Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের ৫০টি গ্রামে মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ

সউদী থেকে ফোনে তিন তালাক

প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক
ভারতের উত্তরপ্রদেশে এক মুসলিম মহিলাকে তার সউদী প্রবাসী স্বামী টেলিফোনে তিন তালাক দেয়ার পর আশেপাশের অন্তত পঞ্চাশটি গ্রামের মোড়লরা একজোট হয়ে ওই মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছেন। মুজাফফরনগর জেলার নাইয়ামু জেলার মেয়ে আসমা খাতুনের কোনও দোষ নেই এবং তার ওপর জোর করে এই বিবাহ-বিচ্ছেদ চাপিয়ে দেয়াটা অন্যায়, এই যুক্তিতেই ওই এলাকার মুসলিম গ্রামবাসীরা তাকে এভাবে তালাক দেয়ার বিরোধিতা করছেন। এই বিরল পদক্ষেপ নেয়া হল এমন এক সময়ে যখন তিন তালাক প্রথা বজায় রাখা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছে- আর দেশের আইন কমিশনও এই প্রশ্নে জনমত যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ন’টা নাগাদ নাইয়ামু গ্রামের আসমা খাতুন যখন সবে তার এগারো মাসের বাচ্চা মেয়ে ইকরাকে খাইয়ে উঠেছে, তখনই তার মোবাইলে সউদী আরব থেকে স্বামী শাহনওয়াজ হোসেনের ফোন আসে।
সউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে ড্রাইভারের কাজ করে শাহনওয়াজ। স্ত্রীর সঙ্গে গত কিছুদিন ধরেই মনোমালিন্য চলছিল- কিন্তু টেলিফোনে সেদিন স্বামীর মুখ থেকে আসমা যা শুনল তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না সে।
পরে সংবাদ মাধ্যমকে আসমা বলছিল, ‘আমাদের বছর-দুয়েক হল বিয়ে হয়েছে। প্রথম বছর মোটামুটি সব ঠিকই ছিল- কিন্তু তারপর আমার মেয়ে হওয়ার পরই গ-গোলের শুরু। ওরা ছেলে চেয়েছিল, কিন্তু আমার মেয়ে হওয়ার পরই মারধর শুরু হল- হাতে, পায়ে, কোমরে মারতে মারতে আমায় ঘর থেকে বের করে দিত’।
‘এত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম যে, ভাইয়েরা আমায় চিকিৎসার জন্য বাপের বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু আমার কপালে মেয়ে লেখা থাকলে আমি কী করব’ বলেন তিনি।
আসমা খাতুন বলতে থাকেন, ‘সেদিন জুম্মাবারে যখন ফোন এল, হ্যালো করে ওর গলা শুনতেই আমি সালাম করলাম। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ও গালিগালাজ শুরু করল, বলল এবারে নিজের ফয়সালা করে নে। দু’বার তালাক দিল, তৃতীয়বারে আমাকে মুক্ত করে দিল’।
স্বামী পরিত্যক্ত এমন বহু নারী এরপর হাল ছেড়ে দেন, কিন্তু আসমার ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনকভাবে তা হয়নি।
নাইয়ামুর গ্রাম-প্রধান মহম্মদ লিয়াকত ত্যাগী তার পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং আশেপাশের আরও প্রায় গোটা পঞ্চাশেক মুসলিম-প্রধান গ্রামের মোড়লদের ডেকে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাহনওয়াজ হুসেন এভাবে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন না।
এ বিয়ে যদি না-ও টেঁকে, শাহনওয়াজের পরিবার যাতে আসমাকে মোটা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয় সে জন্যও যৌথভাবে আইনি লড়াই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই গ্রাম-সভা।
সামাজিকভাবে বেশ পিছিয়ে থাকা মুজফফরনগরে এই ঘটনাটা এমন সময়ে ঘটল যখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও তিন তালাকের প্রথার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিতে শুরু করেছে।
ভারতের সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু গতকালই হায়দ্রাবাদে বলেন, দেশে লিঙ্গ-বৈষম্য ও অবিচার দূর করতে তিন তালাক প্রথা বিলোপ করার সময় এসেছে।
‘সংবিধানের ১৪ ও ১৫ নম্বর ধারা নাগরিকদের এই সমানাধিকার দিয়েছে, কাজেই মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে এই অন্যায় চলতে দেয়া যায় না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে ভারতে সবাই সমান, আর সেই অভিন্ন ভারতের পথেই আমাদের এগোনো উচিত,’ বলেন তিনি।
মি. নাইডুর কথায় যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের আভাস আছে, দেশের আইন কমিশন এর মধ্যেই সে উদ্যোগ শুরু করেছে এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা মুসলিম সংগঠনগুলোর বাধার মুখে পড়েছে।
অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি রহমানী বলেছেন, দেশের নাগরিকরা সংবিধান নামক যে চুক্তিপত্রের ভিত্তিতে ভারতে বাস করছেন, তার ২৫ নম্বর ধারার পরিপন্থী এই পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘ধর্মকে উপেক্ষা করে কোনও একটি বিশেষ ধরনের ভাবনাকে কার্যকর করার চেষ্টাটাই তো বেআইনি’।
মুসলিম নেতারা বিয়ে, তালাক, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মতো বিষয়গুলো তাদের ধর্মের পার্সোনাল আইনের অন্তর্গত, এই যুক্তি দিয়ে সেখানে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছেন।
কিন্তু তিন তালাক- বা বিশেষ করে টেলিফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে ঝটিকা তালাকের বিরুদ্ধে মুসলিম সমাজের ভেতরেও যে প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছে- মুজফফরনগরের আসমা খাতুনই সম্ভবত তার প্রমাণ!
তিন তালাক নিয়ে রাজনীতি করবেন না, আর্জি মোদীর
এদিকে গতকাল উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখন্ডের মাহোবা জেলায় আয়োজিত একটি র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার লক্ষ্য এখন ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন। সেই র‌্যালিতেই তিনি মুসলিম মহিলাদের পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, তিন তালাক দেয়ার প্রথা নিয়ে কোনও রাজনৈতিক খেলার মধ্যে যেন কেউ না যান।
তিন তালাক-এর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে এদিন মোদী বলেন, ‘কেউ যদি ফোন করে তিনবার তালাক বলে দিয়ে সব দায়িত্ব ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে চায়, তাহলে কি আমরা তা হতে দেব? এভাবে আমাদের মুসলিম মেয়েদের জীবন নষ্ট হয়ে যেতে দেয়া উচিত? ’
তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল শুধুমাত্র ভোট ব্যাঙ্ক বাঁচানোর জন্যে মুসলিম মেয়েদের তাদের সহজাত অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। মোদী জানান, মেয়েদের স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে রাজনীতিকে মেলানো অনৈতিক। সূত্র : বিবিসি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।



 

Show all comments
  • Asad ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ৭:৫০ এএম says : 0
    We are far behind to respect our women. As per science, Man is reasonably responsible for sex dominant not Woman. Please respect humanity instead of harassment of innocent, unfortunately these are happen in our subcontinent
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতের ৫০টি গ্রামে মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ