ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো. তোফাজ্জল বিন আমীন
দেশের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠেছে অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য। হাসপাতালে সেবা নিতে যাওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা মালিক-চালকদের কাছে জিম্মি। রোগীদের জিম্মি করে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক ব্যবসা করে গেলেও এদের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ উচ্চারণ করেনি। কারণ এই অনৈতিক ব্যবসার টাকা অনেকের পকেটে যায়। সম্প্রতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে চারটি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ঘাতক অ্যাম্বুলেন্স।
আমরা সবাই আইনের সুশাসনের কথা বলি। কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য যে উপকরণগুলো একটি সমাজ বা রাষ্ট্রে জরুরি সে বিষয়গুলো নিয়ে কেউ ভাবেনি। সড়কের কথা না হয় বাদই দিলাম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় কেন জীবন দিতে হলো? এই প্রশ্নের উত্তর তো নিহতের স্বজনেরা চাইতে পারে। কিন্তু উত্তরটা দেবে কে? সরিষার ভেতরে যদি ভূত থাকে তাহলে সেই ভূত তাড়াবে কে? ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সেবার অব্যবস্থাপনা নিয়ে গত ১৭ জুলাই প্রথম আলোর শেষ পাতায় কর্মচারীদের অ্যাম্বুলেন্সের কাছে জিম্মি রোগী শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযোগ আছে, অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার সঙ্গে হাসপাতালের একশ্রেণীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কিছু ওয়ার্ডবয় জড়িত। কথিত দুর্ঘটনার সংবাদ জাতীয় দৈনিকগুলোতে মুদ্রিত হওয়ার পরও দৃশ্যমান কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ অ্যাম্বুলেন্স অকেজো, ব্যবহার অযোগ্য ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সেবার নামে বাণিজ্য করে যাচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িতরা বেশিরভাগেরই মালিক হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ওয়ার্ডবয় ও ওয়ার্ডমাস্টাররা। সেজন্যে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তা রোগীদের ভাগ্যে জোটে না। সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর রোগী আনা-নেয়ার জন্য যত অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন তার তুলনায় অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা অনেক কম, এটা সত্য, তবে অধিকাংশ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট থাকে বা নষ্ট করে রাখা হয়। একজন রোগীকে হাসপাতালে প্রবেশ করানোর আগের চিকিৎসাটুকু খুবই জরুরি। এটির অভাবে বছরে বহু লোকের মৃত্যু ঘটে। একটি অ্যাম্বুল্যান্সে ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন, কার্ডিয়াক মনিটর, ইমাজেন্সি ড্রাগসহ অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণ থাকা জরুরি হলেও কিছু অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত বেশিরভাগেরই এসবের কিছু নেই। অ্যাম্বুলেন্সে যেখানে একজন প্রশিক্ষিত চিকিৎসক থাকা জরুরি সেখানে বাটি চালান দিয়ে একজন নার্স ও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার ভাড়ার ক্ষেত্রেও গুণতে হয় অতিরিক্ত টাকা। মাত্র ৩০ কিলোমিটার অ্যাম্বুলেন্সে যেতে একজন রোগীর গুণতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। এমনকি রাজধানীর এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যেতে ভাড়া গুণতে হয় দুই হাজার টাকা। আর এই সুযোগটি গ্রহণ করে অসাধু অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। প্রতিটি হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠা এসব সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো অ্যাম্বুল্যান্সে রোগী আনা-নেওয়া করা যায় না। বাধ্য হয়েই এ সিন্ডিকেটের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়। বিশেষ করে হাসপাতালে কোনো রোগী মারা গেলে এই সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার সুযোগ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন থেকেই চলে আসছে।
দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য বন্ধ করতে হলে সবার আগে সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। তার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে। রোগী আনা নেওয়ার কাজে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সসেবা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। যাতে করে বাইরের কোনো সিন্ডিকেট যেন সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালে ঢুকতে না পারে। সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিশ্চিত করতে হবে। মানবতা ও সেবার প্রতীক অ্যাম্বুলেন্স যেন আর কোন মানুষের জীবন কেড়ে না নেয় সেই ব্যবস্থার উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। আমরা মনে করি, সরকার যদি ইচ্ছে করে তাহলে একটি মনিটরিং সেলের মাধ্যমে দেশের সকল অ্যাম্বুলেন্সকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় এনে দুর্ঘটনা রোধ করতে পারে। ব্যক্তিমালিকানায় অ্যাম্বুলেন্স চালানো বেআইনি এটা জেনেও অনেকে অবৈধভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। আর তা করার সুযোগ করে দিচ্ছে বিআরটির একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুধু কি তাই! অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অ্যাম্বুলেন্স আসলে অ্যাম্বুলেন্স নয়! মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানানো হয়েছে। বিআরটিএ এর তথ্যমতে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হিসাবে সারা দেশে নিবন্ধনকৃত অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা চার হাজার ৫২৭টি। এরমধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে দুই হাজার ৬৩৯টি। এরমধ্যে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত ছিল দুই হাজার ৭৯৩টি, বাকি এক হাজার ৭৩৪টির নিবন্ধন হয়েছে পরবর্তী সময়ে। এর মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৫ সালেই ৪৮০টি অ্যাম্বুলেন্স নিবন্ধন নেয়। ১৯৮৩ সালের মোটরযান বিধিতে অ্যাম্বুলেন্স নিবন্ধনের বিষয়ে আলাদা নিয়ম উল্লেখ নেই। যদিও নিবন্ধনের আওতায় দেশে ২০ ধরনের সড়ক পরিবহনের মধ্যে সবার প্রথমেই রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সের নাম। এই সমস্যার সমাধান করাও জরুরি। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, অদক্ষ চালক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানো হয় । অদক্ষ চালকের ছড়াছড়ি বাস, সিএনজি ও লেগুনাতে দেখা যায়। রাজধানীর ফার্মগেইট, মহাখালী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বনানী, বাড্ডা, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, নিলক্ষেত, ধানমন্ডির রুটে যাতায়াত করলে চোখে পড়বে অদক্ষ ও কমবয়সী চালকের ছড়াছড়ি। পুলিশের নাকের ডগায় অদক্ষ চালক এসব ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালালেও কোন দৃশ্যমান প্রতিকারের ব্যবস্থা নেই। রাজধানীজুড়ে এসব অবৈধ পরিবহনের রমরমা ব্যবসা চলছে। সংশ্লিষ্ট মহলের এ ব্যাপারে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। হাসপাতাল চত্বরে কোনো ঘটনা ঘটলে তার দায় যেমন কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না, তেমনিভাবে এসব অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সের রুট পারমিট থেকে শুরু করে লাইসেন্স যারা দিয়েছে তারাও এ দায় থেকে মুক্ত নয়! আমরা আশা করব। অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে নিশ্চিত করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।