দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। সৌরজগতের গ্রহ উপগ্রহ, সকল মাখলুকাত, ইহলৌকিক জীবনের সকল উপাদান এমনকি পরলৌকিক জীবনের সকল কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিজগতের সকল কিছুই মাখলুক আর সকল মাখলুকের খালিক একমাত্র তিনিই। আর তিনিই হলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কেবলমাত্র তাঁর ইবাদাত বন্দেগীর জন্য জ্বীন ও ইনসান সৃষ্টি করেছেন। জ্বীন ও ইনসান তাঁরই বাধ্যগত হবে তাঁরই ইবাদাত বন্দেগী করবে এটাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতাশা। পৃথিবীর সকল প্রাণির হায়াত সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত। কোন প্রাণিই তাঁর ইচ্ছার বাহিরে জন্ম নেয় নি, আবার কোন প্রাণিই তাঁর ইচ্ছার বাহিরে মৃত্যুবরণও করবে না। তিনি প্রাণিদেহে রূহ তথা প্রাণের সঞ্চার করেন আবার তিনি নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতার মাধ্যমে প্রাণিদেহের ‘রূহ’ তথা প্রাণবায়ু কবজ করেন। রূহ কবজকারী ফেরেশতাকে ‘মালাকুল মাউত’ বলে। মালাকুল মাউত নামের সম্মানিত এ ফেরেশতা মহান প্রভু আল্লাহপাকের নির্দেশনা মোতাবেক নির্দেশিত অবস্থানে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নির্ধারিত সময়েই রূহকবজ করেন। প্রাণিদেহ হতে যখন রূহ কবজ করা হয় তখন সকল প্রাণিই মৃত্যুযন্ত্রণা তথা ‘সাকারাতুল মাউত’ অনুভব করেন। মালাকুল মাউত ও সাকারাতুল মাউত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ গ্রন্থসমুহে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। যারা দুনিয়ার উপর আখেরাতকে প্রাধান্য দেয় কেবল তাঁরাই মালাকুল মাউত ও সাকারাতুল মাউতের কথা শুনে আঁৎকে উঠে, ভয়ে হৃদয় প্রকম্পিত হয়, তাঁরা আল্লাহপাকের রহমত প্রত্যাশা করে।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মালাকুল মাউত প্রসঙ্গঃ প্রাণিদেহের ‘রূহ কবজ’ করার প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা হলেন ‘মালাকুল মাউত’। কিন্তু তাঁর সহযোগী বহু ফেরেশতা আছেন। তাঁরা মালাকুল মাউতের নির্দেশে এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, তোমাদের জান কবজের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ফিরে যাবে।’ (সুরা সাজদাহ: আয়াত: ৩২)। আল্লাহপাক আরো বলেন, ‘যাহারা নিজেদের উপর জুলুম করে তাহাদের প্রাণ গ্রহণের সময় ফেরেশতাগণ বলে, ‘তোমরা কী অবস্থায় ছিলে’? তাহারা বলে, ‘দুনিয়ায় আমরা অসহায় ছিলাম।’ তাহারা বলে, ‘আল্লাহ্র যমীন কি এমন প্রশস্ত ছিল না যেখানে তোমরা হিজরত করিতে’? ইহাদেরই আবাসস্থল জাহান্নাম, আর উহা কত মন্দ আবাস!’। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯৭)। তিনি আরো বলেন, ‘ফেরেশতারা যখন উহাদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করিতে করিতে প্রাণ হরণ করিবে, তখন উহাদের দশা কেমন হইবে।’ (সুরা মুহাম্মাদ : আয়াত : ২৭)। তিনি আরো বলেন, ‘ বল (হে নবী) তোমাদের জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর ফিরিশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করিবে। অবশেষে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যানীত হইবে।’ (সুরা আস সেজদা : আয়াত : ১১)। তিনিই স্বীয় বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী এবং তিনিই তোমাদের রক্ষক প্রেরণ করেন। অবশেষে যখন তোমাদের কাহারও মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার প্রেরিতরা তাহার মৃত্যু ঘটায় এবং তাহারা কোন ত্রুটি করে না। (সুরা আনয়াম : আয়াত : ৬১)। উল্লেখিত আয়াতগুলোর আলোকে বোঝা যায়, প্রাণিজগতে ‘রূহ কবজকারী’ মালাকুল মাউতের সঙ্গে বহু ফেরেশতা রয়েছেন।
মালাকুল মাউত সম্পর্কিত বিষয়টি স্পষ্টভাবে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- প্রখ্যাত সাহাবী বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কবরে মৃত ব্যক্তির (মু’মিনের) নিকট দু’জন মালাক (ফেরেশতা) আসেন। অতঃপর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাকে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার রব কে?’ সে উত্তরে বলে, ‘আমার রব হলেন আল্লাহ।’ তারপর মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার দীন কী?’ সে ব্যক্তি উত্তর দেয়, ‘আমার দীন হলো ইসলাম।’ আবার মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল, তিনি কে?’ সে বলে, ‘তিনি হলেন আল্লাহর রসূল (মুহাম্মাদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।’ তারপর মালায়িকাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এ কথা তোমাকে কে বলেছে?’ সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার উপর ইমান এনেছি ও তাঁকে সমর্থন করেছি। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এটাই হলো আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর ব্যাখ্যাঃ ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সেসব লোকেদেরকে (দীনের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখেন যারা প্রতিষ্ঠিত কথার (কালিমায়ে শাহাদাতের) উপর ঈমান আনে... আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (সুরাহ্ ইবরাহীম ১৪: ২৭)।
অতঃপর তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আকাশমন্ডলী থেকে একজন আহবানকারী ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। অতএব তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফলে তার দিকে জান্নাতের বাতাস ও সুগন্ধি দোলা দিতে থাকবে এবং দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত তার কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে। (চলবে)
লেখকঃ মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, সদর, নোয়াখালী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।