পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধানের হিসাব এমন- প্রতিমণ ধানে চাল হয় ২৬ কেজি থেকে ২৮ আটাশ কেজি। প্রান্তিক কৃষকরা প্রতিমণ ধান বিক্রি করেছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪২০ টাকা মণদরে। গড় হিসাবে প্রতিমণ ধানের মূল্য ৪শ’ টাকা এবং প্রতিমণ ধানে ২৭ কেজি চাল ধরলে প্রতি কেজি চালের মূল্য হয় ১৫ টাকা। অর্থাৎ বোরো মৌসুমে কৃষকরা প্রতি কেজি চালের দাম পায় ১৫ টাকা। অথচ বর্তমানে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে। দেখা যাচ্ছে প্রতি কেজি চালে মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়াদের পকেটে যাচ্ছে ২৩ টাকা থেকে ২৫ টাকা। কয়েকদিনের মধ্যে আমন ধান কাটার মৌসুম শুরু হবে। বর্তমানে অসময়ে ধান-চালের মূল্য আকাশছোঁয়া থাকলেও মৌসুমের শুরুতে ন্যায্যমূল্য পাবেন কিনা তা নিয়ে কৃষকরা আছেন মহা সংশয়ে।
স্টালিন সরকার/হাসান সোহেল : ‘খায়-দায় চাঁদ মিয়া মোটা হয় জব্বার’ এ প্রবাদটি গ্রামের কৃষকদের যাপিত জীবনে নিয়তি হয়ে গেছে। রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান ফলায় কৃষক; সে ধান বিক্রি করে মোটাতাজা হয় মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্র। গেল মৌসুমে বোরো ধান কেটে কৃষকরা যে চাল বিক্রি করেছেন ১৫ টাকা কেজি দরে; সে চালের দাম এখন এলাকা ভেদে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা। কৃষকের চাল বিক্রি এবং বর্তমান চালের মূল্যের ব্যবধানের বড় অংকের অর্থ যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা-দালাল-মিলার-ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় হোমড়া-চোমড়া নেতাদের পকেটে। তারা ধান-চালের বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। এই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি সারা দেশের ধান-চালের বাজার; কৃষকরা অসহায়। সরকার ধানের দাম বেঁধে দিয়ে ক্রয়ে বিলম্ব করায় কৃষকের ধানের মূল্য চলে যায় ‘ধান বাণিজ্য’ চক্রের হাতে।
১০ টাকা মূল্যে চাল বিক্রি শুরু হওয়ায় হঠাৎ এখন ধান ও চালের দাম বেড়ে গেছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের খাদ্য গুদামের অসাধু কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতা ও দালাল-ফড়িয়ারা মিলে সিন্ডিকেট করে ধান-চাল বিক্রির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আয় করছে। আর মিল মালিকরা ধান থেকে চাল করে দেড়গুণ বেশি দামে বিক্রি করে ফুলেফেঁপে উঠছেন। অথচ গেল বোরো মৌসুমে কৃষকরা ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা মণদরে ধান বিক্রি করেছে। সে সময় প্রতিমণ ধানে কৃষকদের লোকসান হয়েছে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা। সে সময় অবশ্য সরকার প্রতিমণ ধানের দর ৯২০ টাকা বেঁধে দিয়ে ক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ধান ক্রয়ে বিলম্ব করে। প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়েই কৃষকরা লোকসান দিয়ে অর্ধেক দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। অথচ সেই ধান এখন দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে ধনী হচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র।
ধানের হিসেব এমনÑ প্রতিমণ ধানে চাল হয় কম-বেশি ২৬ কেজি থেকে ২৮ আটাশ কেজি। কৃষকরা বোরো মৌসুমে ফসল কেটে প্রতিমণ ধান বিক্রি করেছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪২০ টাকা মণদরে। গড় হিসাবে প্রতিমণ ধানের মূল্য ৪শ’ টাকা এবং প্রতিমণ ধানে ২৭ কেজি চাল ধরলে প্রতিকেজি চালের মূল্য হয় ১৫ টাকা। অর্থাৎ বোরো মৌসুমে কৃষকরা প্রতি কেজি চাল বিক্রি করে দাম পায় ১৫ টাকা। অথচ বর্তমানে প্রতিকেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে। দেখা যাচ্ছে প্রতি কেজি চালে মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়াদের পকেটে যাচ্ছে ২৩ টাকা থেকে ২৫ টাকা।
বর্তমানে ধানে সোনালী রং ধরেছে। ক’দিন পর সারাদেশে আমন ধান কাটা শুরু হবে। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে অথচ কৃষকের মুখে হাসি নেই। নিলফামারী জেলার জলঢাকার কৃষক মশিউর রহমানের জবানীতে উঠে এলো সারা দেশের কৃষকদের করুণ চিত্র। তিনি জানান, বোরো মৌসুমে প্রতিমণ ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। সরকার ধানের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ৯শ’ ২০ টাক। মিডিয়ায় ফলাও করে সে খবর প্রচার করা হয়। কিন্তু মিল মালিক, সরকারি গোডাউনের কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা-জেলা পর্যায়ের স্থানীয় নেতারা মিলে সিন্ডিকেট করে চাল ক্রয় বিলম্ব করে। অথচ ঋণ পরিশোধ, সংসারের খবর মেটানো এবং অন্য ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করতে বাধ্য হয়েই কৃষকদের ধান বিক্রি করতে হয় কম দামে। বাধ্য হয়ে কম দামে কৃষকরা ধান বিক্রি করার একমাস পর সরকারি গুদামে ধান ক্রয় শরু হয়। সে সময় মধ্যস্বত্বভোগীরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করে। মিলার, সরকারি দলের হোমড়া-চোমড়াদের সঙ্গে সরকারি খাদ্য গুদামের কর্মকর্মা-কর্মচারীরা ওই সিন্ডিকেট এখনো বিদ্যমান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস ইনকিলাবকে বলেন, ধানের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্য ৯২০ টাকা, এখনো যা উঠেনি। তিনি বলেন, ধানের দাম বেড়েছে। কিন্তু চালের দাম সে অনুপাতে দ্বিগুণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বর্তমানে কৃষকের কাছে ধান নেই। ধান মজুতদারের কাছে। তারা ধানের দাম বাড়িয়েছে ঠিক, কিন্তু ধান ক্রয় করে যারা চাল উৎপাদন করছে তারা এই দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে ফেলছে। চৈতন্য কুমার দাস বলেন, নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে দেশে এ অবস্থা। ব্যবসায়ীরা রাতারাতি বড়লোক হতে চায় আর সে কারণেই ধানের দামের পাশাপাশি চালের দাম অনেকটা বেড়েছে। এখন চাতাল উঠে গেছে। মজুতদাররা অটো রাইস মিলের মাধ্যমে চাল উৎপাদন করছে। তারাই চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। চৈতন্য কুমার দাস বলেন, সরকারের নিজস্ব অটো রাইস মিল থাকলে সেখান থেকে চাল উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারত। কিন্তু বিভিন্ন সীমাবদ্ধতায় তাও সম্ভব নয়। তবে প্রান্তিক কৃষকরা যাতে সরাসরি সরকারের নিকট ধান বিক্রি করতে পারে সে বিষয়ে কৃষকদের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
সূত্র মতে, কিছুদিন আগেও কৃষক ৪০০ থেকে ৫৮০ টাকায় ধান বিক্রি করেছেন। বর্তমানে দেশের হাটবাজারে প্রতি মণ মোটা ও মাঝারি মানের ধান ৬১০ থেকে ৭০০ টাকা ও সরু ধান ৭৬০ থেকে ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই সময়ে ধানের দাম বাড়ায় কৃষকরা কোনো সুফল পাচ্ছেন না বলে সূত্র জানিয়েছে। কারণ, তারা লোকসান দিয়ে আগেই ধান বিক্রি করে দিয়েছে।
হঠাৎ করে ধান-চালের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানা যায়, সরকারের চাল রপ্তানির চিন্তা-ভাবনা, বড় বড় ধান ব্যবসায়ী ও জোৎদার কৃষকরা বাড়তি দামের আশায় ধান বিক্রি করছে না। তাই মোকামে ধানের আমদানি অনেক কমে গেছে। আর ধানের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে কোনো চালের সংকট নেই। সরকার চাল কেনায় এবং আমদানিতে ট্যাক্স বাড়ানোর সুযোগে মিল মালিকরা অস্বাভাবিক বাড়িয়েছেন চালের দাম। তবে শুধু মোটা চালই নয়। অন্যান্য চালের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক।
গত ১৫ দিনের ব্যবধানেই রাজধানীতে চালের দাম মানভেদে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল রাজধানীতে চালের বড় পাইকারি বাজার বাবুবাজারের পাশাপাশি কাওরানবাজার, নিউমার্কেট ও মহাখালী বাজারে খোঁজ নিয়ে দাম বাড়ার এই চিত্র পাওয়া যায়। রোজার ঈদের সময়ও বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ২০-২২ টাকা। যা এখন ৪০-৪২ টাকা। অর্থাৎ মোটা চালের দামই বেড়েছে ২০ টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে মানভেদে মোটা চাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, পারিজা, হাসকি, বিআর- ২৮ চাল ৩৯ থেকে ৪২ টাকা, মিনিকেট ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, নাজিরশাইল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা, কালিজিরা/চিনিগুঁড়া ৯৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক গত কয়েক মাস আগে রাজধানীর বাবুবাজার থেকে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা বিআর-২৯ চাল বাসায় পৌঁছানোসহ কিনেছিলেন ১ হাজার ৫০০ টাকায়। গত বুধবার তা কিনেছেন ২ হাজার টাকায়। অর্থাৎ বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০০ টাকা। আর কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০ টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সরকারি গুদামগুলোতে চাল মজুদ রয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার টন। তবে গত বছর একই সময়ে মজুদ ছিল ১২ লাখ ৮৬ হাজার টন। গত ৫ মে থেকে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়। গত ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৭ টন ধান এবং চাল সংগ্রহ হয় ৫ লাখ ২১ হাজার ৮১৯ টন। চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী আব্দুল হক বলেন, মোকাম থেকে চাহিদামতো চাল সরবরাহ হচ্ছে না। তাই দাম বেড়েছে।
এদিকে চলতি অর্থ-বছরের বাজেটে চাল আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। কৃষকদের জন্য সুফল বয়ে আনবে মনে করলেও এর প্রভাবে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি বাড়ছে মোটা চালের দাম।
সূত্র মতে, চলতি অর্থ-বছরের (২০১৬-১৭) বাজেটে চাল আমদানির ওপর কাস্টমস ডিউটি ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২৫ শতাংশ এবং রেগুলেটরি ডিউটি ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এ কারণে অনেকেই চাল আমদানি বন্ধ রেখেছেন, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার কৃষকদের লাভবান করতে চাল আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে দিলেও এ উদ্যোগ কৃষকের কোনো কাজে আসছে না। কারণ প্রান্তিক কৃষকের কাছে এখন বিক্রির মতো ধান নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারকে চাল সরবরাহ করতে গিয়ে মিলাররা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া বৃষ্টির কারণে দেশের হাসকিন চাতালগুলো সঠিক সময়ে চাল তৈরি করতে পারেনি। ফলে বাজারে দাম বেড়েছে। সামনের দিনে এ দাম আরো বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বোরো ধান কাটা শেষ হতেই ধান মিলারদের কব্জায় চলে গেছে। এ কারণে তাদের ইচ্ছামত দাম বাড়ানো হচ্ছে।
সামনে আমন ধানের মৌসুম শুরু হবে। প্রান্তিক কৃষকদের শঙ্কা মিলার-গুদাম কর্মকর্তা-দালাল চক্র-স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেকার সিন্ডিকেট যদি অটুট থাকে তাহলে আবারও কৃষকদের চরম পরিণতিতে পড়তে হবে। এই চক্র মৌসুম শুরুতে কৌশলের মাধ্যমে ধানের দাম কমিয়ে দেয়। কৃষকরা ধান বিক্রি করার পর সে ধানের দাম বেড়ে যায়। প্রান্তিক কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য যাতে পায় সে লক্ষ্যে ধান-চালের এ সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া জরুরি। কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের বিষয়টির দিকে নজর দেয়া উচিত। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষকরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। সেই কৃষকদের ফসলের মূল্য মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে যাবে প্রতি বছর? মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান ফলায় কৃষক, সে ধান বিক্রি করে মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট চক্র ধনী হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে কৃষিকে বাঁচাতে হলে কৃষকের স্বার্থের দিকে নজর দেয়া জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।