Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্যানেল শিক্ষক নিয়োগে হ-য-ব-র-ল!

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে

প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ চার বছরের আইনি প্রক্রিয়া শেষে মামলায় জয়লাভ করেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার তানজিম আক্তার। এতিম এই চাকরিপ্রার্থী আইনি লড়াইয়ে জিতলেও নিয়োগ পাননি এখনো। কারণ তার উপজেলায় কোনো শূন্য পদ নেই। অথচ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকার (ফুলবাড়ীয়া-পার্বতীপুর) দুই উপজেলায় মাত্র ৫৬টি পোস্ট ফাঁকা থাকলেও নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষক।
প্যানেল শিক্ষক নিয়োগে এমনি হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
চাকরি না পাওয়ায় তানজিমের বিয়ে দিতে পারছে না তার বৃদ্ধা মা। প্যানেল শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি মামলার আইনজীবী, সিদ্দিকুল্লাহ মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, মহামান্য আদালত রায়কারীদের নিয়োগ দানের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় ২৯ এপ্রিলের পাঁচ সদস্যের কমিটির বৈঠকে আদালতের আদেশ অমান্য করে সকলকে নিয়োগ প্রদানের জন্য সুপারিশ করে। পরবর্তীতে তারা ধাপে ধাপে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। অথচ হাইকোর্টে রায়প্রাপ্ত প্রায় ৫ হাজার শিক্ষক এখনো নিয়োগের অপেক্ষায় আছে। যারা চাকরির জন্য চার বছর ধরে কোর্টে লড়েছে। মন্ত্রণালয়ের ভুল সিদ্ধান্তের ফলেই এই জট লেগেছে।
ঐ আইনজীবী আরও বলেন, রায়কারীদের নিয়োগ দিলে এতদিনে সম্পূর্ণ প্যানেল নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে যেত। কারণ হিসেবে বলেন, এর মাঝে পুলের শিক্ষক আছে প্রায় ৩ হাজার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৩য় শ্রেণির কর্মচারী আছে অন্তত ২ হাজার এছাড়া বিভিন্ন হাইস্কুলের শিক্ষক আছে ১ হাজারের উপরে। মোট ৬ হাজার বহিরাগত বা যাদের চাকরির প্রয়োজন ছিল না তারা নিয়োগ পাওয়ায় এখন সর্বোচ্চ আদালতের রায়প্রাপ্ত ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগের অপেক্ষায় বসে আছেন। এ্যাডভোকেট সিদ্দিকুল্লাহ বলেন, একজন প্যানেল শিক্ষক বাদ গেলেও আবার আদালতের দ্বারস্থ হব আমি। প্যানেলের মামলার সুপ্রিম কোর্টের রিভিউকালীন আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক ইনকিলাবকে বলেন, আদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে রায়করীদের নিয়োগদানের জন্য। যেহেতু মেধাক্রম অনুযায়ী তারা লিখিত এবং মোখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সুতরাং মন্ত্রণালয় কীভাবে সকলের মেধাক্রমভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে বুঝলাম না। এটা কোর্টের আদেশ অমান্য করছে। যার ফলে রায়কারী রা রিভিউ শেষ করার পরেও নিয়োগ পায়নি। তবে মন্ত্রণালয় কখনোই রায়কারীদের বাদ দিয়ে নিয়োগ বন্ধ ঘোষণা করতে পারবে না। তারা শুধু রায়কারীদের নিয়োগ দিতে পারত।
দিনাজপুর জেলা অফিসের একটি সূত্র জানায়, প্যানেল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সময় মন্ত্রীর নির্দেশে তার নির্বাচনী দুই উপজেলায় সদ্য-জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয় থেকে পেছনের তারিখে ১৪৩ জন শিক্ষককে পুরাতন সরকারি স্কুলে বদলি করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। যার ফলে সদ্য জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ে অপেক্ষমাণ প্যানেলসংখ্যক শূন্য পোস্ট সৃষ্টি হয়। তার নির্বাচনী এলাকায় কোনো শিক্ষকই নিয়োগ বাকি নেই।
এ বিষয়ে মন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চাইলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি মন্ত্রণালয়ে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও তিনি সময় দেননি।
তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বদলির বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রতিবেদকের কাছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ শাখার সহকারী পরিচালক শাফায়েত আলম বলেন, এবিষয়ে কোনো তথ্য আমি দিতে পারব না।
তবে এই শাখা থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া পরিচালক আনোয়ারুল আজিম ইনকিলাবকে বলেন, এখনো সারাদেশে প্রায় ৪-৫ হাজার পোস্ট শূন্য আছে রেজিস্টার্ড স্কুলে। মন্ত্রণালয় চাইলে জেলা সমন্বয়ের মাধ্যমে এই পাঁচ হাজার পদে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা দিতে পারে। তাছাড়া পুলে আছে মাত্র ১৫ হাজার ১৯ জন শিক্ষক। সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজারের উপরে সহকারী শিক্ষকের পদ খালি আছে। যা ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। মন্ত্রণালয় চাইলেই পুলের জন্য ১৫ হাজার পদ বাকি রেখে অবশিষ্ট প্যানেলদের নিয়োগের নির্দেশনা দিতে পারে। তাদের কথার বাহিরে অধিদপ্তরের কোন কাজ করার ক্ষমতা নেই। তবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চায় যে অসহায় বঞ্চিত শিক্ষকরা দ্রুত পাঠদানে ফিরে যাক।
আনোয়ারুল আজিম আরও বলেন, এদের নিয়োগ দিতে বিলম্ব করলে অধিদপ্তর আবারও মামলার ফাঁদে পড়তে পারে। তাই অধিদপ্তরের উচিত এদের পক্ষে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেন, আমরা শূন্য পদে নিয়োগ চলমান রেখেছি। সদ্য জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ে শূন্য পদ না থাকায় প্রায় ৭ হাজার শিক্ষক অপেক্ষমাণ আছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি (প্যানেল) সভাপতি রোজেল সাজু বলেন, দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে আমাদের চার বছর লেগেছে। এরপরেও সরকার আমাদের নিয়োগ নিয়ে তালবাহানা করছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অন্যান্য শিক্ষক সমিতিদের সহায়তা নিয়ে সকল শিক্ষকরা পাঠদান বিরতি কর্মসূচি এবং প্রয়োজন হলে রাস্তায় নেমে আসবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, আইন মন্ত্রণালয়সহ সবাই আমাদের সকলকে নিয়োগ দেয়ার জন্য মত নির্দেশ দিয়েছেন। এখন অধিদপ্তর গড়িমসি করে নিয়োগ বন্ধ করে রেখেছে। শুধুমাত্র শূন্য পদে নিয়োগ চলমান রাখলে ২০৫০ সালেও প্যানেল নিয়োগ সম্পন্ন হবে না।
প্যানেল শিক্ষক এক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, মন্ত্রীর এলাকায় মন্ত্রী বদলি মাধ্যমে পদ শূন্য করে নিয়োগ সম্পন্ন করলে আমরা কি দোষ করেছি? সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়েও বিদ্যালয়ে যেতে পারছি না। আমরা কি বাংলাদেশের নাগরিক না?
প্যানেল শিক্ষক নিয়োগে এই অনিয়ম বৈষম্যর তদন্ত দাবি করে তিনি। এছাড়া প্যানেল শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ দাবি করেন এই নেতা। তিনি বলেন আমরা বিদ্যালয়ে ফিরে যেতে চাই। আমাদের হাইকোর্টের রায়, আপিলের রায় আছে, রিভিউয়ের রায় আছে। তাহলে অপরাধ কি কেন যেতে পারছি না বিদ্যালয়ে।



 

Show all comments
  • Ashutosh Kumar Bosu ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ৮:২২ এএম says : 0
    Do something very soon.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্যানেল শিক্ষক নিয়োগে হ-য-ব-র-ল!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ