পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কাগজের দাম বৃদ্ধিতে নৈরাজ্য চলছে। গতবছর যে অফসেট কাগজের দাম প্রতি রিম ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা এবার ২০০০ থেকে ২১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাগজের বাজারে এই যে নৈরাজ্য তা দেখার কেউ নেই। করোনা মহামারির কারণে প্রকাশনা শিল্প এমনিতেই ঘোর সঙ্কটে রয়েছে। করোনায় প্রকাশনা শিল্পের ক্ষতি হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় কাজগের মূল্যবৃদ্ধি প্রকাশনা শিল্পের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো অবস্থা। কাগজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে এ শিল্পের বিপদ আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। সংশ্লিষ্টরা কাগজের মূল্য বৃদ্ধিতে এ শিল্পের আরো ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
প্রতিবছর অমর একুশে গ্রন্থ মেলাকে সামনে রেখে নভেম্বর ডিসেম্বর থেকে প্রকাশকরা বই প্রকাশের কাজ শুরু করেন। এ ছাড়া এ সময়ে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্যালেন্ডার ছাপার কাজও চলে। সব মিলিয়ে বাজারের তখন কাগজের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে মতো কাগজের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো বইয়ের মূল্য বাড়াতে বাধ্য হয়। আর বইয়ের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক ক্রেতা বই কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। দিন দিন বই বিক্রির পরিমাণ কমে যাওয়ার এটি একটি বড় কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কাগজের দামসহ অন্যান্য মুদ্রণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির করণে বই ছাপার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে প্রকাশকদের বইয়ে মূল্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়াতে হচ্ছে। বইয়ের মূল্য বাড়ানোর ফলে বই বিক্রির পরিমাণও অনেক কমে যাবে। এ সব মিলিয়ে প্রকাশনা শিল্পের এবারও বাড়তি ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে প্রকাশকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশক সমিতির পরিচালক আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি ইনকিলাবকে বলেন, অমর একুশের বই মেলাকে সামনে রেখে প্রতিবছরই ব্যবসায়ীরা মিল মালিকদের যোগসাজশে কাগজের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এতে সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশকরা চরম বিপাকে পড়েন। কাগজ এবং অন্যান্য মুদ্রণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দামও বাড়াতে হচ্ছে। আর বইয়ের দাম বাড়লে বিক্রি কমে যায়। এতে প্রকাশকদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। করোনায় প্রকাশনা শিল্পের ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এবার কাগজসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম বাড়ায় আরো বাড়তি ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। সম্ভাব্য এ ক্ষতির হাত থেকে প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচাতে অফসেট কাগজের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া খুবই জরুরি। সরকার বিভিন্ন শিল্পে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে। প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচাতে আমরা অফসেট কাগজ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির দাবি জানাচ্ছি। শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা দেয়া হলে দেশি মিল মালিকরা প্রতিবার সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো আর দাম বাড়াতে পারবে না। কাগজের বাজারে দামের যে নৈরাজ্য তা বন্ধ হবে এবং প্রকাশনা শিল্পও বাঁচবে।
বর্তমানে বাজারে প্রায় সব ধরনের কাগজের দামই ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে সৃজনশীল বই প্রকাশের জন্য যে কাগজ প্রয়োজন তার দাম বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৮০ গ্রাম অফসেট কাগজের প্রতি রিমের বর্তমান মূল্য ২১০০ টাকা। গতবছর এ কাগজের দাম ছিল ১৭০০ টাকা। ১০০ গ্রাম অফসেট কাগজের প্রতি রিমের বর্তমান মূল্য ২৭০০ টাকা, গতবছর এর মূল্য ছিল ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা। ১২০ গ্রাম আর্টপেপার কাগজের বর্তমান মূল্য ৪০০০ টাকা, গতবছর এ কাগজের দাম ছিল ৩৬০০ টাকা। ডিমাই সিটিপি প্রতি পিস কাজগের মূল্য ১৩৫ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৭০ টাকা হয়েছে।
ফকিরাপুলের কাগজের দোকান হাকিম ট্রেডার্সের মালিক মনির উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, কাগজ তৈরির কাঁচামাল এবং কাগজ শুকানোর যে বাল্ব আছে সেগুলোর দাম আর্ন্তজাতিক বাজারে বেড়েছে বলে মিল মালিকরা কাগজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আগের চেয়ে প্রতি রিমে দেড় থেকে দুইশ’ টাকা বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই। ব্যবসায়ীদের করার কিছু নেই।
করোনা মহামারির কারণে বিপদে আছেন প্রকাশকরা। অন্যান্য ব্যবসার মতো চাইলে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে পারছেন না তারা। কারণ, লেখক-বাইন্ডার-প্রেসের সবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক। এ কারণে চাইলেও ব্যবসা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে প্রতিভা প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মইন মোরসালিন ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পের অবস্থা খুবই খারাপ। এমনিতেই মানুষ বই কেনেন কম। করোনা শুরুর পর থেকে বই বিক্রি প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। গত বই মেলায় বই বিক্রি একবারেই কম হয়েছে। অনলাইনেও বই বিক্রি কমে গেছে। মেলার পর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সরাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বই বিক্রি হয়। করোনা শুরুর পর থেকে তাও কমে গেছে। এ সময়টায় প্রকাশকদের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। যার ফলে অনেক প্রকাশকই এখন খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সহযোগিতা বা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। প্রকাশনা শিল্প এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সেরকম কোনো প্রণোদনা পায়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশক সমিতির পরিচালক ওসমান গণি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের সব রকম শিল্পকে বাঁচাতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার কাছে যারা সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি তাদের সবাইকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু আমরা প্রকাশনা শিল্পের সাথে যারা জড়িত, যারা এর নেতৃত্বে আছি তারা আমাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।