পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্তের বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। সবুজ রঙ বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রঙ উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বীর বাঙালির রক্তে দিয়ে অর্জিত এই লাল সবুজের পতাকা। আমাদের গৌরবের প্রতীকও এটি। বাঙালির গৌরবময় এই মাসে স্বাধীন দেশের বিজয় নিশান লাল-সবুজের পাতাকা উড়ে সর্বত্রই। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির অবিস্মরণীয় দিন। মহান বিজয় দিবস।
এই দিনটিকে উপলক্ষ করে এবং বিজয়ের মাসে রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে পতাকা বিক্রির ধুম। ডিসেম্বরের প্রতিদিনই পতাকা বিক্রি চলবে। তবে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পতাকা বিক্রি হয় বেশি। এই মাসে বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, গাড়িতে, রিকশায়, সাইকেলের সামনে দোলে লাল-সবুজের পতাকা। এ মাসে পতাকা বিক্রেতারা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় পাড় করেন। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোসহ ছোট সড়ক এমনকি পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে পতাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। কারিগররাও ডিসেম্বর এলে পতাকা বানানোর উৎসবে মেতে ওঠেন। নির্ধারিত মাপে কাপড়ের পতাকার পাশাপাশি কাগজ দিয়ে তৈরি পতাকাও বিক্রি হয়। কাগজের পতাকা দিয়ে ফুটপাথ, দোকানপাটসহ বাসার বারান্দাও সাজানো হয় এ সময়।
ডিসেম্বর মানেই মহান বিজয়ের মাস। মাসটি প্রত্যেক বাঙালির জীবনে নানা কারণে স্মৃতিগাঁথা। মহান বিজয় দিবস পালনে সরকারি-আধাসরকারি, রাজনৈতিক, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এই সময়ের জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় থাকেন বিক্রেতারা। গ্রামাঞ্চলের মানুষও থেমে নেই। শহুরে মানুষের পাশাপাশি যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয়ের মাস উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন নানা শ্রেণি- পেশার মানুষ।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকায় একটি বাঁশে বড় থেকে ছোট এভাবে সাজিয়ে পতাকা বিক্রি করছেন মো. শামীম। কথা বলে জানা গেলো তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। তার কাঁধের ব্যাগে আছে আরো অনেকগুলো কাপড় এবং কাগজের পতাকা। অপর হাতে ছোট ছোট কিছু পতাকা কাঠিতে ঝুলছে। বিজয় দিবস লিখা ফিতা লাগানো মাথায়। শুধুমাত্র দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধা থেকেই এই ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি। সারা বছরই তিনি পতাকা বিক্রি করেন। পতাকা ও বিজয় দিবসের এসব সামগ্রী বিক্রি করে রোজগারের টাকায় চলে তার সংসার। চার সদস্যের পরিবারে শামীম একমাত্র উপার্জনক্ষম। দৈনিক ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা উপার্জন তার। তা দিয়েই কেটে যায় তার সংসার। মা, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখেই আছেন তিন। জানালেন মো. শামীম।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় পতাকা ফেরি করেন মাঝ বয়সী কবির হোসেন। সকাল বেলা পতাকা হাতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। বছরের সব সময়ই পতাকা বিক্রি করেন। ডিসেম্বর মাস এলেই বেড়ে যায় তার বিক্রি। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। পরিবারের অন্যরা থাকেন গ্রামের বাড়িতে। তিনি পতাকা বিক্রি করে প্রতি সপ্তাহেই বাড়ি যান। দৈনিক তার উপার্জন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
গুলিস্তানে ভ্যানগাড়িতে করে পতাকা ও অন্যান্য সামগ্রীর পসরা সাজিয়েছেন বৃদ্ধ তারা মিয়া। তার বাড়ি জামালপুরে। ভ্যানগাড়ির পাশেই লম্বা বাঁশে ধাপে ধাপে সাজানো লাল সবুজের পতাকা। উপরে বড় থেকে নিচের দিকে ছোট করে বাঁশের পুরোটাতেই বাঁধা আছে পতাকা। বাতাসে দোলছে এসব পতাকা। ক্রেতারা এসে বিভিন্ন সাইজের পতাকা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে ছোট পতাকা নিচ্ছেন বাসার শিশুদের জন্য। তার ভ্যানগাড়িটা পুরোটাই ভরা লাল-সবুজের সামগ্রীতে। ডিসেম্বর আসলেই তার দোকানে পতাকা বিক্রি বেড়ে যায়। তার কাছে ছোট-বড় পতাকা থেকে শুরু করে মাথার ব্যান্ডেনা ও হাতের লাল-সবুজের ব্রেসলেটও আছে। আছে ছোট পতাকাও। তিন জানালেন, বড় পতাকা তিনি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেন। এছাড়াও ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা দামেরও বড় পতাকা পাওয়া যায়। আবার ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা দামের পতাকাও আছে তার কাছে। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের প্রতি সম্মানের কথা বিবেচনা করে তার এই ব্যবসায় আসা।
বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল আমিন জানান, সকাল থেকেই দেখছি পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে মৌসুমি পতাকা বিক্রেতাদের। ৬ ফুট থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাপের কাপড়ের পতাকার পাশাপাশি কাগজ দিয়ে তৈরি পতাকারও বেচাকেনা করছে। পতাকার পাশাপাশি লাল-সবুজ রঙের কাগজের ক্যাপ, রাবারের ব্যান্ড, ব্রেসলেট ও বুকে লাগানো ব্যাজ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। শিশু সন্তানের জন্য দুইটি কাপড়ের পতাকাও কয়েকটি রাবারের ব্যান্ড কিনেছেন। সন্তানের খুশির কথা ভেবেই তিনি এগুলো কিনলেন বলে জানান।
মতিঝিল কলোনী এলাকায় পতাকার ফেরিওয়ালা তারেককে ঘিরে রেখেছে ছোট ছোট শিশুরা। কেউ কেউ ১০ টাকা দিয়ে পতাকা কিনছে। তবে তারেক জানালেন পতাকা বিক্রি তার পেশা নয়। মূলত তিনি একজন শিক্ষার্থী। বিজয়ের মাসে কলোনী এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ে তিনি পতাকা বিক্রি করেন। তবে তার ছোট ছোট শিশুদের কাছে পতাকা বিক্রি করতে ভালো লাগে। এই ভালো লাগাতেই এখন তিনি মৌসুমী পতাকা বিক্রেতা। প্রত্যেক বছর বিজয়ের মাসে এই ব্যবসা করেন তিনি। সব ধরনের জাতীয় পতাকা পাওয়া যায় তার কাছে। ছোট আকারের পতাকাগুলো ১০ থেকে ২০ টাকা বিক্রি করেন। বিজয় দিবসের আগে ও বিজয় দিবসের দিন মূল বেচা-বিক্রিটা হয় বলেও যোগ করেন এই পতাকা বিক্রেতা।
এখানে পতাকা কিনতে আসা নাঈম নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, প্রত্যেক বছরই পতাকা কিনি। এবছরও কাপড়ের একটি বড় পতাকা এবং কাগজের ৫ বান্ডিল পতাকা কিনলাম। এগুলো দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।