Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কথিত সিবিএ নেতায় অতিষ্ঠ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা

প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের কথিত কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) নেতা সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হকের দাপটে অতিষ্ঠ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। একাধিক বার চাকরিচ্যুত হলেও ক্ষমতার দাপটে পার পেয়ে যাচ্ছেন। বার বার মুচলেকায় সীমাবদ্ধ থাকছে মঞ্জুরুল হকের শাস্তি। সম্প্রতি রাজশাহীতে বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশাল শাখার ডিজিএমকে লাঞ্ছিত করলেও এ ঘটনায় তার কিছুই হবে না, ব্যাংকে বলে বেড়াচ্ছেন। মঞ্জুরুল হক বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকা অফিসের কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) নেতা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজশাহী জেলা স্টেডিয়ামে ২০তম বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃঅফিস ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলাকালে স্টেডিয়ামের বাইরে বরিশাল শাখার ডিজিএম কাজী মোস্তাফিজুর রহমানকে লাঞ্ছিত করেন মঞ্জুরুল হক ও তার সহযোগী বাংলাদেশ ব্যাংকের কেয়ারটেকার আব্দুল বারেক, মতিঝিল শাখার মাসুদ আলী মিয়া ও সদরঘাট অফিসের আব্দুর রহিম। ঘটনার পর এর প্রতিবাদে বরিশাল কার্যালয় খেলা বর্জনসহ গভর্নরের কাছে প্রশাসনিকভাবে লিখিত অভিযোগ করে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে গভর্নরকে এঘটনার বিচারের দাবিতে চিঠি দেয়। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম ফজলুর রহমান ও ডিজিএম শেখ হুমায়ুন কবিরকে দিয়ে ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের স্বার্থে এ পর্যন্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং অভিযুক্ত এমন ৬৫ জনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশাল শাখার ডিজিএম কাজী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কিছুদিন আগে ঢাকা শাখার সিবিএ নেতা মুঞ্জুরুল হক বরিশাল অফিসে গিয়ে বরিশাল অফিসের জিএম নুরুল আলম কাজীকে গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি দেয়। এ সময় আমি তার প্রতিবাদ করি। ওই ঘটনার সূত্র ধরে সিবিএ নেতা মুঞ্জুরুল হক ও সহযোগীরা আমার ওপর হামলা করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এক বছর পূর্বে সহিদার রহমান নামে ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি বিভাগের এক ডেপুটি ডিরেক্টরকে (বর্তমানে অবসর) লাঞ্ছিত করেন মুঞ্জুরুল হক। এর আগে বর্তমানে অবসরে যাওয়া মানব সম্পদ বিভাগের জিএম শামসুদ্দিন আহমেদকে মারধর করেন। এ ঘটনায় মুঞ্জুরুলের চাকরি চলে যায়। পরে মুচলেকা দিয়ে আবার চাকরিতে যোগ দেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, মুঞ্জুরুল হক যেখানে যান, সেখানেই কোনো না কোনো অঘটন ঘটিয়ে থাকেন। আর একাধিকবার বরখাস্তও হয়েছেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বহাল তবিয়তেই থাকছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মঞ্জুরুল হক দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়ীজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। যে কমিটির মেয়াদ প্রায় অর্ধ যুগ আগে শেষ হয়েছে। কমিটির মেয়াদ না থাকলেও মঞ্জুরুল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর ছড়ি ঘোড়াচ্ছেন। কর্মচারীরা জানান, নেতা পরিচয় দিয়েই দিনের পর দিন পার করছেন মঞ্জুরুল। অফিসের দায়িত্ব কখনোই পালন করে না। এমনকি কোন বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন কেউই জানেন না। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ক্যান্টিনে ফ্রি খাওয়াসহ বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি প্রদানের নামে কর্মচারীদের টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মুঞ্জুরুল হক এর আগেও একাধিকবার এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছেন। শাস্তি হিসেবে চাকরিও হারাতে হয়, পরে মুচলেকা দিয়ে দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে মঞ্জুরুল হক বলেন, রাজশাহীর ঘটনায় আমি জড়িত ছিলাম না। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেয়নি। তবে জানতে পেরেছি রিপোর্টে আমার জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে মিডিয়া বেশি বেশি লিখছে। একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি বলেন, আগে বিভিন্ন সময়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা ছিল দাবি-দাওয়া ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়ীজ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন অনেক দিন আগে হয়েছে। কোন বছরে হয়েছে খেয়াল নেই। তবে ৫/৬ বছরের বেশি হবে।
তদন্ত কমিটির সদস্য ডিজিএম শেখ হুমায়ুন কবির ইনকিলাবকে বলেন, তদন্ত কাজ চলছে। ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা থাকলেও কমিটি আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কথিত সিবিএ নেতায় অতিষ্ঠ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ