Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেরুদন্ডওয়ালা কেউ কী করে আ’লীগের সম্মেলনে যায়?

প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রুহুল কবীর রিজভীর প্রশ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে যোগ না দেয়াটাকে সঠিক বলে দাবি করেছেন রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রোববার সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, তাদের কাউন্সিলে আমাদের যে প্রতিনিধি যায়নি, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছেই বলে আমি মনে করি। গণতন্ত্রে সঠিকভাবে যদি একটা সরকার থাকতো, এখানে গণতান্ত্রিক সমাজ বিকাশের জন্য যে উপাদানগুলো সক্রিয় থাকা দরকার সেটা যদি থাকতো- তাহলে কথা ছিলো যে, না যাওয়াটা ঠিক না।
কিন্তু দুইদিন আগে যেভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে অশ্লীলভাবে আক্রমণ করে কথা বলা হয়েছে, আমাদের ১৯ মার্চের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে যে আচরণ করেছে সরকার, প্রতি পদে পদে বাধা দেয়ার যে নিষ্ঠুর নির্যাতনমূলক আচরণ করেছেন তারা, এখনো দেশব্যাপী নেতা-কর্মীদের ওপর উৎপীড়ন-নির্যাতন চলছে, এরপরে একজন ভদ্রলোক কী করে তাদের কাউন্সিলে গিয়ে বক্তব্য রাখবেন, যদি তার ন্যূনতম মেরুদ- থেকে থাকে।
গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস নয়া পল্টনের কার্যালয়ে এসে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে আমন্ত্রণ কার্ড পৌঁছিয়ে দেন। গুঞ্জন ছিলো শনিবার আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল যোগ দেবে।
গত ১৯ অক্টোবর গাজীপুরের কাশিমপুরের কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর সকাল সাড়ে ১০টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন রিজভী। দলের নেতা-কর্মীরা তাকে ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।
গত ২৯ আগস্ট নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১২ অক্টোবর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চ রিজভীকে ৬ মাসের জামিন দেন। নেতা-কর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর রিজভী সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
শনিবার থেকে শুরু হওয়া আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে কেনো বিএনপি যায়নি- এরকম প্রশ্ন করা হলে রিজভী ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কোনো পরিবেশ নেই। তাহলে কী করে তাদের কাউন্সিলে গিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দ শুভেচ্ছা জানাবেন।
এই কাউন্সিলে না গিয়ে কি লাভবান হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে বলতে পারি আমরা লাভবান হয়েছি, একশ’বার বলতে পারি। আমাকে প্রতিনিয়ত অপমান করবেন, প্রতিনিয়ত নির্যাতন করবেন, আমরা কি সেই বৈষ্ণব পদাবলী থেকে বলব- মেরেছো কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেবো না। আমরা একটা আত্মমর্যাদশীল রাজনৈতিক দল। আমরা গণতন্ত্রের প্রতি নিবেদিত। আজকে যদি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকতো, নিশ্চয়ই বিএনপির নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যেতেন।
আওয়ামী লীগের জৌলুস কাউন্সিলের ব্যয়ভার নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনি যেকোনো স্তরের মানুষকে জিজ্ঞাসা করবেন, যারা আজকে জোর করে ক্ষমতা আটকিয়ে রেখেছেন, যারা নিজেদেরকে শাসক বলে দাবি করছেন, সকল ধরনের বৈধ প্রক্রিয়া ছাড়াই অন্যায্যভাবে ক্ষমতা দখল করে আছেন, তারা তো আর জনগণের প্রতিনিধি দল নয়। তারা নিজেদেরকে জমিদার মনে করেন।
তিনি বলেন, এ বাংলাদেশের ঢাকা রাজধানী থেকে শুরু করে সকল সম্পত্তি নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেন বলেই উত্তরা থেকে শুরু করে, যাত্রাবাড়ি থেকে শুরু করে দেশের অন্যান্য জেলা-মহানগর প্রত্যেকটি জায়গায় যেভাবে ঝাড় বাতি, মরিচ বাতি, লাল-নীল রঙের সমাহার করে যে ধরনের তারা কাউন্সিল করছেন তাতে গোটা ঢাকা শহরকে দখলে নিয়ে তারা রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে বলে জনগণ মনে করে। এটা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কাউন্সিলের প্রচার-প্রোপাগান্ডা হতে পারে না। রাজনৈতিক কাউন্সিল বর্ণাঢ্য হয়, সেই বর্ণাঢ্যেরও মাপ থাকে, একটা মাত্রা থাকে, ভাষা-পরিভাষা থাকে, এটা হচ্ছে বেহায়াপনা।
এখানে যেভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে যেকোনো স্তরের মানুষ বলবেন, এখানে কোনো ন্যায্যভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হয়নি। এখানে বিশাল দুর্নীতির মাধ্যমে এই কাউন্সিল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
কারাগারের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, সারাদেশে বন্দিত্বের পরিবেশ বিরাজ করছে। কারাগারের ভেতরেও যেমন অবস্থা তেমনি বাইরেও একই অবস্থা। সবার মধ্যে যেন একটা আতঙ্কের অবস্থা বিরাজ করছে। কোথাও মুক্ত পরিবেশ নেই।
কারাবন্দি দলের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সকল নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিও জানান সদ্য কারামুক্ত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সাইফুল ইসলাম পটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেরুদন্ডওয়ালা কেউ কী করে আ’লীগের সম্মেলনে যায়?
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ