পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নতুন নতুন সন্ত্রাসী
স্টাফ রিপোর্টার : সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তালিকা নেই পুলিশের হাতে। ফলে গত ৫ বছরে নতুন করে যেসব সন্ত্রাসী তৈরি হয়েছে তারা বিভিন্ন অপরাধ করেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা এসব নতুন সন্ত্রাসী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ বলছে, গত দুই বছর ধরে জঙ্গিবিরোধী অভিযান এবং আন্দোলনের নামে যারা নাশকতা করছে তাদের দমনে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। ফলে এখন আর আগের মতো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও পেশাদার কিলারদের নতুন তালিকা করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন দাবি করেছেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। তাদের মতে, সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রকাশ করলে তারা সতর্ক হয়ে পালিয়ে থাকে। এতে করে অপরাধীদের গ্রেফতার করতে সময় লাগে। এ কারণে এখন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট থানায় অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে ডিএমপির তথ্য মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগের নথিতে রাজধানীতে প্রায় ৫ হাজার বিভিন্ন স্তরের সন্ত্রাসী সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু এদের অধিকাংশই বছরের পর বছর রয়েছে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। শুধু রাজধানীতেই নয়, সারাদেশের সন্ত্রাসীদের কোনো হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হয়নি গত ৫ বছরে। সর্বশেষ ২০১১ সালে সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশেই আগের মতো আর কোনো সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে পারে না। আগের মতো ভয়ঙ্কর বা শীর্ষ সন্ত্রাসীও গড়ে ওঠেনি। ফলে নতুন করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দীর্ঘ আকারের কোনো তালিকা তৈরিরও প্রয়োজন পড়েনি। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। যারা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত হচ্ছে তাদের সাথে সাথে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে অপরাধ করে কেউ সহজে পালাতে পারছে না। আগের মতো সন্ত্রাসীদের তালিকা করে প্রকাশ করা হচ্ছে না, তবে অপরাধীদের সব তথ্য পুলিশের কাছে হালনাগাদ আছে। সন্ত্রাসী কর্মকা- করে দাপিয়ে বেড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন কোনো সন্ত্রাসী সরকারদলীয় বা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে না।
জানা গেছে, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হয়ে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে উঠতি সন্ত্রাসীরা। এসব নতুন নতুন সন্ত্রাসী শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করতে করতে এখন নিজেরাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এরা এখন শুধু চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসী কর্মকা-েই জড়িত নয়, এলাকার আধিপত্য বিস্তার এবং নিয়ন্ত্রণেও জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, এলাকাভিত্তিক রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নতুন নতুন সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, থানাভিত্তিক হালনাগাদ তালিকা না হলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সন্ত্রাস দমনের কাজ করছে পুলিশ ও র্যাব।
পুলিশ সদর দফতরে রাজধানীর ৪৯টি থানার প্রায় ৫ হাজার অপরাধীর নাম আছে। তবে সেখানে নেই তাদের অবস্থান, পরিবার ও কার্যকলাপের বিবরণ। রাজধানীতে যখন ৩৫টি থানা ছিল, তখন অপরাধীর সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৮৩। ২৬টি থানা যখন ছিল, তখন তালিকায় ছিল দুই হাজার ২২ জন।
২০০৯ সালে সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদের পর ২০১০ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন জাতীয় সংসদে ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম প্রকাশ করেন। ওই তালিকায় আগের তালিকার ২২ শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ রাজধানীর কিছু সন্ত্রাসীর নাম প্রকাশ পায়। তবে সেখানেও নিহত ও নিখোঁজ সন্ত্রাসীর নাম ছিল। ২০১০ সালেই ডিএমপি ৪১ থানার ৫১৫ জন উঠতি সন্ত্রাসীর নাম তালিকাভুক্ত করে। পরে ২০১১ সালে ওই তালিকা এসে দাঁড়ায় ৫৫০ জনে। তারপর ওই তালিকা আর হালনাগাদ হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মাসুদুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসীদের তালিকা পুলিশের কাছে আছে। তবে এখন আর আগের মতো তালিকা হালনাগাদ হয় না, সব থানায় অপরাধীদের তালিকা রয়েছে। এসব তালিকা ধরেই বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের তালিকা করা এবং তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা অব্যাহত আছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হালনাগাদ তালিকা না থাকলেও তাদের কাছে বেশ কিছু অপরাধীর তথ্য রয়েছে। মিরপুর থানায় ১৫৪ সন্ত্রাসী সক্রিয়। দ্বিতীয় স্থানে আছে বাড্ডা থানা। এ থানায় সক্রিয় আছে ৯৮ জন। তালিকা অনুযায়ী গুলশান থানায় সক্রিয় ৭২ জন, তেজগাঁও থানায় ৫৪, শিল্পাঞ্চল থানায় ৪৬, কোতোয়ালিতে চার, হাজারীবাগে ৪১, নিউমার্কেটে ৯, লালবাগে ৩৯, কলাবাগানে ১২, সূত্রাপুরে ১৯, রামপুরা-সবুজবাগ-খিলগাঁওয়ে ১৮, পল্লবীতে ৮, রমনায় ৭, মতিঝিলে ২২, মোহাম্মদপুরে ১১, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা-শ্যামপুরে ৩৩, কদমতলীতে ২০ ও আশুলিয়ায় ৪৪ সন্ত্রাসী।
ডিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, অতীতে শীর্ষ সন্ত্রাসী বা থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে সুফল মেলেনি। তাই গোয়েন্দাদের মাধ্যমে গোপনে তালিকা করে অভিযান চালানোর কৌশল গ্রহণ করেছে ডিএমপি।
ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করতে ৫-৬ মাস কেটে যায়। পরে বিভিন্ন সংস্থার তালিকা সমন্বয় করে তা চূড়ান্ত করতে আরো ২-৩ মাস লাগে। দীর্ঘ এই সময়ের মাঝে অনেক ছিঁচকে সন্ত্রাসী আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন হয়ে ওঠে। কিন্তু মাঠপর্যায় থেকে এই তথ্য যথাসময়ে না পাওয়ায় ভয়ঙ্কর এসব সন্ত্রাসীর নাম থেকে যায় তালিকার বাইরে। এছাড়া শীর্ষ সন্ত্রাসী খুন হওয়ার পর সেই তথ্যও অনেক সময় সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে না। তাই মৃত সন্ত্রাসীদের নামও কখনো কখনো শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় দেখা যায়।
প্রসঙ্গত ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে ওই তালিকার সঙ্গে আরো কিছু নাম জুড়ে দিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম সংসদে প্রকাশ করেন। নতুন সদস্যদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা না হলেও তাদের মধ্যে ১০ জন গ্রেফতার, ১০ জন পলাতক এবং একজন নিখোঁজ থাকার তথ্য দেন। বাকি ২১ জনের বিস্তারিত পরিচয় এবং অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই তালিকা নিয়েও সেই সময় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের কোনো নামের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।