পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। গত দুই এক মাস ধরে বাজারে চাল, ডাল, চিনি, আটা ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। থেমে নেই কাঁচাবাজারে শীতকালীন সবজির দামও। চড়া দামে ক্রয় করতে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব দ্রব্যসামগ্রী। এতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ এবং হোস্টোলে থাকা শিক্ষার্থীরাক্ষুব্ধ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, করোনার লকডাউনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালতসহ সব কিছু খুলে দেওয়ার পর থেকে দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অস্বাভাবিক ও আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে সমাজে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। অভিজ্ঞ মহলের মতে এ আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ একাধিক। প্রথমত মুনাফালোভী মজুদদার, দ্বিতীয়ত সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা। সরকার কর্তৃক মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা পরক্ষণেই অজ্ঞাত কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন সুশীল সমাজ ও সচেতন শিক্ষার্থীরা। ফলে প্রতিনিয়ত নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিক্ষার্থী, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষদের।
কুষ্টিয়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বাজার গুলায় দ্রব্যমূল্য। সবজির পূর্বের দাম-বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমান দাম। টমেটো ৬০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাউ ৩০ থেকে ৫০ (প্রতিপিস) টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ১০ থেকে ২০ টাকা, মরিচ ৭০ থেকে ১০০ টাকা, পুঁইশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, শশা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, আলু ২০ থেকে ৩০ টাকা, লালশাক ১০ থেকে ২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
এদিকে গত দু’মাসের মধ্যে সয়াবিন তেল বোতলজাত ১১০ টাকা থেকে বেড়ে এখন প্রতিলিটার বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। খোলা সয়াবিন ৯৫ থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে। পামওয়েল ৮৫ থেকে ১৪৪ টাকা, সরিষার তেল ৫৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এদিকে একমাসের মধ্যে মাছের দাম বেড়েছে। আগে ও বর্তমান (প্রতি কেজিতে) ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা। তবে বিভিন্ন সাইজের ছোট ইলিশ ৪শ’ থেকে ৯শ’ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। টাকি ৩৫০-৪শ’, পাবদা ৩ শ’ থেকে ৪শ’, শোল ৬০০-৬৫০, ট্যাংরা ৩৫০-৪০০, রুই-২০০ থেকে ২৫০, কাতল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সিলভার ৮০ থেকে ১৬০ টাকা, মৃগেল ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা, গ্লাস কার্প ১৭০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ৮০ থেকে ১২০, পাঙ্গাস ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কৈ ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। এদিকে মাংস একমাসের মধ্যে দাম বেড়েছে। আগে ও বর্তমান (প্রতি কেজিতে) পোল্ট্রি ১১০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি ক্রস ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, দেশি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, গরু ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকা, খাসি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, মহিষ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, হাঁস ২০০ থেকে ২৬০ টাকা।
অন্যদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির দায় নিতে নারাজ খুচরা বিক্রেতারা। তারা বলছেন, আড়তদারেরা পণ্যমজুদ করছে বলেই দাম বাড়ছে। এছাড়া শীতের আগমনের আগে অনাবৃষ্টির কারণে শীতকালীন সবজির নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে অন্যবারের তুলনায় এবছর সবজির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও কম করেনি ডিলাররা। তারা বলছেন, আগের দামে তেল ক্রয় করা থাকায় বেশি দামে বিক্রি করা লাগছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিধবা মহিলা জানান, কুষ্টিয়ার রেললাইনের বস্তিতে বসবাস করেন তিনি। মাসখানেক ধরে মাছ বা মাংস খায়নি তার পরিবার। ছোট একটা রুমে তিনি এবং তার তিন মেয়ে থাকেন। স্বামী মৃত্যুর পর থেকে প্রায় ১০ বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করে একাই সংসার চালাচ্ছেন তিনি। সংসারের খরচ জোগানোর পাশাপাশি মেয়েদের নিয়মিত প্রাইভেট পড়ার খরচ যোগাতে হয়েছে তাকে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহিদ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা কয়েকজন ছাত্র মিলে একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকি।
এক এক মাসে এক এক জনকে ম্যাসের মিল চালানোর জন্য ম্যানেজারের দায়িত্ব দিয়ে থাকি। সচারাচর মিল প্রতি ৩০ টাকা আসতো। কিন্তু বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৪০ টাকা মিল রেটেও হচ্ছে না। এদিকে বাসা থেকে প্রতিমাসে পড়ালেখাসহ অন্যন্য খরচ বাবদ যে টাকা দিতো তাতে মাসের ২০ তারিখ আসলেই টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে, বাকি দশ দিন চরম ভোগান্তিতে কাটাতে হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।