পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভোট হচ্ছে স্বাধীন দেশে জনগণের মৌলিক অধিকার, একটি পবিত্র আমানত। এর মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নির্যাস হচ্ছে গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম অবলম্বন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। ক্ষমতার স্বাভাবিক পালাবদলের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন ভূলুণ্ঠিত হলে গণতন্ত্রও ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায়। বর্তমান নির্বাচন কমিশনার মহাবুব তালুকদার এক লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন সম্পর্কে তার অভিমত এভাবে তুলে ধরেছেন।
নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে অনিহা তৈরি হয়েছে। গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ায় ভোটাররা ভোটকেন্দ্র যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশ-বিদেশেও এ নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতি দল এখন আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় না। এতে রাজনৈতিক সঙ্কটও ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষে প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন। এ সংলাপের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা খুব একটা আশাবাদী না হলেও তারা মনে করেন, চলমান সঙ্কট নিরসনে এটি সরকারের সামনে একটি বড় সুযোগ। সরকার চাইলে এবার একটি যোগ্য ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ উন্মোচন করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন তার গেটিসবার্গ বক্তৃতায় গণতন্ত্র সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলেন সেটিকেই এখন পর্যন্ত সর্বজন গ্রাহ্য গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৮৬৩ সালে দেওয়া তার এ বক্তৃতায় তিনি গণতন্ত্র বলতে, ‘গভমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’। অর্থাৎ জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা পরিচালিত সরকার এবং জনগণের স্বার্থে পরিচালিত সরকারের কথা বলেছেন। তাই প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অপরিহার্য। যে নির্বাচনে জনগণের স্বাধীন মতামত প্রতিফলিত হয়। আর এ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন জরুরি।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে ১১ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই নির্বাচন কমিশন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়েছে। সব সময় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ক্ষমতার পালাবদল নিয়েও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা হয়েছে। তবে এর মধ্যে বিশেষ করে বিগত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানান প্রশ্ন উঠেছে। এ দুটি নির্বাচন নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটও বাড়ছে। সেসাথে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থাও কমে যাচ্ছে। যা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সঙ্কেত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
২০১৪ বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে। ফলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গুটি কয়েক রাজনৈতিক দল নিয়ে এক তরফাভাবে নির্বাচন করে। এতে উল্লেখ্য, ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়। যা নির্বাচনের নৈতিক ও গণতান্ত্রিক বৈধতা নিয়ে দেশে-বিদেশে এক ধরনের প্রশ্ন ওঠে।
এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের ১১তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক শুরু হয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রট এ নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ করে। তারা বলে নির্বাচনের আগের রাতে প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষমতাসীনরা ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রেখেছে। তাদের এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটি প্রমাণ হয়েছে বলে দাবি ওঠে। এসব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার বিষয়টি জনমনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করে নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। তাদের দ্বারা নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কমিশনের এই ব্যর্থতার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা দায়ী বলে মনে করেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন সরকার তথা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার অভাবই এ জন্য দায়ী।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ক্ষমতাসীন দলের সদিচ্ছা যথেষ্ট। তাদের সদিচ্ছা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে তাদের আজ্ঞাবহ লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। তার প্রতিফলনও স্পষ্ট হয়েছে। তবে এর জন্য দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে। গণতন্ত্র হুমকির মুখে। স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতার পালাবদলের পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে আসছে। এ অবস্থায় সরকারের সামনে এক বিরাট সুযোগ এসেছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে যে সংলাপ শুরু হয়েছে তার মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ভালো ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ উন্মোচন করতে পারে। আর তা যদি না হয়, তাহলে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট আরও বাড়বে এবং তার ফল খুব শুভ হবে না।
এ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। ২০১৭ সালে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তাই আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির আগেই নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও আপর ৪ জন কমিশনারের নাম চূড়ান্ত করতে হবে। সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষে আইন প্রণয়নের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি। তাই এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। সে লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করেছেন। প্রেসিডেন্টের এ সংলাপ নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেরই অভিমত এভাবে আলোচনা করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব নয়। এর আগে সার্চ কমিটির মাধ্যমে রকিব উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি নির্বাচন কমিশন এবং এরপর এ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে যে দুটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এবার সংলাপে যে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে তারা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের দাবি তুলেছেন। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল-জাসদ (রব)। এ ২টি দলই এ ধরনের আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সরকার বলছেন, ফেব্রুয়ারি মধ্যে সংসদে আইন পাস করা সম্ভব নয়। এবার সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করা হবে। এর পর এ সংসদেই পরবর্তী সময়ে একটি আইন করা হবে। তার তাই এবারও প্রেসিডেন্ট সংবিধান এবং আইনের আলোকে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা খুব একটা আশাবাদী নন। তবে তারা মনে করেন, এটি সরকারের জন্য অনেক বড় সুযোগ। সরকার চাইলে এর মাধ্যমে একটি ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ তৈরি করতে পারেন।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ ইনকিলাবকে বলেন, সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন দল অর্থাৎ সরকারকে অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে। সরকার সহযোগিতা না করলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। ভোটার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে তৃতীয় কোনও হাত থাকলে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছ থাকতে হবে। সরকার যদি মনে করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন জনগণকে উপহার দেবে তাহলে যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তি খুঁজে বের করা খুব কঠিন নয়। সরকারের সামনে সে সুযোগ এসেছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার চাইলে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব। যেমনটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হয়েছে। তবে ভালো নির্বাচন কমিশন হলেও শুধু হবে না, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন দলকে অবশ্যই আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। তা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। যেমন আমাদের সময় অর্থাৎ ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সরকার পুরোপুরি সহযোগিতা করেনি। সে সময় নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেনাবাহিনী মোতায়েন করার। সরকার তাতে রাজি হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে তখন নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তাই আমি বলব, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন দল বা সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। সেই সাথে যোগ্য এবং দক্ষ নির্বাচন কমিশনও অবশ্যই প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।