পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জেব্রা ক্রসিং। রাস্তা পারাপারে পথচারীদের জন্য নির্ধারিত স্থান। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব সড়কে জেব্রা ক্রসিং থাকলেও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজে আসছে না তেমন। পথচারী ও চালকদের কেউই নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। ক্রসিংগুলোতে নেই সিগন্যাল বাতি, সেই সাথে অস্পষ্ট রং। যখন-তখন হাত দেখিয়ে দৌড়ে সড়ক পার হচ্ছেন পথচারীরা।
জেব্রা ক্রসিংয়ের সামনে আসলেও চালকরা গতিরোধ করছে না। বরং পথচারী সড়ক পার হচ্ছে দেখে আরও দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে দেখা যায় চালকদের। রাজধানীতে অফিস এবং স্কুল শুরু ও শেষের সময় সড়কে গিজ গিজ করে পথচারী। এক সঙ্গে অনেক মানুষ যখন ফুটপাত, ফুটওভারব্রিজ রেখে সড়ক দিয়ে এলোমেলোভাবে হাঁটে, তখন সড়ক নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। যানবাহনের ফাঁকে ফাঁকে ঝুঁকি নিয়েই সড়ক পার হতে দেখা যায় অনেককে।
পথচারীদের পারাপারের সময় কিংবা হাত দিয়ে ইশারা দেয়া হলেও গাড়ির গতি কমে না। অথচ দেশের বাহিরে দেখা যায় বিপরীত চিত্র। ক্রসিংয়ের কাছে পথচারী এসে দাঁড়ালেই চলমান গাড়ি থেমে যায়। চালক দূর থেকেই লক্ষ্য রাখে পথচারীর গতিবিধি। রাস্তা পার হওয়ার সুযোগ দিয়ে গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষায় থাকেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবহার নেই বললেই চলে। অনেক জায়গায় ক্রসিংয়ের সাদা দাগের ওপরই যানবাহন থেমে থাকছে। রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে দুই জন মহিলাসহ কয়েকজন পথচারী রাস্তা পার হতে দেখা যায়, এইসময় পথচারীরা হাত দেখিয়ে সড়ক পার হয়ে যান। তবে সড়কের মাঝ বরাবর এসে আটকে যায় তাদের পেছনে থাকা ওই দুই মহিলা পথচারী। তবে সড়কের মাঝ বরাবর এসে ভয় পেয়ে এদিক সেদিক করতে থাকা মহিলাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন আরও দুজন পথচারী।
পথচারী ফারুক বলেন, জেব্রা ক্রসিংগুলোতেও একইভাবে হাত দেখিয়ে রাস্তা পার হতে হয়। নিজের ইচ্ছায় গাড়ি থামে না। একই স্থানে নিজের ছোট্ট দুই সন্তানের হাত ধরে অনেকটা দৌড়েই সড়ক পার হতে দেখা যায় ফারজানা নামের এক গৃহিণীকে। ঝুঁকি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ক্ষোভের সঙ্গে উত্তর দেন, রাস্তায় কিছু আঁকিবুঁকি করে দিলেই শৃঙ্খলা চলে আসে না। ট্রাফিক পুলিশ নেই, সিগন্যাল নেই। একটা গাড়িও থামে না। রিকশাগুলো পারলে গায়ে উঠে আসে। ফুটপাতে হকারের কারণে হাঁটতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়েই বাচ্চাগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলে রাস্তা পার হতে হয়েছে।
রাজধানীর পল্টর মোড়ে কথা হয় প্রাইভেট কারের চালক কামরুল হোসেনের সঙ্গে। জেব্রা ক্রসিংয়ে না থামার কারণ জানতে চাইলে তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কেউ আমাগো থামতেও কয় না, যাইতেও কয় না। মন চাইলে থামি, মন না চাইলে থামি না। পাবলিক রাস্তা পার হইতে দৌড়ায়, আমরাও দ্রুত যাইতে দৌড়াই।
ট্রাফিক পুলিশ ও সিগন্যাল বাতি না থাকায় চালকদের থামানো যাচ্ছে না বলে জানান পল্টন মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ ইমরান হোসেন। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিয়ম থাকলে সেটা মানা বা নামানার প্রশ্ন আসে। এখানে তো কোনো নিয়ম নেই। পর্যাপ্ত ট্রাফিক কনস্টেবল, সিগন্যাল বাতি এবং জেব্রা ক্রসিংগুলোকে দৃশ্যমান করে পথচারীদের অভ্যস্ত করা গেলে সুফল পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে এক পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, জেব্রা ক্রসিং কার্যকরের একটি অন্যতম শর্ত হলো সিগন্যাল সিস্টেম ঠিক রাখা। দুর্ভাগ্য হল, এখনও ঢাকায় সিগন্যাল সিস্টেম ঠিক করা সম্ভব হয়নি। হাতের ইশারায় পথ চলতে হয়। এতে পথচারী ও চালকের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এর ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পথচারী বা চালকদের দায়ী করা হয়। এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। সত্তর-আশির দশকে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হতো। তখন গাড়িকে অগ্রাধিকার দিয়ে পথচারীদের আলাদা করা হতো। এখন সভ্যতা এগিয়েছে। পরে দেখা গেছে, মূল সড়কে জেব্রা ক্রসিং তৈরি করে সিগন্যালের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে পারপারের ব্যবস্থাকে মানুষ বেশি গ্রহণ করছে। এখন সব উন্নত দেশেই জেব্রা ক্রসিং পথচারী পারাপারের সবচেয়ে মানসম্মত পদ্ধতি।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, পথচারী কতক্ষণ ধরে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হতে পারবেন সেই সময় নির্ধারণ করতে হবে। এর পাশাপাশি কতক্ষণ পরপর মানুষের পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং এ গাড়ি দাঁড়াবে সেটাও সিগন্যালের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দিতে হবে। গাড়ি সীমারেখা লঙ্ঘন করলে কঠোর জরিমানার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, জেব্রা ক্রসিং না মানার কোনো সুযোগ নেই। তবে পথচারীদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা অনেক বেশি। গাড়ি আসছে, আর আপনি যদি দৌড় দেন কিংবা জেব্রা ক্রসিং ছাড়া পার হন, তাহলে তো দুর্ঘটনা ঘটবেই। এ ক্ষেত্রে অনেকেই বলেন, আমরা কী ব্যবস্থা নিই? ট্রাফিক আইন অনুযায়ী আমরা তো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এত ছোটখাটো সচেতনতামূলক ব্যাপারেও যদি পথচারীরা সচেতন না হন তাহলে জেল-জরিমানা দিয়ে কতক্ষণ ঠিক রাখা সম্ভব। তাই আমার পরামর্শ হল, অন্তত নিজেকে ভালোবেসে হলেও আমাদের সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলা উচিত।
ক্যাপশান : পথচারী ও চালকদের কেউই জেব্রা ক্রসিং পারাপারে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকা ছবি -এস এ মাসুম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।