পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল এবং নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। ১৯৪৯ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে জন্ম নেয়া দলটি ৬৭ বছরে অনেক চড়াই-উতরাই পার করেছে। শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দলটির বিকাশ ঘটেছে।
দলটির নেতৃত্বে ’৭১-এ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা এসেছে। ঐতিহ্যবাহী দলটির বর্ণাঢ্য-জৌলুসপূর্ণ-রঙিন-মেগা কাউন্সিল নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা। ৩০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে কোনো রাজনৈতিক দলের ঢাকায় এতো জৌলুসপূর্ণ কাউন্সিল দেখিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফেসবুক, টুইটার ব্লগ, পত্রিকা-অনলাইনে পাঠক মতামত থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, হাট-বাজার, বাস-ট্রেন, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা-মক্তব, গ্রাম-গঞ্জ সর্বত্রই এই আলোচনায় এই কাউন্সিল আর নতুন নেতা ওবায়দুল কাদের। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া, বেতার সবখানের খবর-কথাবার্তার প্রধান বিষয়বস্তু আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। বিদেশী মিডিয়ায়ও গুরুত্বসহকারে খবরটি প্রচার হচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক এবং বাস্তবতা। ঐতিহ্যবাহী পুরনো দলের মধ্যে মুসলিম লীগের পরই আওয়ামী লীগের জন্ম। মুসলিগ লীগ এখন ‘বিরল’ প্রজাতি। আওয়ামী লীগ দেশের প্রতিটি গ্রামে সুসংগঠিত। দলটি নিয়ে পত্র-পত্রিকার লেখালেখি ও টিভির টকশোতে যে আলোচনা হচ্ছে তা খুবই তৎপর্যপূর্ণ। কিছু ব্যক্তি দলটির সাফল্য নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিলেও অধিকাংশই টিভি আলোচক, প্রবন্ধকার, নিবন্ধকারের তোষামোদী এবং চাটুকারিতা এমন পর্যায়ে গেছে যে বহুল প্রচলিত ‘এতো কইয়েন না; ঘোড়ায় হাসবো’ খনার প্রবচনের নামান্তর। মোসাহেবদের অবস্থা বুঝতে পেরে ঝানু পলিটিশিয়ান দূরদৃষ্টি সম্পন্ন গণমানুষের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সম্মেলনে তোয়াজকারীদের উদ্দেশ করে বলেই ফেলেছেন ‘এতো তেল দিয়েন না’।
কাউন্সিল উপলক্ষে টিভির টকশো ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রবন্ধ-নিবন্ধে আওয়ামী লীগের জন্মকথা, ইতিহাস, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ, সফলতা-ব্যর্থতা আলোকপাত হওয়ার কথা। কিন্তু টিভির টকশোগুলোতে প্রায় সব আলোচক এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধকারেরা কারণে-অকারণে বিএনপিকে টেনে আনছেন। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের খুশি করতে বিএনপিকে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন দলটি বঙ্গোপসাগর থেকে হঠাৎ ভেসে ওঠা কোনো রাজনৈতিক দল। দলটির সম্পর্কে জনগণ কিছু জানেন না বোঝেন না। দলটির নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তারা যেন এখনো ফিডারে দুধ খাওয়া শিশু। বিবেক-বুদ্ধি বলে তাদের এখনো হয়নি। প্রবাদে আছে ‘নিজের ভাল পাগলও বোঝে’। টিভির কিছু সুবিধাবাদী তাঁবেদার টকারু এবং বিএনপিপন্থী কিছু সুশীল-বুদ্ধিজীবীর কথা শুনে মনে হয় বিএনপির নেতারা পাবনার ‘হেমায়েতপুরে’ বসে রাজনীতি করছেন। হেমায়েতপুরের পাগলা গারদে থাকা পাগলরা নিজের ভাল-মন্দ বোঝেন না; বিএনপির নেতাদের অবস্থা তদ্রƒপ। যার কারণে দলটি নির্বাচন করার সাংগঠনিক ক্ষমতা দূরের কথা অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বিএনপির এক সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের লেখা গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়েছে। প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ওই লেখার শিরোনাম ছিল ‘বিএনপির কাঁধে এখন শয়তান’। শিরোনাম পড়েই বোঝা যায় ভিতরে কি লিখেছেন বিএনপির সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। বহিষ্কারের পর বিএনপিতে ফিরে আসার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়া মেজর (অব.) আখতারের বক্তব্য বিএনপির লোকজন গুরুত্ব দেয় না। তারপরও মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়া শব্দের শালীনতা-সভ্যতা-ভব্যতা বলে কথা। সত্যিই কি বিএনপির কাঁধে এখন শয়তান ভর করেছে? শয়তান ভর করতে পারে ব্যক্তির ওপর; বিএনপি রাজনৈতিক দল। দলের ওপর শয়তান ভর করে কেমন করে?
দেশের বর্তমানের আত্মকেন্দ্রিক সুবিধাবাদী রাজনীতি চর্চায় নেতাদের প্রতি মানুষ ক্ষুব্ধ। তারচেয়েও বেশি ক্ষুব্ধ টিভির টকশোয় অংশ নেয়া টকারুদের ওপর। টকশোয় আলোচকদের অধিকাংশই যখন ভুল তথ্য তুলে ধরেন, নিজেদের মতামত জনগণের মতামত হিসেবে চালিয়ে দেন তখন মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে। রাজনৈতিক কারণে অনেকেই টকশোতে যান না। যারা যান তাদের মধ্যে যে ক’জন সুপরিচিত বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক আফসান চৌধুরী তাদের একজন। বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আফসান চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষক হিসেবে তিনি সুনামও কুড়িয়েছেন। নীতিবান, পরিচ্ছন্ন এবং কোদালকে কোদাল বলতে অভ্যস্ত আফসান চৌধুরী টিভির এক টকশোতে রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বললেন, বিএনপি চালাবে কে? আওয়ামী লীগ চালানোর লোক আছে; কিন্তু বিএনপির নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন তারা আগামীতে নেতৃত্ব দেবেন; বিএনপির কেউ নেই নেতৃত্ব দেয়ার। শুধু তাই নয়, তিনি ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারীতে নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিএনপির রাজনৈতিক ভুলসহ বিএনপি সবকিছুতেই ভুল করছে বলে মন্তব্য করেন। তার বক্তব্য এমন যে বিএনপি এখন রাজনৈতিক দলের পর্যায়ে নেই। জ্বালাও পোড়াও অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপি কোমর সোজা করা দূরের কথা, জনগণের কাছে যেতেই পারছে না। বিভিন্ন গণআন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ‘একটি দল যদি নির্বাচনে না যায় তাহলে দোষ কার’ মন্তব্য করে বিএনপি শক্তি-সমর্থহীন বলে মত দেন। প্রশ্ন হলো সত্যিই কি তাই? বিএনপির নেতৃত্ব দেয়ার কেউ নেই? দলটি জনগণের কাছে যেতে পারছে না? নাকি গত ৪ বছরে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ঠেকানোয় উন্নয়নের নামে যা হচ্ছে সেগুলো গবেষক আফসান চৌধুরীর চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে? বিএনপির নেতাকর্মীদের এই পরিণতির যে বাস্তবতায় হয়েছে তা তিনি অনুধাবন করতে পারছেন না? নাকি তিনি কাউকে খুশি করতে এ সব কথা বলছেন? এমন কথা তার নামের সঙ্গে যায়কি? অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক আরেকটি টকশোতে বিএনপির পরিণতির কাহিনী তুলে ধরেছেন। প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ বাংলাদেশ ও বিশ্ব রাজনীতির শত বছরের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, ’৪৭ সালের দেশ ভাগের পর পাকিস্তানীরা আমাদের ওপর জুলুম নির্যাতন করেছে। ৬ দফা দাবি ঘোষণার পর আমেনা বেগম ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকে কারাগারে নেয়া হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর যে ভাবে বিএনপির ওপর জুলুম-নির্যাতন, হামলা-মামলা হয়েছে তা নজীরবিহীন। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ডজন ডজন মামলা, ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৮৮ মামলা ভাবা যায়! কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে ১০ থেকে একশ’ সোয়াশ’ পর্যন্ত মামলা করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে এমন মামলার নজীর পৃথিবীর কোনো দেশে ঘটেনি। কাজেই বিএনপি কোমড় তুলতে পারছে না। জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বিএনপির দুর্বলতা নিয়ে আরো কিছু কথাবার্তা বলেছেন।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে না যাওয়া বিএনপির ‘বড় ভুল’ সিদ্ধান্ত এমন মন্তব্য অধিকাংশ টকারুরা করেছেন। বিএনপির বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘আ.লীগের সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের যাওয়া উচিত ছিল। গেলে বিএনপি রাজনীতির খেলায় জিতে যেত। না যাওয়ায় বুদ্ধির খেলায় বিএনপি আবারও হেরে গেল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় ছলচাতুরীতে বিএনপি হেরেছে। এবার হারল বুদ্ধির খেলায়’। বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘আ.লীগের সম্মেলনে বিএনপি গেলে ভালো হতো। হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিত্যাগ করতে হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশবাসী কখনও চায় না’। সদ্যকারামুক্ত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বিএনপির না যাওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘সঠিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তার মতে, পরিবেশ নেই। এখন প্রশ্ন হলো বিএনপির মাঠের কর্মী সমর্থকরা কার কথা সঠিক মনে করবে? এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বিএনপির এই সুশীল বুদ্ধিজীবীরা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে প্ররোচিত করেছিল। সে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির জন্য সঠিক না বেঠিক ছিল তা এখন গবেষণার বিষয়।
বাংলাদেশ শুধু শিল্প সাহিত্যে সমৃদ্ধ নয়; নানা প্রবাদবাক্যের সমৃদ্ধ। আমাদের সমাজে ‘যার কাজ তারে সাজে; অন্য লোকে লাঠি বাজে’ ‘বনেরা বনেই সুন্দর, শিশুরা মাতৃ ক্রোড়ে’ ‘ছাগলে কি হয় হাল চাষ!’ ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়ল’ ‘যার বিয়ে তার খবর নাই; পাড়াপড়শির ঘুম নাই’ প্রবাদবাক্যগুলো বহুল ব্যবহৃত। শত শত বছর ধরে গ্রামের মুরুব্বীদের মুখে মুখে ব্যবহৃত এই অর্থবোধক বাক্যগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ‘গরীবের বউ সবার ভাবী’ প্রবাদটিও ব্যাপক ব্যবহৃত। মামলার ভারে ন্যূব্জ বিএনপি কি সত্যিই গরীবের বউ হয়ে গেল? রাজনৈতিকভাবে ভুল করলে সে খেসারত বিএনপির নেতাদের দিতে হবে। কিন্তু দলটিকে নিয়ে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা কি সংগত? যে দলের সম্মেলন সে দলের ভাল দিকগুলো তুলে ধরুন; দলটির সাফল্যের ফিরিস্তি উপস্থাপন করে নীতি নির্ধারকদের খুশি করে উচ্ছিষ্টের ভাগ খান। মিডিয়ায় বাজুক না সাফল্যের তালিয়া। অকারণে বিএনপিকে টেনে আনা কেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।