পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মূল্যবোধের অবক্ষয় মনে করছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা
রফিকুল ইসলাম সেলিম : স্বজনের রক্তে রঞ্জিত হাত। কখনও স্বামীর হাতে স্ত্রী, আবার স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন হচ্ছে। শ্যালকের হাতে খুন হচ্ছে ভগ্নিপতি। পুত্রের হাতে মা-বাবা, ভাইয়ের হাতে খুন হচ্ছে ভাই। প্রেমিকের ধারালো অস্ত্রে প্রাণ যাচ্ছে প্রেমিকার। বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে অব্যাহত এই স্বজন খুনের ঘটনায় ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-আতঙ্ক। আপনজনের প্রতি আপনজনের এই সহিংসতায় স্তম্ভিত বিবেকবান মানুষ। উদ্বিগ্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের হত্যাকা-ের পর খুনীরা ধরা পড়ছে। অনেকে খুন করে থানায় হাজির হচ্ছে। খুনের দায় স্বীকার করে নৃশংসতার বর্ণনা দিচ্ছে আদালতে। দ্রুত সময়ে মামলার তদন্ত শেষ হচ্ছে। তবে এভাবে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা যাবে না বলে অভিমত পুলিশ কর্মকর্তাদের। তারা বলছেন, এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ দরকার। স্বজনের হাতে স্বজন খুনের কারণ খুঁজছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। তাদের অভিমত, ধর্মীয় তথা নৈতিক শিক্ষার অভাব, অপসংস্কৃতির প্রভাব, পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়াসহ নানা কারণে সমাজ ও পরিবারে যে অস্থিরতা তার প্রভাবে বেড়েছে পারিবারিক সহিংসতা। রাষ্ট্র এবং সমাজে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দুর্নীতির মাধ্যমে হঠাৎ করে অনেকে বিত্তবান হয়ে পড়ছে। এ কারণে ব্যক্তি স্বার্থ প্রকট হয়ে উঠছে। অন্যের প্রতি সহমর্মিতা কমে যাচ্ছে। নৈতিক অবক্ষয়ের চরম ধস নামার কারণেই স্বজনকে খুন করতেও হাত কাঁপছে না তাদের।
চলতি মাসে নগরী ও জেলায় অন্তত দশটি স্বজন খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব খুনের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া, অনৈতিক সম্পর্ক, পারিবারিক বিরোধ ও মাদকাসক্তি। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারেও ঘটছে স্বজন খুনের ঘটনা। সর্বশেষ নগরীর দক্ষিণ হালিশহরে স্বামীর হাতে খুন হন স্ত্রী। স্ত্রী আয়েশা মনিকে গলা টিপে হত্যার পর র্যাব-৭ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কার্যালয়ে হাজির হন স্বামী আলেক শাহ। খবর পেয়ে ইপিজেড থানা পুলিশ ওই এলাকার যৌথ আবাসিক কলোনীর ভাড়া বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করে। আলেক শাহ অভিযোগ করেন স্ত্রী আয়েশা মনি পরকীয়ায় লিপ্ত। এ কারণে তাকে নিজ হাতে হত্যা করেছেন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে তার বক্তব্যকে সত্য মনে করছে পুলিশ। তদন্তে অন্য কোন রহস্য থাকলে তা বের হয়ে আসবে।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর রাতে সীতাকু- থানায় হাজির হন খাদিজা বেগম নামে এক নারী। দুই শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে থানায় হাজির হয়ে পুলিশকে জানান, স্বামীকে খুন করে এসেছি। বাসায় লাশ রেখে বাইরে তালা দিয়েছি। তার অভিযোগ, কাভার্ড ভ্যান চালকের সহকারী স্বামী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম মাদকাসক্ত। নেশার টাকার জন্য প্রতিদিন তাকে মারধর করেন। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমন্ত স্বামীকে শিলপাটা দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করে হত্যা করেন তিনি।
নগরীর টেরিবাজারে ভগ্নিপতিকে খুন করে থানায় হাজির হন শ্যালক। বাবলু ধর নামে ওই যুবক স্বীকার করেন ভগ্নিপতি স্বর্ণের কারিগর অঞ্জন ধরকে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে ঘরে তালা মেরে দিয়েছেন তিনি। তার দাবি বোনকে নির্যাতন করায় সে এই খুন করেছে। তবে এ খুনের দু’দিন পর নিহতের মা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে খুনের জন্য পুত্রবধূকে দায়ী করেন। তিনি অভিযোগ করেন ৪০ লাখ টাকা বউয়ের নামে এফডিআর করে দেয়ার পর তার ছেলেকে পাত্তা না দিয়ে পুত্রবধূ পরকীয়ায় মগ্ন। এ কারণে ভাইকে দিয়ে স্বামীকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
নিজের পরকীয়া সম্পর্ককে চাপা দিতে স্ত্রীকে হত্যা করে রিদুয়ানুল কাদের হৃদয় নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরার বাসায় স্ত্রীকে খুনের পর তার লাশ বাথরুমের দরজায় ঝুলিয়ে রাখে সে। খবর পেয়ে নিহতের মা বাসায় এসে তালা খুলে দেখেন বাথরুমের দরজায় ঝুলছে কন্যার লাশ। ১০ দিন পর গত সোমবার কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া থেকে পুলিশ তাকে পাকড়াও করে। চান্দগাঁও থানার ওসি শাহজাহান কবির জানান, স্ত্রীকে খুন করে ওইদিনই কক্সবাজার চলে যায় সে। এরপর যে মেয়ের সাথে পরকীয়া চলছিল তাকে বিয়ে করে সেখানে।
১৯ অক্টোবর নগরীর ডবলমুরিং থানার পাহাড়তলী বাজারের কাছে রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসা থেকে রোজিনা খাতুন নামে এক যুবতীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে পুলিশ জানতে পারে দুই মাস আগে রুবেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে রোজিনা খাতুন। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে ভিন্ন চিত্র। এ ঘটনায় আটক মোঃ মাজেদ আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে এ খুনের দায় স্বীকার করে। সে জানায়, তার বন্ধু রুবেলের সাথে রোজিনার লিভ টুগেদার চলছিল। একপর্যায়ে রোজিনা রুবেলকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রুবেল তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, ধর্মীয় তথা নৈতিক শিক্ষার অভাবে পারিবারিক অস্থিরতা বেড়ে গেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে কিছু লোক হঠাৎ ধনী হয়ে গেছে। এতে করে সমাজে চরম বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। নৈতিক শিক্ষার অভাব, পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, মানুষের মধ্যে এককেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা প্রকট হয়ে উঠছে। এর নেতিবাচক ফল হিসেবে স্বজনের বুকে ছুরি চালাচ্ছে স্বজন। তিনি বলেন, অপসংস্কৃতির প্রভাব এবং পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধ প্রচলিত আইন এবং পুলিশি ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।