পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। গুনগত মান ভাল হওয়ায় ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের ১৪৪টি দেশে বাংলাদেশি কৃষিজাত পণ্য রফতানি হচ্ছে। নতুন নতুন দেশে প্রতিদিনই কৃষিজাত পণ্য রফতানির চাহিদা বাড়ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রফতানি হতো মাত্র ৫৫ কোটি ডলারের। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রফতানি থেকে ১০৩ কোটি ডলার আয় এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরে গত অর্থবছরের আয়কে ছাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি নতুন উচ্চতায় যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন থেকে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে দেশে আন্তর্জাতিক মানের হিমাগারের অভাব। কারণ কৃষিজাত পণ্য দ্রæত পচনশীল। পণ্যের গুনগত মান ধরে রাখতে না পারায় প্রতিবছর বড় অঙ্কের রফতানি আয় থেকেও বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বর্হিবিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই দীর্ঘদিন পরে হলেও কৃষিজাত পণ্য রফতানি আয়ের সুযোগকে কাজে লাগাতে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক হযরত শাহজালাল (রাহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করর্পোরেশনের (বিএডিসি) হিমাগারটিকে একটি আন্তর্জাতিকমানের হিমাগার নির্মাণের পদক্ষেপ নেন। ‘বিএডিসি’র উদ্যান উন্নয়ন বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্যান জাতীয় ফষল সরবরাহ ও পুষ্টি নিরাপত্তা’ শীর্ষক এই প্রকল্পের ব্যয় আড়াই কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এটিই কৃষিজাত পণ্য রফতানিতে সরকারিভাবে দেশের একমাত্র হিমাগার। একাধিকবার হিমাগার নির্মাণকাজ পরিদর্শণও করেন কৃষিমন্ত্রী। এ সময় কোনভাবেই যাতে হিমাগার নির্মাণে শৈথল্য বা আন্তর্জাতিকমান থেকে বিচ্যুত না হয় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। কিন্তু বিএডিসি’র একটি অসাধু চক্র কৃষিমন্ত্রীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে হিমাগারে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। নাম প্রকাশে হিমাগার সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, আড়াই কোটি টাকার হিমাগার নির্মাণ কাজে নিম্নমানের যে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে তার মূল্য ১ কোটি টাকাও হবে না।
বাংলাদেশ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী সংগঠনের (বাপা) সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. শোয়েব হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার আরও বাড়াতে ব্যান্ড এবং গুণগত মান উন্নয়নে হিমাগারটি অবশ্য আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির মহাসচিব ড. মিজানুল হক কাজল বলেন, কৃষিজাত পচনশীল পণ্য হিসেবে এ খাতে বিশেষায়িত পরিবহন ব্যবস্থা, বিশ্বমানের কৃষিপণ্য উৎপাদনে ফাইটোস্যানিটারি (উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত) সনদ, গুড অ্যাগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (গ্যাপ) নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে আন্তর্জাতিকমানের হিমাগার নির্মান আমাদের জন্য জরুরি।
সূত্র মতে, বিএডিসি’র কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য আমদানি-রফতানি সহায়ক হিমাগারটি আধুনিকায়নের জন্য উদ্যান উন্নয়ন বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্যান জাতীয় ফসল সরবরাহ ও পুষ্টি নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে কম্প্রেসার, কনভেনসার, এভাপোরেটর, অ্যামোনিয়া গ্যাস রিসিভার, গেট বাল্ব ও ইলেকট্রিক কন্ট্রোল প্যানেল ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এসব মেশিনারিজ ক্রয়ের জন্য একটি টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন কমিটিও করা হয়। কমিটি থেকে সুপারিশকৃত এবং দরপত্রে উল্লেখিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মেশিনারিজ সরবরাহের জন্য বলা হয়। কিন্তু প্রকল্পের প্রকৌশলী আব্দুল হাই ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যার সঙ্গে স্পেসিফিকেশন কমিটির সুপারিশ করা যন্ত্রপাতির কোনো মিল নেই। এ সম্পর্কিত সকল কাগজপত্র দৈনিক ইনকিলাবের হাতে রয়েছে। এমনকি গত জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো আন্তর্জাতিক মানের হিমাগারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। এমনকি প্রকৌশলী আব্দুল হাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে যে ওয়ার্ক অর্ডারে কাজ দিয়েছেন তাও ত্রুটিপূর্ণ। কারণ ওয়ার্ক অর্ডারে ২৮ দিনের মধ্যে যন্ত্রপাতি সরবরাহের কথা বলা হয়েছে। অথচ স্বাভাবিক নিয়মে এলসি, শিপমেন্টসহ অন্যান্য কাজে ৯০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। অসাধু গোষ্ঠীটি যোগসাজশের মাধ্যমে প্রকল্পের আড়াই কোটি টাকার কাজের দেড় কোটিরও বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছে। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি দিয়ে হিমাগার তৈরি করা হলে কোনোভাবেই পণ্যের মান ঠিক রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি পণ্যের গুণগতমান ঠিক না থাকলে বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হিমাগারে সঠিক কম্প্রেসার না বসানো হলে হিমাগারের তাপমাত্রা (-) ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে (-) ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আনা সম্ভব হবে না। ফলে আমদনি ও রফতানিযোগ্য পণ্যের মান সঠিক থাকবে না। এতে কৃষিজাত পণ্য আমদানি-রফতানিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করা যায় এবং বিদেশে পাঠানো যায় তবে দেশে কর্মসংস্থান হবে, বৈদেশিক মুদ্রা আসবে। এগিয়ে যাবে দেশের অর্থনীতি। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করলে হিমাগারটি আন্তর্জাতিক মানের সক্ষমতা হারাবে। বিশ্ববাজারে পণ্য রফতানিতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। তাই দ্রুত এ বিসয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। একই সঙ্গে কৃষি ও কৃষিজাত পন্য আমদানি ও রফতানির জন্য সরকারিভাবে বিএডিসির হিমাগারটি একমাত্র হিমাগার। তাই সঠিকভাবে কাজ না হলে দেশের আমদানি ও রফতানিতে প্রভাব ফেলবে। বিষয়টি সংবেদনশীল বিধায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আমলে নেয়া উচিত।
সূত্র জানায়, বিএডিসি’র ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরস্থ হিমাগার প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হাই এর আগেও একাধিকবার অনিয়মের কারণে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তি ভোগ করেছেন। তিনি বিএডিসিতে একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। এরই অংশ হিসেবে কোন নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই সবকিছু বীরদর্পে করে যাচ্ছেন। এক বছর আগে অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) এ থাকলেও প্রকল্পে আবদুল হাই একাই দুই কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবার মেশিনারিজ স্পেসিপিকেশন কমিটিরও সদস্য। অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে থাকার পরও একই ব্যাক্তি দুটি কমিটিতে কিভাবে থাকেন এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তিনি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন অবসরে গেছেন তাই অনিয়ম করলেও কোনো সমস্যা নেই। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হাই ইনকিলাবকে বলেছেন, আমি এ দায়িত্বে নেই। অথচ প্রকল্প সংশ্লিস্টরা বলছেন, সবকিছু তিনিই করছেন।
হযরত শাহজালাল (রাহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএডিসি’র ডেপুটি ডিরেক্টর (রফতানি) মীর ফয়সাল হোসেন বলেন, এখনো স্থাপন করা হয়নি। তবে নিম্নমানের কম্প্রেসার বসানো হচ্ছে কিনা বিষয়টি অবশ্যই দেখা হবে।
বিএডিসি’র হিমাগার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মাসুদ আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, কম্প্রেসারের যন্ত্রপাতি প্রদান করা হয়েছে জার্মানির। তবে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।