দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : দুনিয়াবি কাজে বাহ্যিক দিকও বিবেচ্য হয়: বাড়ি বানালে তার ওপর প্লাস্টার করতে হয়। রঙ করতে হয়। শুধু ছাদ ঢালাই আর চার দেয়াল তৈরি করলেই বাড়ি হয়ে যায় না। হ্যাঁ, এর দ্বারা বাড়ির ভেতরে থাকার উপযোগী হয়, তবে বাড়ির আসল সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয় না।
অনুরূপভাবে একটি গাড়ির কথাই ধরুন। শুধু ভেতর তথা ইঞ্জিন থাকলেই গড়ি হয়ে যায় না। রবং ওপর তথা ‘বডি’র প্রয়োজনও সবাই স্বীকার করে। এজন্য কোনো ব্যক্তি গাড়ির ইঞ্জিনের মালিক হওয়ার অর্থ গাড়ির মালিক হওয়া নয়। বরং এর জন্য বডিও লাগে।
বুঝা গেল, পার্থিব সব ক্ষেত্রে শুধু ভেতর ঠিক হলেই চলে না; ওপরও ঠিক হওয়া লাগে। অথচ যতো বাহানা কেবল দ্বীনের ক্ষেত্রে। দ্বীনকে আজ আমরা ‘বেচারা’ বানিয়ে রেখেছি। দ্বীন আমাদের কাছে আজ অবহেলিত বিষয়। দ্বীনের কোনো বিষয় আসলেই ‘ভেতর ও ওপর’ এর দর্শন আমাদের মাঝে উতলে ওঠে।
এটি শয়তানের ধোকা: মূলত এ ধরণের ‘দর্শন’ শয়তানের ধোঁকা বৈ কিছু নয়। কারণ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য, ভেতর ও বাহিরের অবস্থা একই সঙ্গে টিক থাকতে হবে। পোশাক-আশাক পানাহার ও সামাজিক শিষ্টাচারের সম্পর্ক যদিও মানুষের বাহ্যিক অবস্থার সঙ্গে, তবে এগুলোরও একটা প্রভাব অবশ্যই আছে। যে প্রভাবটা পড়ে মানুষের অন্তরের মাঝে। বিধায় পোশাককে যারা সাধারণ বিষয় মনে করে তারা ইসলামের তাৎপর্য সম্পর্কে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। যদি তাদের ধারণাই সঠিক হত, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোশাকের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দিতেন না। যেসব ক্ষেত্রে মানুষ ভুলের শিকার হয়, সেসব ক্ষেত্রেই তো তাঁর দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। তাই পোশাক সম্পর্কেও তার নির্দেশনা ও নীতিমালা জানা অবশ্যই জরুরি।
শরীয়ত কোনো পোশাক নির্দিষ্ট করেনি: ইসলাম পোশাকের ব্যাপারে দিয়েছে যথোপযুক্ত নীতিমালা। ইসলাম কোনো নির্দিষ্ট পোশাক কিংবা ডিজাইন নির্ধারিত করে একথা বলেনি যে, ইসলামি পোশাক এটাই এবং এর বাইরে অন্য যেকোনো পোশাক ইসলাম পরিপন্থী। সুতরাং এটাই পরতে হবে। বরং ইসলাম উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পোশাকের মূল্যায়ন করেছে, যেহেতু ইসলাম হলো, প্রকৃতির ধর্ম। তাই দেশ, জাতি, রুচি, অবস্থা ও মৌসুমের কারণে পোশাকের ভিন্নতার প্রয়োজনীয়তা ইসলাম অস্বীকার করেনি। ইসলামের নীতিমালা অনুসরণ করে যেকোনো ধরণের পোশাক পরিধানের অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু ইসলামরে মূলনীতির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। মূলনীতি রক্ষা করে সব ধরণের পোশাক পরা যাবে।
পোশাক সংক্রান্ত চারটি মূলনীতি: কোরআন মাজীদের একটি আয়াতে পোশাক সম্পর্কে চারটি মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে। আয়াতটি হল
‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক; এটি সর্বোত্তম।’ (সূরা আরাফ: ২৬)
পোশাকের প্রথম মৌলিক উদ্দেশ্য: আলোচ্য আয়াতে পোশাকের প্রথম মূল লক্ষ্য চিহ্নিতকরণকল্পে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যা দ্বারা তোমাদের গুপ্তাঙ্গ আবৃত করতে পার। এখানে سوآة শব্দের অর্থ হলো, ওই সব বস্তু বা বিষয় যার আলোচনা করা কিংবা খোলা রাখা মানুষ স্বভাবতই লজ্জাজনক মনে করে। উদ্দেশ্য হলো, সতর ঢেকে রাখা, পুরুষ ও নারীর কিছু অঙ্গকে আল্লাহ তায়ালা ‘সতর’ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যে অঙ্গগুলো আবৃত রাখা আবশ্যক। এক্ষেত্রে পুরুষের সতর ভিন্ন এবং নারীর সতর ভিন্ন। পুরুষের সতর হলো, নাভি থেকে নিয়ে হাঁটু পর্যন্ত। আর নারীর জন্য মুখমন্ডল ও পায়ের গোড়ালি ছাড়া সম্পূর্ণ শরীরটাই সতর। সতর ঢাকা ফরজ। যে পোশাক সতর আবৃত রাখতে ব্যর্থ তা শরীয়তের দৃষ্টিতে পোশাকেরই অন্তরভুক্ত নয়।
পোশাকে তিনটি দোষ: তিন ধরণের পোশাক প্রথম মূলনীতি তথা সতর আবৃত করতে ব্যর্থ-
এক. এমন সংক্ষিপ্ত পোশাক যা পরলে সতর সম্পূর্ণ আবৃত্ত হয় না।
দুই. এমন পাতলা-ফিনফিনে পোশাক যা পরিধান করলে সতর আবৃত হয় বটে; তবে পাতলা হওয়ার কারণে শরীর স্পষ্ট দেখা যায়।
তিন. এমন আঁট-সাঁট পোশাক যা পরিধান করা সত্তেও শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গসমূহ দেখা যায়। এ তিন ধরণের পোশাক পরিপূর্ণভাবে সতর আবৃত করতে ব্যর্থ বিধায় শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম হিসেবে বিবেচিত হবে।
বর্তমান যুগের নগ্ন পোশাক: বর্তমান যুগের ফ্যাশন হলো, নগ্ন পোশাক। ফ্যাশনের নিয়ন্ত্রণহীন গতি পোশাকের মূলনীতিকে রক্তাক্ত করে তুলেছে। দেহের কোন অঙ্গ উন্মুক্ত আর কোন অঙ্গ আবৃত এ নিয়ে কারো যেন মাথা ব্যথা নেই। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এ জাতীয় পোশাক পোশাকই নয়। যে নারী এ জাতীয় পোশাক পরে তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
‘তারা পোশাক পরেও নগ্ন হবে।’ (মুসলিম, হাদীস নং- ৩৯৭১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ৮৩১১)
যেহেতু তাদের এ জাতীয় পোশাক পোশাকের মূল উদ্দেশ্যকেই আহত করেছে, তাই যদিও তারা পোশাক পরেছে, মূলত তারা উলঙ্গ। আধুনিক যুগের নারীদের মাঝে এসব নগ্নতা আজ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের অঙ্গশোভার রঙনাচন আজ যুব সমাজকে অনৈতিকতার দুর্গন্ধময় নর্দমায় নিক্ষেপ করছে। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে নারীরা আজ নেচে-গেয়ে বেড়াচ্ছে।
আল্লাহর ওয়াস্তে এগুলো বর্জন করুন। নিজের আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলুন। পণ্যপ্রবণ জীবন নয়, বরং মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করুন। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা মতো জীবনকে পরিচালনা করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।