পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আদেশের ৬ বছরেও শুরু হয়নি জন্মস্থান সংরক্ষণ কাজ
রাজাপুর উপজেলা সংবাদদাতা : আজ ২৬ অক্টোবর, ১৮৭৩ সালের এই দিনে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া মিয়াবাড়ির মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। এ মহান নেতার জন্মগৃহ এবং তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি আজও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক এখানে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সাতুরিয়া গ্রামের শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জন্মভবনটি প্রতœসম্পদ হিসেবে ঘোষণার প্রায় ৬ বছর হলেও সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়নি। নামে মাত্র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও আঁতুড়ঘরটি ছাদ সংস্কার হলেও অযতœ আর অবহেলার পড়ে রয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রবক্তা ও বাংলার অবিসংবাদিত এ নেতার বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্নগুলো। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। তথ্য মতে, এ দিন মধ্যরাতে ‘বাংলার বাঘ’ জন্ম নেন সাতুরিয়ার নানাবাড়িতে। বাড়িটি ‘সাতুরিয়া মিয়াবাড়ি’ নামে পরিচিত। শেরে বাংলার শৈশব ও কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে এ গ্রামে। এখানকার একটি মক্তবে তিনি লেখাপড়া করেন। যে পুকুরে তিনি সাঁতার কাটতেন তা আজও বিদ্যমান। ১৯৪১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাতুরিয়া এমএম হাই স্কুল। এক সময় তিনি সাতুরিয়াকে রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করেন। এছাড়াও সাতুরিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছে তার অনেক স্মৃতি। মহান এ নেতার জন্ম নেয়া ভবনসহ মোঘল আমলে নির্মিত আরও কয়েকটি ভবন এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে অধিকাংশই জরাজীর্ণ। দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয়নি। ইমারতগুলো যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে অনেক স্মৃতিচিহ্ন হারিয়েও গেছে। এক সময়ে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের কর্ণধার, কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি একাধিকবার সাতুরিয়ায় এসেছিলেন। তার ছেলে মরহুম একে ফাইজুল হক ও বাংলাদেশের মন্ত্রী ছিলেন। অথচ শেরে বাংলার জন্ম ভিটা এবং সাতুরিয়ায় তার নিজের প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিও আজ জরাজীর্ণ। জন্ম ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তার মাতুল বংশধররা। স্কুলটিতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। বহুবার এখানে একটি যাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হলেও এ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। যে নেতার জন্য বাংলার কৃষকরা জমিদারদের শোষণ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল তার জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালনেও বিভিন্ন মহলে রয়েছে অনীহা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারের লক্ষ্যে ২০০৮-০৯ অর্থ-বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যটন সুবিধা গড়ে তোলার জন্য পর্যটন স্থান/স্পট চিহ্নিতকরণের কাজ করে। এ সময় শেরে বাংলার জন্মস্থানটিকে এর আওতায় নেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর শেরে বাংলার জন্মভবনকে ১৯৬৮ সালের প্রতœতত্ত্ব সংরক্ষণ আইন (১৯৭৬ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় ভবনটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রতœসম্পদ আইনের ১০ ধারা (১) উপ-ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার ১ নং সাতুরিয়া মৌজার তিনটি খতিয়ান ও দাগের মোট দশমিক ৬১ একর জমি সংরক্ষিত প্রতœসম্পদ বলে ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে এ ব্যাপারে ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ২০১০ সালের ১৮ মার্চের গেজেটে তা প্রকাশ করা হয়। এরপর ওই জমির খতিয়ান, দাগ নম্বর, জমির পরিমান ও মালিকানা স্বত্ব নিয়ে দু’জন ওয়ারিস লিখিতভাবে আপত্তি জানালে জটিলতা দেখা দেয়। এ নিয়ে যাচাই-বাছাই কাজে চলে যায় দীর্ঘ সময়। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের খুলনাস্থ আঞ্চলিক পরিচালক শিহাব উদ্দিন আকবর ওই সময় জানিয়েছিলেন, জরুরিভাবে এখন শুধুমাত্র শেরে বাংলার জন্মভবনটি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অল্প দিনের মধ্যেই প্রকৌশলী টিম এলাকা পরিদর্শন করবে। এরপর বাজেট বরাদ্দ মিললে ৪-৫ মাসের মধ্যেই মূল কাজ শুরু হবে। কিন্তু দীর্ঘ ৬ বছর অতিবাহিত হলেও শুধু জন্মস্থানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও আঁতুড়ঘরের ছাদ সংস্কার হয়েছে বলে জানা গেছে। শেরে বাংলার মতো নেতাকে সঠিকভাবে মর্যাদা না দেয়ায় অভিযোগে এলাকাবাসীর ক্ষোভের শেষ নেই। শেরে বাংলার নিকটাত্মীয় নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শেরে বাংলাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। বর্তমান সময়েও বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এর পিছনেও কোনো অদৃশ্য শক্তি থাকতে পারে। সাতুরিয়া এমএম মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক ফজলুল হক আকন জানান, কোনো সরকারই মহান নেতার স্মৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসেনি। শেরে বাংলার প্রতিষ্ঠিত এমএম হাইস্কুলে বর্তমানে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে ৬ শতাধিক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করছে। ফলাফলও ভালো। কিন্তু স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নে তেমন একটা নজর দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা শা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি প্রতœতত্ত্ব বিভাগ শেরে বাংলার জন্মস্থানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে। আশা করি দ্রুত তার জন্মস্থানটি সংরক্ষণ এবং একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।