা হয়। তবে আজ শুধু চারটি লেগুনে জাল ফেলে ওয়াসা। সব মিলিয়ে ১৬টি টাকি মাছ পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরও যে ১১টি লেগুন রয়েছে। সেগুলোতে জাল ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। তখন বোঝা যাবে প্রকৃত অবস্থা।
ওয়াসা জানায়, আদালতের নির্দেশনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করেছে কর্তৃপক্ষ। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার কারণে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ হয়েছে মাছ চাষ। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, লেগুনে রোটেনন প্রয়োগ ও মাছ ধরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াসা। ২০২০ সালে পাগলা পয়ঃশোধনাগার থেকে মাছ পাওয়া গিয়েছিল দুই মণ। এবার তা আরও কমে এসেছে।
গত ২০১১ সালের ১৩ জুলাই ওয়াসার লেগুনের বিষাক্ত মাছ খাচ্ছে ঢাকার মানুষ’ শিরোনামে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই বছরই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে দুই আইনজীবী একটি রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানির পর গত ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। রুলের ওপর পাঁচ কার্যদিবস শুনানি শেষে গত ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট হাইকোর্ট বিষয়টি রায়ের জন্য রাখে। সে অনুযায়ী গত ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আদালত রুল মঞ্জুর করে সাত দফা নির্দেশনাসহ রায় দেয়। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
আদালতের সাত দফা নির্দেশনায় বলা হয়, আগামী দুই বছরের মধ্যে লেগুন এলাকার চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে দুই মাস পর পর ওষুধ প্রয়োগ করে লেগুনের মাছ নিধন করতে হবে। লেগুন এলাকায় তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করতে হবে। লেগুন এলাকায় নৈশ টহল জোরদার করতে হবে। জনসচেতনতার জন্য এই মাছ বিষাক্ত, ক্ষতিকর এবং মাছ চাষ ও ধরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ লেখা প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে লেগুন এলাকায়। লেগুন এলাকার প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেবে ওয়াসা। ওই এলাকার জন প্রতিনিধিরা নাগরিক কমিটি গঠন করে মাছ চাষ বন্ধের ব্যবস্থা নেবেন এবং ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকা ওয়াসার লেগুন বিষাক্ত মাছমুক্ত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ