পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক যে দুইজনের তথ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করেছে তাদের একজন দেশের ভেতরে আত্মগোপন করে রয়েছেন বলে পুলিশ মনে করছে।
ঢাকার পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী মেজর জিয়া এখনও দেশেই আত্নগোপন করে রয়েছেন বলে তারা ধারণা করছেন। তবে তার অবস্থান জানা যাচ্ছেনা। মেজর জিয়া নামে পরিচিত সৈয়দ জিয়াউল হক এবং আরেক পলাতক আসামী আকরাম হোসেনের ব্যাপারে তথ্যের জন্য পুরস্কার ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ করেছিল কিনা - তা নিয়ে পুলিশ বা সরকারের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলছেন, আমেরিকা এমন পুরস্কার ঘোষণা আগেও করেছে এবং তা থেকে সাফল্য পেয়েছে। অভিজিৎ রায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে পুলিশ যাদের দেখিয়েছে, সেই সৈয়দ জিয়াউল হক এবং আকরাম হোসেনকে কয়েক বছর ধরেই গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সেই চেষ্টা এখনও সফল হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগেও পুলিশের মামলা রয়েছে।
সৈয়দ জিয়াউল হক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মূল নেতা বলেও তথ্য প্রমাণ থাকার কথা পুলিশ বলে আসছে। এই জঙ্গি সংগঠনটির আল কায়দার সাথে যোগসূত্র আছে বলে বলা হয়ে থাকে। এখন তাদের ব্যাপারে তথ্য পাওয়ার জন্য ৫০ লক্ষ ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনালে সৈয়দ জিয়াউল হকসহ পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড এবং একজনের যাজ্জীবন সাজা হয়। রায়ের দিন আদালত চত্বরে ভিড়।
মেজর জিয়া কোথায়?
কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশ এতদিনেও কেন সৈয়দ জিয়াউল হক বা আকরাম হোসনকে ধরতে পারছে না - এই প্রশ্ন অনেকে তুলেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর তৎপরতা সম্পর্কে সৈয়দ জিয়াউল হকের ধারণা থাকায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ বিভিন্ন সংস্থা চেষ্টা করে এখনও সফল হতে পারেনি।
"মেজর জিয়া হিসাবে পরিচিত সৈয়দ জিয়াউল হক সামরিক বাহিনী থেকে চাকরিচ্যূত। সেজন্য আমরা যে পদ্ধতি অনুসরণ করি কোন অপরাধীকে চিহ্নিত করা বা তার লোকেশন জানার জন্য, উনি পুরো প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত," পুলিশ কমিশনার মি: ইসলাম বলেন। "ফলে প্রচলিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমরা তাকে ট্রেস করতে পারছি না" তিনি বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, শুধু কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটই নয়, বিভিন্ন সংস্থা তাকে খুঁজছে।
"সৈয়দ জিয়াউল হককে ট্রেস করতে পারলে আনসার আল ইসলামের পুরো গ্রুপটাই বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সেজন্য আমাদের চেষ্টা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বলার মতো কোন সাফল্য নেই" বলেন মি: ইসলাম। কিন্তু সৈয়দ জিয়াউল হক দেশে আছে কিনা- এই প্রশ্ন করা হলে পুলিশ কমিশনার বলেন, "উনি দেশে আছে - আমরা মনে করি যে উনি দেশে আছে।" "তা না হলে আমরা যে এখনও আনসার আল ইসলামের দুই চারজনকে ধরি (গ্রেফতার করি)। তার থেকে আমরা ধারণা করি যে উনি দেশে আছেন" বলেন মি: ইসলাম। আরেকজন আসামী আকরাম হোসেন দেশে নাই বলে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন।
তথ্য না পাওয়ার প্রশ্নে সন্দেহ: তবে সৈয়দ জিয়াউল হক সম্পর্কে কোন তথ্যই যে বের করতে পারছে না আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী - এনিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অনেকেই। তারা বলেন, পুলিশ র্যাব বিগত বছরগুলোতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি বিরোধী অনেক অভিযান চালিয়েছে। এর মধ্যে গুলশানে হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার রুপনগরে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিহতদের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম নামে সেনাবাহিনীর একজন সাবেক মেজর ছিলেন। বিভিন্ন অভিযানে আনসার আল ইসলামেরও অনেক গ্রেফতার হয়েছে।
কিন্তু এরপরও সৈয়দ জিয়াউল হকের খোঁজ না পাওয়ার বিষয়কে আশ্চর্যজনক বলে বর্ননা করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন। "তারা কোথায় আছে-এটা বের করতে না পারাটা আমার কাছে আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছে। কারণ এখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এবং ইন্টেলিজেন্স ক্যাপাসিটি অনেক বেড়েছে।" পুলিশ কমিশনার মো: শফিকুল ইসলামের বক্তব্য হচ্ছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রযুক্তি অনেক উন্নত হলেও সৈয়দ জিয়াউল হক মোবাইল ফোনসহ কোন ডিভাইস ব্যবহার না করায় তাকে ধরা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রর পুরস্কার ঘোষণা করার ব্যাপারটা বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, তারা তা মনে করেন না। তিনি বলছেন, অভিজিৎ রায় এবং তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় দেশটি এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলছেন, এমন পুরস্কার ঘোষণা করা যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো নীতি। একই সাথে তিনি বলেছেন, "আমরাও সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খুনিদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছি।" "বঙ্গবন্ধুর পাঁচজন খুনির মধ্যে একজন আমেরিকায় এবং একজন কানাডায় আছে। বাকি তিনজনের তথ্য পাওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছি" বলেন মি: মোমেন।
যুক্তরাষ্ট্র পুরস্কার ঘোষণার আগে তা বাংলাদেশকে জানিয়েছিল কিনা- এ প্রশ্নে কোন জবাব সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায় নি। অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় সৈয়দ জিয়াউল হক এবং আকরাম হোসেনকে পলাতক দেখিয়ে নিম্ন আদালতে ইতিমধ্যে বিচার হয়েছে। তাতে এই দু'জনসহ পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড হয়ে রয়েছে। মামলায় ছয়জন আসামীর বাকি চারজন গ্রেপ্তার রয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।