Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনাঞ্চলে কৃষকের স্বপ্ন এখন বোরো নিয়ে

চারা উৎপাদনে সফল শতভাগ : লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হেক্টর জমি

প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুুক্তি : ধান ফোলার পূর্ব মুহূর্তে খুলনাঞ্চলে পোকার আক্রমণে দিশেহারা ছিল কৃষক। অবশেষে সকল শংকা কাটিয়ে ওঠে। তাই আমনের বাম্পার ফলণের পর কৃষকের স্বপ্ন এখন ইরি-বোরো চাষের দিকে। চিংড়ি চাষ ফেলে অনেকেই এবার ফের ঝুঁকছে বোরো চাষে। বৃহত্তর খুলনায় এবার শীতের তীব্রতা এবং শৈত্যপ্রবাহের পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় কম। তাছাড়া এ অঞ্চলে তীব্র শীতের আগমনও ঘটে দেরিতে। তাছাড়া কুয়াশার আধিক্যতা কম। যে কারণে বোরো ধানের চারা উৎপাদন ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এবার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তার চেয়ে শতকরা ১০/১২ ভাগ চারা বেশি উৎপাদন হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চারা উৎপাদনে কৃষকের মুখে এখন নতুন স্বপ্নের এবং আনন্দের হাসি। যে কারণে খুলনা মেট্রোসহ জেলার ৯ উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। শতভাগ অর্জিত হবে বলে আশা করছেন কৃষকসহ কৃষি কর্মকর্তারা।
সূত্রমতে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চল মূলত চিংড়ি চাষপ্রবণ এলাকা। উপকূলীয় এই এলাকায় ব্যাপক হারে গত ২ যুগে চিংড়ি চাষ হয়। চিংড়ি চাষের কারণে এ অঞ্চলে গত দেড় যুগে একের পর এক ফিস প্রোসেসিং কালচার, মাছ কোম্পানী, ল্যান্ডিং সেন্টার গড়ে ওঠে। এ অঞ্চল থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার চিংড়ি মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু গত অর্ধযুগে চিংড়ি চাষে প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আইলা ও সিডরসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চিংড়ি চাষে ধস নামে। শুরু হয় চিংড়ি ঘেরে চিংড়ি চাষের সাথে সমন্বিত ধান চাষ। ছোট ছোট চিংড়ি ঘেরে গত ৬/৭ বছর বোরো চাষে ব্যাপক সফলতা আসে। যে কারণে গত অর্ধযুগে চিংড়ি চাষীরা আবার ঝুঁকে পড়েছে এই ইরি-বোরো চাষে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলায় বোরো চাষে কৃষকের অর্জন অত্যন্ত ভালো। ঐ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের ৯৫ শতাংশ জমিতে বোরো চাষ করে থাকে। তাদের দেখাদেখি গত একযুগে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের কৃষকরা চিংড়ি চাষের পাশাপাশি বোরো চাষে উদ্বুদ্ধ হয়। এ বছর চাষীদের আগ্রহ গত বছরের তুলনায় বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। চলতি মৌসুমে খুলনা জেলায় বীজতলায় চারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৮০৮ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৩০৮৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শতকরা ১০ ভাগ চারা বেশি উৎপাদন হয়েছে। অন্যদিকে, চারার উৎপাদন ভালো এবং সারের সংকট না থাকায় মহানগরীসহ খুলনার ৯ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৪৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে মহানগরীতে ১৪.৫০ হেক্টর, রূপসায় ৫৬.৫০ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ৩৫.২৭ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ৪০০০ হেক্টর, ফুলতলায় ৪৬০০ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ২০,০০০ হেক্টর, তেরখাদায় ৬.২০৯ হেক্টর, দাকোপে ১০০ হেক্টর, পাইকগাছায় ১৯১৪ হেক্টর এবং কয়রায় ১২০০ হেক্টর জমিতে। ২০১৩-১৪ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার ৪৮২ হেক্টর। গতবারের চেয়ে এবার লক্ষ্যমাত্রা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। শতভাগ অর্জিত হবে বলে আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
খুলনা জেলাধীন পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি গ্রামের কৃষক কবির হোসেন জানান, গত বছর প্রচ- কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। পুনরায় বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করে অথবা চারা কিনে আবাদ করতে হয়েছে। এবার চারার উৎপাদন ভালো। বেশি জমিতে বোরো আবাদ করার ইচ্ছা আছে।
উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের একজন কৃষক লিয়াকত সরদার জানান, তিনি গতবার ২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। এবার শীত ও কুয়াশা অগ্রিম না আসায় চারা উৎপাদন ভালো হওয়ায় তিনি ৩ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন। বর্তমান সারের অভাব নেই। ফলে ভালো ফলনের আশাও করছেন তিনি।
খুলনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিপিএস শেখ মোঃ শহিদুজ্জামান জানান, এ বছর বীজ তলায় চারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যা নির্ধারণ করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি অর্জিত হয়েছে। চাষের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। বীজ, সার সঠিকভাবে যেহেতু কৃষকেরা পাচ্ছে সেহেতু শতভাগ অর্জিত হবে বলে আশা করছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনাঞ্চলে কৃষকের স্বপ্ন এখন বোরো নিয়ে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ