Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিলাস যাপনেই লাটে উঠেছে যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানী

প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাবিবুর রহমান : দায়িত্বশীল কমকর্তাদের বিলাসী জীবন যাপন ব্যায় মেটাতে গিয়েই লাটে উঠেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল কর্পোরেশন অধীনস্থ যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানী। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সবগুলো খাতেই বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। খাবার আর অহেতুক যাতায়াতের নামে প্রতিবছরই খরচ দেখানো হয়েছে লাখ লাখ টাকা। সেটআপ বহির্ভতভাবে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেখিয়ে এবং অতিরিক্ত গাড়ি ব্যবহারের নামেও তুলে নেয়া হয়েছে টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বাংলাদেশের মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক। প্রতিবেদনে কোম্পানীটির ১১টি খাতের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য এ কে এম মাঈদুল ইসলাম, মো. আব্দুস শহীদ, মো. মোসলেমউদ্দিন, মোহাম্মদ আমানউল্লাহ, পঞ্চানন বিশ্বাস, আ ফ ম রুহুল হক, মো. অফসারুল আমীন, মো. শামসুল হক টুকু, মইন উদ্দীন খান বাদল, বেগম রেবেকা মমিন এবং ওয়াসিকা আয়েশা খান। এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কেমিক্যাল কর্পোরেশপনা চেয়ারম্যান মো. ইকবালসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উৎপাদন ক্ষমতার ভিত্তিতে প্রকৃত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। অনুমোদিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত হারে কাঁচামাল ব্যবহারের ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজেট বরাদ্দ অপেক্ষা অনিয়মিতভাবে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে অনেকগুলো খাতে। এতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া হয়নি। পলিপিলেট থেকে পলিব্যাগ উৎপাদনেও রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত ও কারখানা আইন অমান্য করে শ্রমিক কর্মচারীদের অধিকাল ভাতা এবং কর্মকর্তাদের খাদ্য ও যাতায়াত ভাতা প্রদান করা হয়েছে। সেট আপ বহির্ভূত লোকবল নিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং সেট আপ অনুযায়ী ২৪টি গাড়ির পরিবর্তে বাস্তবে ৩৬টি গাড়ি ব্যবহারজনিত বাহুল্য ব্যয় করা হয়েছে। কারখানায় ব্যবহƒত বিদ্যুৎ ও গ্যাস অপেক্ষা অতিরিক্ত বিল পরিশোধ দেখিয়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও অত্যধিক দূর্বল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানের নীট ক্ষতির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
কমিটি ঝঃধহফধৎফ টংধমব জধঃরড় অনুযায়ী উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে। বাজেট বরাদ্দ অপেক্ষা অতিরিক্ত খরচের সমর্থনে ঘটনাত্তোর অনুমোদন গ্রহণ এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে অধিকাল ভাতা প্রদানের বিষয়টি যৌক্তিকরণ করারও সুপারিশ করে কমিটি। এছাড়া উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ক্ষমতার সদ্ব্যবহার, বিভিন্ন খাতে ব্যয় হার হ্রাস এবং দৈনিকভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ যৌক্তিকরণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কর্মকর্তাদের খাদ্য ও যাতায়াত ভাতা প্রদান না করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে। এছাড়া বাংলাদেশ কেমিক্যাল কর্পোরেশনের কাযক্রম জনবান্ধব করতে বলা হয়েছে।
কমিটির সদস্য এ কে এম মাঈদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বেশিভাগ পুরানো রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। কমিটি বলেছে বতমান কাযক্রমের উপর রিপোর্ট দিতে হবে। কারখানায় ব্যবহƒত বিদ্যুৎ ও গ্যাস অপেক্ষা অতিরিক্ত বিল পরিশোধ দেখিয়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে তা কি ভাবে হলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
সংসদ সচিবালয় জানায়, বৈঠকে দেশের কৃষকদের সারের অব্যাহত চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে কৃষক বান্ধব পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে সার কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া বৈঠকে আর্থিক পরিস্থিতির আনুপাতিক বিশ্লেষণে কারখানার সামগ্রিক পারফরমেন্স নিম্নমূখী মর্মে উত্থাপিত অপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি কারখানা থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত গোপনীয় প্রতিবেদন যাচাই করে দ্রুততার সঙ্গে তা নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিলাস যাপনেই লাটে উঠেছে যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ