পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন কাস্টমস থেকে আসা মামলাগুলো তদন্ত করছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অপরাধগুলো দুদকের তফসিলভুক্ত। আবার উচ্চ আদালতের কোনো স্থগিতাদেশও নেই। তা সত্তে¡ও রহস্যজনক কারণে থেমে আছে কাস্টমস থেকে আদালতের মাধ্যমে আসা মামলাগুলোর তদন্ত। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
সূত্রটি জানায়, দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রথম ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে মামলাগুলো হাতে নেন। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নাম ‘এনডোর্স’ হওয়ার পর তারা রেকর্ডপত্র চেয়ে বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠান। কিন্ত পরক্ষণেই তাদের কার্যক্রমে লক্ষ্য করা যায় ভাঁটা। অদ্ভুত রকম অনিহা লক্ষ্য করা যায় তদন্ত কার্যক্রমে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলার প্রতিবেদন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা সত্তে¡ও খোঁড়া অজুহাতে তদন্ত কর্মকর্তারা সময় নেন বার বার। একপর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। অন্যদিকে আসামিরা জামিন নিয়ে এসে ভোগ করেন এক ধরনের দায়মুক্তি।
সূত্রমতে, এমন অভিযোগও রয়েছে, মামলার আসামিদের সঙ্গে ‘বিশেষ বোঝা-পড়া’র ভিত্তিতে দুদকের এক শ্রেণির কর্মকর্তা নানা অজুহাতে তদন্তে কালক্ষেপণ করেন। অথচ মামলাগুলোর সঙ্গে রয়েছে সরকারের বিশাল স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক সংশ্লেষ। রয়েছে কাস্টমসের গুরুত্বপূর্ণ সার্ভার হ্যাক হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও। তা সত্তে¡ও দুদকের কোনো কোনো কর্মকর্তা অবজ্ঞা ভরে, কখনো বা পরিকল্পিতভাবে মামলাগুলো ফেলে রাখছেন বছরের পর বছর।
দৃষ্টান্তসহকারে সূত্রটি জানায়, চলতিবছর নভেম্বরে বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আকবর আলী একটি মামলা করেন। এ মামলায় আসামি করা হয় বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অন্তত: ৩২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। মামলাটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় যশোর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক মামলাটি তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেন দুদকে। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান, সাবেক কমিশনার বেলাল হুসাইন চৌধুরী, অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম, উপ-কমিশনার এসএম শামীমুর রহমান, বিল্লাল হোসেন, পারভেজ রেজা চৌধুরী, অনুপম চাকমা, সহকারী উত্তম চাকমা, দিপারাণী হালদার, মুর্শিদা খাতুন, এইচএম আহসানুল কবীর, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (কার্গো শাখা) শামিম হুসাইন, কামাল হোসেন, নূরে আলম, জিএম আশরাফুল আলম, বিকাশ চন্দ্র মন্ডল, সাজেদুর রহমান, সাখাওয়াত হোসাইন, এসএম মেজবাহ উদ্দিন, রাজস্ব কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ, মৃণাল কান্তি সরকার, স্বপন কুমার দাস, এসএম আজিজুর রহমান, এসএম বদিউজ্জামান, বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আবদুল জলিল, মামুন তরফদার, সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান, লাকি বেগম, উপ-সহকারী পরিচালক (যান্ত্রিক) শিমরান হোসেন, ওয়্যার হাউজের সুপারিনটেনডেন্ট আবু রাসেল ও কম্পিউটার অপারেটর রনি কুমার বসাক।
নতুন এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা এখন মামলাটি ডিপ ফ্রিজে পাঠিয়ে দিতে তৎপর। এ লক্ষ্যে দুদকের দু’জন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন সমঝোতাও হয়েছে বলে দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। ফলে আলোচিত মামলার বিষয়ে ‘ধীরে চলো নীতি’ অবলম্বন করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দুদকের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, মামলাটির বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর না নিয়ে এ মুহূর্তে ‘আপডেট’ দিতে পারব না।
এর আগে মেমার্স লাবনী এন্টারপ্রাইজের মালিক লক্ষীপুর রামগঞ্জের মোহাম্মদ সেলিম, বাউফল উপজেলার কালাইয়া গ্রামের রাশেদ খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা (বিশেষ মামলা নং-১১১/২০২০) করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এজাহারে ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ১৭০/৪০৬/৪২০/৪৬৮ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৩/২৪/২৬/৩৪/৩৫ ধারা প্রয়োগ করা হয়। তহসিলভুক্ত হওয়ায় মামলাটি তদন্তের জন্য আসে দুর্নীতি দমন কমিশনে। তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও মামলাগুলোর প্রতিবেদন দাখিল হয়নি।
সূত্রমতে, ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ইউজার আইডি হ্যাক করে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে ৬৬ লাখ বেনসন অ্যান্ড হেজেস সিগারেট আমদানি করা হয়। এতে সরকার ৮ কোটি ১৮ লাখ ৭০৭ টাকার রাজস্ব হারায়। এ ঘটনায় সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট মো. আবুল কামাল, মো. জহুরুল ইসলাম এবং মো. আব্দুল গোফরানের বিরুদ্ধে মামলা করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা থানায় দায়ের হওয়া এ মামলাটিও তিন বছর ফেলে রাখা হয়েছে।
কাস্টমস থেকে আসা এরকম অন্তত: ২৪টি মামলার তদন্ত তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। দুদকের ভেতর-বাইরের প্রভাবশালী কর্মকর্তার ইঙ্গিতে মামলাগুলোর তদন্ত হচ্ছে না বলে জানায় সূত্র। এর মধ্যে মেট্টো বিশেষ মামলা নং-২১৮/২০২০, ১৮৫/২০২০, ১৮৬/২০২০, ১৮৭/২০২০, ২১৯/২০২০, ১৮৮/২০২০, ১৮৮/২০২০, ২২০/২০২০ এবং ২২১/২০২০ এর পেছনে দুদকের দু’জন পরিচালক একজন মহা-পরিচালকের তদবির রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া মেট্টো: বিশেষ মামলা নং-২২২/২০২০, ২২৩/২০২০, ১৮৯/২০২০, ২২৪/২০২০, ২০৪/২০২০, ২০৫/২০২০, ২১৪/২০২০, ২১৫/২০২০, ২০৩/২০২০, ২০২/২০২০, ২১৬/২০২০, ২১৭/২০২০, ১৮৪/২০২০) ‘বিশেষ সমঝোতা’র আওতায় তদন্তের নামে কালপেক্ষণে দুদকের একজন মহা-পরিচালক, প্রেষণে আসা একজন পরিচালক এবং দুদকের ২ জন সহকারী পরিচালকের পৃথক তদ্বির রয়েছে বলে জানা যায়।
তাদের ইঙ্গিতেই তিন বছর ধরে এসব মামলা ‘তদন্তাধীন’। দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে কাস্টমস জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে। এ কারণে এসব আসামিরা দুদকের অভ্যন্তরে অনেক ‘শুভাকাক্সিক্ষ’ এবং ‘আত্মীয়-স্বজন’ পোষেন। তাদের কল্যাণেই এখন পর্যন্ত আদালতে মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার হয়ে বেশি দিন কারাগারে থাকতে হয়নি। বরং জামিন নিয়ে তারা যাপন করছেন নির্বিঘ্ন জীবন।
সূত্রমতে, করোনার অজুহাতে মাঝে দেড় বছর সময়ক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু করোনার প্রভাব কেটে যাওয়ার পর এসব মামলার তদন্তের ফাইল নড়েনি এক চুলও। কর্মকর্তার বদলি হয়ে যাওয়া, নতুন কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ, রেকর্ডপত্র হাতে না পাওয়াসহ নানা অজুহাতে থামিয়ে রাখা হয়েছে তদন্ত। তবে যে অজুহাতই দাঁড় করানো হোক না কেন-এর নেপথ্যে রয়েছে বিপুল অঙ্কের আর্থিক লেনদেন।
দুদকের একজন পরিচাক নাম প্রকাশ না করে জানান, ২০১৯ সালে রাজধানীর রমনা থানায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মামলাগুলো দায়ের করে। এজাহারে উল্লেখিত আসামিদের পরিচয় এবং অপরাধের ধরণ বিবেচনায় তদন্তের এখতিয়ার দুদকের। এ কারণে আদালত মামলাগুলো পাঠিয়ে দেন দুদকে। কিছু মামলার তদন্ত চালাচ্ছিল পুলিশের সিআইডি। আদালতের নির্দেশে সিআইডির মামলাগুলোও দুদকে চলে আসে। তবে সিডি (কেস ডকেট) হস্তগত হলেও রহস্যজনক কারণে মামলার তদন্ত স্থগিত রয়েছে। কবে তদন্ত শেষ হবে এবং কবে নাগাদ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব- বলতে পারছেন না কেউ।
দুদকে তদন্তাধীন অন্তত চারটি মামলার বাদী এনবিআর’র সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নিতাই চন্দ্র মন্ডল। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ওই সময় আমরা অন্তত: ২১টির মতো মামলা করেছি। যতদূর মনে পড়ে, মামলাগুলোতে বেশ কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তাও আসামি হিসেবে রয়েছেন। এ কারণে দুদক এবং সিআইডি যৌথ তদন্ত করছে। এর বেশি আমার জানা নেই।
এদিকে কাস্টমসের মামলার স্থবিরতার কারণ জানতে গতকাল মঙ্গলবার একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় দুদক সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সঙ্গে। দুদক কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানানো হয়, দুদক সচিব এখনও মিশর থেকে ফেরেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।