Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশের সাথে চীনের ব্যবসা ৯০ শতাংশ বাণিজ্য ঘাটতি

প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক অনেক ভালো থাকলেও প্রতিবছর ঘাটতি বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কটা অনেকটা চীন থেকে আমদানিমুখী। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করা হয় এর ১২ গুণ বেশি পণ্য আমদানি করা হয় প্রতিবছর চীন থেকে। সে হিসাবে চীনের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৯২ শতাংশ। তবে এই ঘাটতি ভালো মানের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে পূরণ সম্ভব বলে মনে করেন বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৯৬৫ কোটি ডলারের পণ্য। এর বিপরীতে চীনে রপ্তানি করা হয় ৮১ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ গত অর্থবছরে দুই দেশের ৮৮৪ কোটি ডলারে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। গত ২৬ বছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৬ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার। এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে চীনের বাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। আমদানির পাশাপাশি রফতানি বহুমুখী করার কথা বলেছেন তারা।
বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সাধারণ সম্পাদক মো: শাহজাহান মৃধা বীনু বলেন, আমাদের দেশে জনসংখ্যা কম, চীনে বেশি এ ক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি করার সুযোগ বেশি। কিন্তু আমরা ভালো মানের পণ্যের অভাবে পর্যাপ্ত রপ্তানি করতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, আমরা চামড়া,পাটসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস রপ্তানি করি। এগুলো দিয়েই চীন সুন্দর জিনিস তৈরী করে আমাদের কাছে রপ্তানি করে। আমরা একটু চেষ্টা করে ওই জিনিসগুলো তৈরী করে রপ্তানি করতে পারলে আমাদের আয় অনেক বাড়বে। তাহলে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। চীনে রপ্তানি ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আছে, এগুলোর কারণে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। তবে এগুলোর বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করে।
সম্প্রতি চীনে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। এর পাশাপাশি পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে চীনে মাত্র সাড়ে ছয় কোটি ডলারের বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮১ কোটি ডলার। অর্থাৎ চীনের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা বাড়ছে।
তবে এ ঘাটতি অনেকটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। চীন ক্রমশ তৈরি পোশাক উৎপাদন থেকে সরে আসছে। ফলে সেখানে অভ্যন্তরীণ বাজারে একটি বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ এই বাজার ধরতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়ছে চীনে। এর মূল কারণ বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা চীনে এখন বিক্রয় কেন্দ্র খুলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পশ্চিমা যেসব নামি দামি ব্র্যান্ডের পোশাক রপ্তানি করেন সেগুলোর বিক্রয় কেন্দ্র চীনে খোলার কারণে মূলত দেশটিতে রপ্তানি বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী দিনে চীনে বাংলাদেশের পোশাক আরো বাড়বে। বিশ্বে নিট ও তৈরি পোশাকের বাজার এখন ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে শুধু চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারেই প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে যেখানে ৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। একই সঙ্গে নিট পোশাকের রপ্তানি ৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারে।
বর্তমানে চীনে যে ৪ হাজার ৪৮৮টি পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে তার আওতায় বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্য রয়েছে। চীন আগামীতে ৭ হাজার ৮০০ পণ্যে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। কিছুদিন আগে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন রফতানি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশের জন্য। যাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমে। চীনের বাজারে প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে নিট পোশাক ও ওভেন পোশাক। এর পাশাপাশি রয়েছে বস্ত্রসামগ্রী, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক, পাট ও পাটজাত পণ্য।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধার প্রায় পুরোটাই ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবে রফতানির বাজার নিতে পারবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ জানান, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির বড় কারণ আমাদের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় চীনে পাঠানোর মতো পণ্য কম। তবে ভালো পণ্য হলে এটা অনেকটা কমবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশের সাথে চীনের ব্যবসা ৯০ শতাংশ বাণিজ্য ঘাটতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ