Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অনন্য উচ্চতায় শেখ হাসিনা

প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : নিজের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সাহসী কর্মকা- দিয়ে আরো আগেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করে নিজের নেতৃত্বকে নিয়ে গেলেন এক অন্যন্য উচ্চতায়। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দলীয় গণতান্ত্রিকরীতি ও চর্চার নজির দেখিয়ে সম্মেলনে যোগ দেয়া কাউন্সিলরদের সরাসরি অংশগ্রহণে দলটিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। এতে দলীয় সভানেত্রীর প্রতি দলীয় নেতাদের যে প্রশ্নাতীত আনুগত্যের প্রকাশ পেয়েছে তা নজিরবিহীন বলে অনেকে উল্লেখ করেছেন। কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮ম বারের মতো সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এক সময়ের তুখোর ছাত্র নেতা ওবায়দুল কাদের হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। সফল সম্মেলনের পর এবার আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের মিশন শুরু।
একটি রাজনৈতিক দলের সম্মেলনের সব নিয়ম-রীতি মেনে নতুন কমিটি নির্বাচিত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবারের সম্মেলনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা বারবার দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মী, কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানান। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার নিজের ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেন। কিন্তু ইতোমধ্যেই বলিষ্ঠ নেতৃত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শেখ হাসিনাকে কোনোভাবেই ছাড়তে রাজি হয়নি সারাদেশ থেকে সম্মেলনে আগত তৃণমূল নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনার বিকল্প কোনো নেতাকে ভাবতেই রাজি হয়নি তারা। দল অন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের ভালবাসার পুরস্কার হিসেবেই পুণরায় দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে সামনের নির্বাচনকে টার্গেট করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন মাঠের নেতা হিসেবে পরিচিত ওবায়দুল কাদেরকে। আর নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাদেরের নাম কাউন্সিলে উত্থাপনের জন্যও তিনি বেছে নেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক দলে সজ্জন হিসেবে পরিচিত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে।
নতুন সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ সভাপতিম-লীর সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদসহ অন্যান্য পদের নেতাদের নামও কাউন্সিলের মাধ্যমেই ঘোষণা করেছেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন বড় রাজনৈতিক দলের বিশাল বাজেটের এ সম্মেলনে কোনো নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, মতপার্থক্য বা কোন্দলও প্রকাশ পায়নি। এসবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বলে দাবি আওয়ামী লীগের নেতাদের।
আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে বলেন, শেখ হাসিনার দলে কোনো অনৈক্য, বিভেদ কখনও প্রশ্রয় পাবে না। তিনি বলেন, বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই তিনি দলকে এগিয়ে নিতে চান। এটাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির মোটিভ। আমাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতান্তর হতে পারে, তবে মনান্তর হবে না।
আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, আগে ক্ষেত্রবিশেষ দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শেখ হাসিনাকেও অনেক ক্ষেত্রে বিব্রত হতে হয়েছে। এক সময়ের বহুধা বিভক্ত আওয়ামী লীগের হাল শক্তহাতে ধরে দলকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন শেখ হাসিনাই। বিগত ৩৫ বছরের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কমপক্ষে দুটি কার্যনির্বাহী সংসদেও বৈঠকে বিব্রত হয়ে দলের নেতাদের শেখ হাসিনা বলেছেন, ঠিক আছে আপনারা সিদ্ধান্ত নেন।
পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। তার কিছুকাল পর ১৯৮৩ সালেই দলে ফাটল ধরে। নেতৃত্বের বিরোধে একটি অংশ আওয়ামী লীগ থেকে চলেও যায়। এর কিছুকাল পর ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়েও শেখ হাসিনাকে বিব্রত হতে হয়। ১৯৯২ সালে ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ চলে গিয়ে গণফোরাম গঠন করেন। ১৯৯৯ সালে দল ত্যাগ করেন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। তিনি নতুন দলও গড়েন। এর কিছুকাল পর আওয়ামী লীগের আরেক নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টুও আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে যান। সর্বশেষ শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন বহুল আলোচিত ১/১১ সময়ে।
আওয়ামী লীগের সূত্র আরও বলে, মূলত বিচক্ষণতা ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে দলীয় রাজনীতিকে এক সুতোয় এনেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আলোচিত ১/১১ পরে ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের ১৮তম সম্মেলনে দলে বড় রদবদল হয়। এরপর থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আর বিব্রত হতে হয়নি। পড়তে হয়নি কোনো প্রতিবন্ধকতাও। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রত্যেকেই পুরোপুরি আস্থা ও আনুগত্য নিয়ে দলকে শক্তিশালী করতে এবং দলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করেছেন। দলের নেতাদের মূল্যায়ন, এবারের সম্মেলনে এটা আরও মজবুত হয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ থেকে শেখ হাসিনার অবসরে যাওয়ার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার ছিল। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও আওয়ামী লীগের শুভাকাক্সক্ষী অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। এটাই প্রমাণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বর্তমান সময়ে কতটা পরিণত ও সুদৃঢ় বলিষ্ঠ। শুধু দলীয় সভাপতির পদে নয়; গোটা আওয়ামী লীগ ও সরকারকে নিজের মতো করে সাজানোতেও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের পূর্ণ আস্থা প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নানামুখি কর্মকান্ডে ইতোমধ্যেই নিজের বলিষ্ঠ ও অপ্রতিদ্বন্দ্বি নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারী জাগরণে এ ভূ-ভাগে আগেও অনেক মহীয়সী নারী কাজ করেছেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীর ক্ষমতায়নে ইতিহাস সৃষ্টি করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের নারী সমাজের বঞ্চনা, নির্যাতন, নিগ্রহের ইতিহাসকে বদলে দিয়ে সম্ভাবনার নতুন ইতিহাস গড়ায় ইতোমধ্যেই তিনি জাতিসংঘ থেকেও নারী ক্ষমতায়নের স্বীকৃতি পেয়েছেন। অসামান্য অবদানের জন্য ‘প্ল্যানেট ফিফটি চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে ‘ইউএন উইমেন এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। জাতিসংঘের এ পুরস্কারের আগেও বিশ্বব্যাপী নারীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
দলের নেতারা বলছেন, দলীয় রাজনীতিতে যদি আরও গুণগত পরিবর্তন হয় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ে তাতে সামনে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে আরও লাভবান হবে। দলের রাজনীতিতে একটি চৌকষ টিম থাকলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাইরে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতি এবং চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারবেন শেখ হাসিনা। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন। আর এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যারা থাকবেন তারাও দেশ-বিদেশি বাড়তি মর্যাদা ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের দাবি, নিকট অতীতে কংগ্রেসের পাশাপাশি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্টি টু পার্টি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই।
দলীয় নেতাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধুমাত্র তার দলেরই একচ্ছত্র নেতা নন, তিনি পুরো বাংলাদেশেরও অপ্রতিদ্বন্দ্বি নেতা। মূলত তার নেতৃত্ব ও দৃঢ় ইমেজের কারণেই সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতির বাজারে চীনের মতো পরাশক্তি বাংলাদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট স্বয়ং বাংলাদেশ সফর করে ৩৯ বিলিয়ন ডলার সহযোগীতা চুক্তি করেছেন। এছাড়াও, পদ্মাসেতুতে ‘কাল্পনিক’ দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বিশ্বব্যাংকও আবার বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও তার নেতৃত্বে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন। বাংলাদেশকে নতুন করে বিপুল অংকের বৈদেশিক সাহায্যরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি জাতিসংঘ অধিবেশন থেকে প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার প্রাক্কালে তার (প্রধানমন্ত্রী) সংবর্ধনাকে ঘিরে দলের কয়েকটি প্রস্তুতি সভায় আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, শেখ হাসিনা এখন আর শুধু আওয়ামী লীগের একার নেতা নন। তিনি জাতীয় নেতার আসনে অবস্থান করছেন। তিনি পুরো বাংলাদেশের নেতা। বাংলাদেশকে তিনি অভ্যন্তরীণভাবে যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাতে আন্তর্জাতিক মহল, বিভিন্ন সংস্থা এবং বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন। স্বীকৃতিস্বরূপ নানা পুরস্কারও প্রদান করছেন। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বেশ উজ্জ্বল, একটি উদারবাদী দেশ হিসেবে পৃথিবীতে বাংলাদেশের পরিচিতি বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে বিশ্ব নেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় বেশকিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিচ্ছেন। এসব বিবেচনায় তিনি এখন বিশ্ব নেতাদের তালিকায়ও উঠে এসেছেন। ভালোবাসা দেয়া ছাড়া তাকে আমাদের আর দেয়ার কিছু নেই।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন সবাই নিজেদেও দল ও শেখ হাসিনার কর্মী মনে করেন। তাদের নেতা একজনই। তিনি শেখ হাসিনা। সম্প্রতি বিভিন্ন সভায় এবং দলীয় ফোরামেও মাঠে যারা আওয়ামী লীগের হয়ে হরহামেশা কথা বলে থাকেন তারাও বলছেন, আওয়ামী লীগে নেতা একজনই। আমরা সবাই শেখ হাসিনার কর্মী। শেখ হাসিনার নামেই সারাবিশ্ব বাংলাদেশকে চেনে। মেধা ও বিচক্ষণতায় তিনি এখন বিশ্বের অনন্য রাজনৈতিক নেত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনন্য উচ্চতায় শেখ হাসিনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ