পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামীকাল শনিবার খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব বড় দিনকে সামনে রেখেও আনন্দঘন পরিবেশ নেই ভারতে। ৩ কোটিরও বেশি অনুসারীসহ এশিয়ার প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দেশ ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য প্রণীত সাংবিধানিক নিরাপত্তা সত্ত্বেও ভারতে সংখ্যালঘুদের বসবাস ক্রমশই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে প্রথমে মুসলিম এবং তারপর খ্রিস্টান বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
সহিংস খ্রিস্টান-বিরোধীরা বিভিন্ন গীর্জা এবং মিশনারি স্কুলগুলোতে আক্রমণ চালাচ্ছে, খ্রিস্টান সাহিত্য পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং যাচকদের নির্যাতন করছে। অনেক ক্ষেত্রে, পুলিশ এবং ভারতের শাসক বিজেপির সদস্যরা তাদের সাহায্য করছে। অনেক হিন্দু উগ্রপন্থীর কাছে হামলাগুলো ন্যায্য এবং ধর্মান্তর রোধ করার একটি উপায়। তারা মনে করেন যে, তুলনামূলকভাবে অল্প সংখ্যক খ্রিস্টানদের জন্য হিন্দু ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাবনা ভারতকে একটি খাঁটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্নের জন্য হুমকিস্বরূপ। অনেক খ্রিস্টান এতটাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন যে, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হিন্দু হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মধ্য ও উত্তর ভারত, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখানে খ্রিস্টানদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা চাপ সবচেয়ে বেশি। যাজকরা সেখানে রাতে গোপনে প্রার্থনা এবং ব্যাপ্টিজম পরিচালনা করেন। তারা ছোট ট্রানজিস্টর রেডিওর মতো দেখতে অডিও বাইবেল দিয়ে মানুষকে সাহায্য করেন, যাতে নিরক্ষর গ্রামবাসীরা চাষাবাদের সময়টিতে গোপনে ধর্মগ্রন্থ শুনতে পারেন।
ভারত জুড়ে খ্রিস্টান বিরোধী শক্তি দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে, যাদের মধ্যে আইনজীবী এবং কেরানিদের একটি সাদা-পোষাকের বাহিনী রয়েছে যারা খ্রিস্টান সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ দায়ের করে থাকেন। তারা প্রত্যন্ত গ্রামে বিচ্ছিন্ন খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে বিপর্যকর সামাজিক পরিত্যাগের পরিকল্পনা করেন। ব্যাপক সাক্ষাৎকার অনুসারে, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা খ্রিস্টান গ্রামবাসীদের পাতকূপ ব্যবহার থেকে বিতাড়িত করেছে, তাদের হিন্দু বাড়িতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে এবং একঘরে করেছে। গত বছর ভারতের একটি শহরে তারা ক্রিসমাসে লোকজন জড়ো হতে বাধা দেয়।
মধ্যপ্রদেশের ক্ষুদ্র বিলাওয়ার কালান গ্রামের প্রবীণরা সম্প্রতি তাদের বাড়িতে খ্রিস্টানদের প্রবেশের অনুমতি দেয় এমন যেকোনো পরিবারের জন্য ১শ’ ৩০ রূপি জরিমানা বা সমতুল্য ব্যবস্থা চালু করেছে। একই সময়ে, তারা কয়েকটি খ্রিস্টান পরিবারকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে, সতর্ক করে দিয়েছে যে, অন্যথায় কেউ তাদের সন্তানদের বিয়ে করবে না, তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবে না বা বাজারে তাদের কিছু বিক্রি করবে না।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো অনুমান করছে যে, এ বছর ১শ’রও বেশি খ্রিস্টানকে ভুয়া অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বলছে যে, ভারতে ধর্মান্তরবিরোধী আইন জনপ্রিয়, যা জনসাধারণের মেরুকরণের জন্য ধর্মকে একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ, যারা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ, তাদের ভোট জিততে এটি বিজেপির ভোট রাজনীতির অংশ। ভারতের ইভাঞ্জেলিক্যাল ফেলোশিপ বলছে, ‘২০১৪ সাল থেকে খ্রিস্টান-বিরোধী ঘৃণা এবং অপরাধ দ্বিগুণ হয়েছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ও কর্মীরা লিগ্যাল রাইটস অবজারভেটরি নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে খ্রিস্টান দাতব্য সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ দায়ের করেছে, তাদের তহবিল আটকে দিয়েছে এবং অনেক সংস্থা বন্ধ করে দিয়েছে।
বিগত কয়েক বছরে মোদি এবং তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতকে দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর তৈরি বহুসংস্কৃতির ভিত্তি থেকে বহু দূরে উগ্র হিন্দুবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। খ্রিস্টানদের ওপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণ, যারা জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ, ভারতে চলমান একটি বিস্তৃত পরিবর্তনের অংশ, যেখানে সংখ্যালঘুরা কম নিরাপদ বোধ করছে। হিন্দু চরমপন্থীদের সম্পর্কে এক খ্রিস্টান কৃষক বলেন, ‘তারা আমাদের সমাজ থেকে সরিয়ে দিতে চায়। খ্রিস্টানদের ওপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণ ভারতে একটি বিস্তৃত পরিবর্তনের অংশ, যেখানে সংখ্যালঘুরা কম নিরাপদ বোধ করে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।