Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়ন অপরিহার্য

বিদায় সম্ভাষণে প্রধান বিচারপতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:১১ এএম

বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়ন অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। গতকাল বুধবার আপিল বিভাগে এজলাসে বিদায় সম্ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন। আগামি ৩১ ডিসেম্বর তিনি অবসরে যাচ্ছেন। আজ (বুধবার) থেকে উচ্চ আদালত দুই সপ্তাহের ছুটিতে যাচ্ছে। এ হিসেবে গতকাল সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শেষ দিনের মতো আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বিচার কার্য পরিচালনা করেন। এ উপলক্ষে বিচারপতি সহকর্মী এবং আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বিদায়ী বক্তব্য দেন। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের জন্য সংবিধানের আলোকে নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা বাস্তবতার নিরিখে অপরিহার্য।

প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় বক্তব্যের প্রথমেই তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, যিনি (মহান আল্লাহ) আমার মতো একজন সাধারণ মানুষকে বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছেন। আজকের এ দিনটিও আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মুজিববর্ষ এবং মহান স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। গভীরভাবে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। আরও স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ২ লক্ষ মা-বোনকে, যাদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। স্মরণ করছি কারা অন্তরালে নিহত চার নেতাকে। স্মরণ করছি ১৫ আগস্টে ঘাতকদের গুলিতে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের।

বিচারক ও আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে বিধৃত রয়েছে। তিনটি অঙ্গের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই গণতন্ত্রকে বিকশিত করে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এটা আমাদের সংবিধানের সৌন্দর্য। একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হলো জনগণের আস্থা। এটা হলো বিচারকদের সততা, সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি গণমানুষের অবিচল বিশ্বাস। ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি আর এম (রাজেন্দ্র মাল) লোধার কথার প্রতিধ্বনি করে বলছি, একজন আইনজীবীর জীবন কখনই মসৃণ নয়। বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে প্রয়োজন একাগ্র নিষ্ঠা, সময়ানুবর্তিতা, ধৈর্য, সততা, পরিশ্রম এবং নিরন্তর অধ্যয়ন।

মামলাজট কমাতে দ্বিগুণ বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশে বিদ্যমান মামলার পরিসংখ্যান থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, বিচারের অভিগম্যতা অনেক বেড়েছে। মামলা জট নিরসনে দেশের অধস্তন আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচারকের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। জেনে খুশি হয়েছি যে, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ শুরু করেছে। সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়স করা বাস্তবতার নিরিখে অপরিহার্য। এতে বিচারপতি নিয়োগের কাজটি আরও স্বচ্ছ ও দ্রুত হবে এবং জনগণের মধ্যে বিচারপতি নিয়োগের স্বচ্ছতা সম্পর্কে ভিত্তিহীন ধারণা দূরীভূত হবে।

স্বীয় অবসর জীবনের জন্য দোয়া কামনা করে আবেগমথিত কণ্ঠে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমি আপনাদের ভালোবাসায সিক্ত হয়েছি। আপনাদের এই হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার জন্য আমি সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। আইনজীবী এবং বিচারক হিসেবে আমি যদি কোনো কারণে আপনাদের মনে কষ্ট দিযে থাকি, তাহলে আমাকে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন। কিছুক্ষণের মধ্যে দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপনাদের সম্মুখে এ আসন থেকে আমার প্রস্থান হবে। আগামী দুই সপ্তাহ অন্তে আমার বিচারক জীবনের ইতি ঘটবে। জীবনের শেষ অধ্যায় শুরু হবে। আমার অবসর জীবন যেন শান্তিময় হয়- এ জন্য আপনাদের দোয়া কামনা করছি। প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের সহকর্মী বিচারপতিগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছি। তাই এই বিদায় বেলায় তাদের প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে আইনজীবীদের ভূমিকা অগ্রগন্য।

বিচারকদের কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে, বিপুল সংখ্যক মামলার জট আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। মামলা জট হ্রাস ও মানুষের আস্থা ধরে রাখতে হলে বিচারকদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বিচার প্রার্থীদের প্রতি গভীর মমত্ববোধসহ বিচারকার্য পরিচালনার নিমিত্ত সকল স্তরের বিচারকদের অনুরোধ জানাচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদায় সম্ভাষণে প্রধান বিচারপতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ